০৪:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিবসা নদী খনন ও উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বাজি নেপালে বিপ্লব: গণআন্দোলনে সরকারের পতন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান: রাশিয়ার তেল কেনায় জড়িত দেশগুলোর ওপর জি৭ ও ইইউ শুল্ক আরোপ করুক টাইলার রবিনসন: চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত ধানসিঁড়ি নদী: এখন কি আর কাঁদে সোনালী ডানার চিল চীনের কূটনীতিক ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত নতুন থাই প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল: নির্বাচনের আগে দ্রুত সাফল্য দেখানোর চাপ ইলেকট্রিক যানবাহন ভলভো নেটওয়ার্কের সহায়তায় ইউরোপে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে এগোচ্ছে গিলির লিঙ্ক অ্যান্ড কো ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপ প্রতিরক্ষা জোরদার: পোল্যান্ডে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর নতুন উদ্যোগ

চীনের কূটনীতিক ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত

সামরিক কুচকাওয়াজে অনুপস্থিত দুই শীর্ষ নেতা

সেপ্টেম্বরের শুরুতে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্ব নেতাদের সামনে কূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পেলেও, এই অনুষ্ঠানে হঠাৎ আলোচনায় উঠে আসে দুই নিখোঁজ সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য—দূতাবাস বিশেষজ্ঞ লিউ জিয়ানচাও এবং আর্থিক খাতের কর্মকর্তা ই হুইমান।

লিউ জিয়ানচাওর রহস্যজনক অন্তর্ধান

লিউ জিয়ানচাও, যিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেন না। ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে তাঁর কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানায়নি তাঁর দপ্তর। ধারণা করা হচ্ছে, বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর তাঁকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। এই বিভাগের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো যেমন উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা ও লাওসের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা।

 

লিউ একসময় সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও আলোচনায় ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মহলে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ কূটনীতিক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যিনি ‘উলফ ওয়ারিয়র’ ধরনের তীব্র কূটনীতির বিপরীতে নরম কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতেন। তবে তিনি ছিলেন শি প্রশাসনের বিতর্কিত ‘অপারেশন ফক্স হান্ট’-এর অন্যতম প্রধান স্থপতি, যেখানে বিদেশে পালানো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক অভিযান চালানো হয়েছিল।

সামরিক কুচকাওয়াজে অনুপস্থিতি

সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন বেইজিংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজে শি জিনপিংয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনও লিউ জিয়ানচাও ছিলেন অনুপস্থিত। উত্তর কোরিয়া চীনের অন্যতম কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হওয়া সত্ত্বেও লিউর অনুপস্থিতি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ই হুইমানের পতন

লিউর অন্তর্ধানের তিন দিন পরই আরেক শীর্ষ নেতা ই হুইমানের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা আসে। তিনি ছিলেন চীনের সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে “গুরুতর শৃঙ্খলা ও আইনি লঙ্ঘনের” বিরুদ্ধে। ই একসময় চীনের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আইসিবিসির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি সিকিউরিটিজ কমিশনের চেয়ারম্যান হন এবং আলোচনায় আসেন আলিবাবার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের বিশাল আইপিও আটকে দেওয়ার ঘটনায়।

আর্থিক খাতের প্রভাব

চীনা শেয়ারবাজারে ই হুইমানের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তিনি ছিলেন পার্টির বর্তমান ২০তম সেন্ট্রাল কমিটির একমাত্র আর্থিক ও সিকিউরিটিজ বিশেষজ্ঞ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আকস্মিকভাবে চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। পরে তাঁকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থার অর্থনৈতিক কমিটির উপ-পরিচালক করা হয়।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিউ জিয়ানচাও ও ই হুইমান দুজনই সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য। অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য ২০তম সেন্ট্রাল কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আগে তাঁদের অনুপস্থিতি ও তদন্ত বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সভায় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সব সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

বৈশ্বিক দৃষ্টি এখন চীনের দিকে

চীনের সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে কূটনৈতিক ও আর্থিক খাত পর্যন্ত একের পর এক শীর্ষ নেতার পতন নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অক্টোবরে অধিবেশনে কারা শাস্তির মুখে পড়বেন, শূন্য পদে কারা আসবেন—এসব সিদ্ধান্ত শুধু চীনা রাজনীতিকেই নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে।

শিবসা নদী খনন ও উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

চীনের কূটনীতিক ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত

০১:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামরিক কুচকাওয়াজে অনুপস্থিত দুই শীর্ষ নেতা

সেপ্টেম্বরের শুরুতে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সামরিক কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্ব নেতাদের সামনে কূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পেলেও, এই অনুষ্ঠানে হঠাৎ আলোচনায় উঠে আসে দুই নিখোঁজ সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য—দূতাবাস বিশেষজ্ঞ লিউ জিয়ানচাও এবং আর্থিক খাতের কর্মকর্তা ই হুইমান।

লিউ জিয়ানচাওর রহস্যজনক অন্তর্ধান

লিউ জিয়ানচাও, যিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেন না। ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে তাঁর কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানায়নি তাঁর দপ্তর। ধারণা করা হচ্ছে, বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর তাঁকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। এই বিভাগের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো যেমন উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা ও লাওসের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা।

 

লিউ একসময় সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও আলোচনায় ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মহলে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ কূটনীতিক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যিনি ‘উলফ ওয়ারিয়র’ ধরনের তীব্র কূটনীতির বিপরীতে নরম কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতেন। তবে তিনি ছিলেন শি প্রশাসনের বিতর্কিত ‘অপারেশন ফক্স হান্ট’-এর অন্যতম প্রধান স্থপতি, যেখানে বিদেশে পালানো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক অভিযান চালানো হয়েছিল।

সামরিক কুচকাওয়াজে অনুপস্থিতি

সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন বেইজিংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজে শি জিনপিংয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনও লিউ জিয়ানচাও ছিলেন অনুপস্থিত। উত্তর কোরিয়া চীনের অন্যতম কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হওয়া সত্ত্বেও লিউর অনুপস্থিতি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ই হুইমানের পতন

লিউর অন্তর্ধানের তিন দিন পরই আরেক শীর্ষ নেতা ই হুইমানের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা আসে। তিনি ছিলেন চীনের সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে “গুরুতর শৃঙ্খলা ও আইনি লঙ্ঘনের” বিরুদ্ধে। ই একসময় চীনের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আইসিবিসির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি সিকিউরিটিজ কমিশনের চেয়ারম্যান হন এবং আলোচনায় আসেন আলিবাবার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের বিশাল আইপিও আটকে দেওয়ার ঘটনায়।

আর্থিক খাতের প্রভাব

চীনা শেয়ারবাজারে ই হুইমানের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তিনি ছিলেন পার্টির বর্তমান ২০তম সেন্ট্রাল কমিটির একমাত্র আর্থিক ও সিকিউরিটিজ বিশেষজ্ঞ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আকস্মিকভাবে চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। পরে তাঁকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থার অর্থনৈতিক কমিটির উপ-পরিচালক করা হয়।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিউ জিয়ানচাও ও ই হুইমান দুজনই সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য। অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য ২০তম সেন্ট্রাল কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আগে তাঁদের অনুপস্থিতি ও তদন্ত বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সভায় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সব সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

বৈশ্বিক দৃষ্টি এখন চীনের দিকে

চীনের সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে কূটনৈতিক ও আর্থিক খাত পর্যন্ত একের পর এক শীর্ষ নেতার পতন নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অক্টোবরে অধিবেশনে কারা শাস্তির মুখে পড়বেন, শূন্য পদে কারা আসবেন—এসব সিদ্ধান্ত শুধু চীনা রাজনীতিকেই নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে।