কখন কখন বা পিতাপুত্রকে একত্র রজ্জুবদ্ধ করিয়া, গাত্রে একসঙ্গে বেত্র ও যষ্টির আঘাত পড়িত; পিতা যাহাতে পুত্রের অঙ্গে আঘাত না লাগে এবং পুত্র যাহাতে পিতার শরীর ক্ষত বিক্ষত না হয়, তজ্জন্য চেষ্টা পাইত; কিন্তু উভয়েই সমানরূপে আহত হইয়া, রুধিরাপ্লুত দেহে রায়ু-বিকম্পিত অশ্বথপত্রের ন্যায় অবিরত কাঁপিতে থাকিত। এর এই ত গেল পুরুষদিগের প্রতি অত্যাচারের কথা। তাহার পর-স্ত্রী-লোকদিগের প্রতি যেরূপ লোমহর্ষণ অত্যাচার হইত, তাহা স্মরণ করিতে গেলেও হৃদয় কাঁপিয়া উঠে।
যে দেশের কুমারীগণকে বিশ্বজননী ভগ-বর্তী বলিয়া পূজা করা হইয়া থাকে, সেই সমস্ত কুমারীদিগকে তাহাদের পবিত্র নিকেতন হইতে বলপূর্ব্বক প্রকাশ্য বিচারালয়ে আনয়ন করিয়া, তাহাদের পবিত্রতা নষ্ট করা হইত। যে ধর্মাধিকরণে বসিয়া বিচারক ধৰ্ম্ম সংস্থাপন করেন, সেই বিচারালয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুলকামিনীর পবিত্রতা অথহৃত হইতে লাগিল। কুমারীগণের আর্তনাদে, তাঁহাদের আত্মীয়গণের হাহাকারে, দিম্মণ্ডল প্রতিধ্বনিত হইল! কিন্তু কে তাহা-দের কথায় কর্ণপাত করে?
যেখানে ন্যায় ও ধর্ম্মের মূর্ত্তিমান্ অবতারগণ উপবেশন করিয়া থাকেন, তাহারা জানিত না যে, সেই পবিত্র স্থানে ওয়ারেন হেষ্টিংসের প্রেরিত কতকগুলি শয়তান বসিয়া আছে। স্বামীর অঙ্ক হইতে পত্নীকে কাড়িয়া আনা হইত। এই সময়ে কতঃস্ত্রীলোকের যে সতীত্ব নষ্ট হইয়াছে, তাহা কে বলিতে পারে? সেই সমস্ত স্ত্রীলোক-দিগকে সাধারণের সমক্ষে উলঙ্গিনী করিয়া, অবিরত বেত্রাঘাত করা হইত! লজ্জায়,, যন্ত্রণায়, তাহারা ক্রমাগত বসুন্ধরাকে দ্বিধা হইয়া স্থান-দানের জন্য অনুনয় করিত! তাহাদের। স্বামিপুত্রগণ অপমানে ও মৰ্ম্ম-ভেদী যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত বক্ষঃস্থলে করাঘাত করিয়া হাহাকার করিতে থাকিত!
ইহাতেও তাহাদের নিস্তার নাই, তাহার পর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূচ্যগ্র বংশখণ্ড বক্রভাবে আনত করিয়া, যুবতীগণের স্তনবৃত্তে বিধিয়া দিত।স্থিতিস্থাপক বইশখণ্ডগুলি স্ত্রীলোকদিগের স্তন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করিয়া, ঋজুভাব অবলম্বন করিত। রুধির প্রবাহে ধরাতল অভিষিক্ত করিয়া, তাহারা ভূতলে মূর্জিত হইয়। পড়িত! সর্বংসহা বসুন্ধরা ক্ষণকালের জন্য তাহাদিগকে আপনার ক্রোড়ে স্থানদান করিতেন, কিন্তু পরে তাহাদের সেই সমস্ত ক্ষতস্থান গুল ও মশালের আগুনে দগ্ধ করিয়া, যন্ত্রণার সীমা ক্রমেই বৃদ্ধি করা হইত! কতদেশে কত অত্যাচার শুনিয়াছি, কিন্তু রমণীজাতির প্রতি এরূপ অত্যাচার কখনও শুনিয়াছি বলিয়া মনে হয় না।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















