এইরূপে প্যাটারসন্ সাহেব প্রতিনিয়ত আপনার অনুসন্ধানের ফল কমিটিতে পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি স্পষ্টাক্ষরে তাঁহাদিগকে জানাইলেন যে, প্রজাদিগের কিছুমাত্র দোষ নাই। দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে তাহারা বাধ্য হইয়া অস্ত্রধারণ করিয়াছে। যাহারা কৃষিকার্য্য করিয়া জীবিকা নির্ব্বাহ করে, সেই নিরীহ প্রজা, অত্যাচারের শেষ সীমা উপস্থিত না হইলে, কদাচ অস্ত্রধারণ করিতে সাহসী হয় না। ন্যায়পর প্যাটারসন তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া, কলিকাতার কমিটির নিকট ঐরূপ মন্তব্য লিখিয়া পাঠান।
কেবল দেবীসিংহের নহে, কিন্তু তাঁহার অনুরোধক্রমে গুড ল্যাড সাহেব সিপাহী পাঠাইয়া সেই অত্যা-চারের মাত্রা যে আরও বৃদ্ধিত করিয়াছিলেন এবং সেই সকল অত্যা-চারের জন্ম রঙ্গপুর প্রদেশের অনেক টাকার রাজস্ব অনাদায় হইয়া পড়ে, তাহাও তিনি বিশেষরূপে অবগত করান।
কমিটি এই সমস্ত ব্যাপারের প্রমাণ পাইয়া, মনে মনে দেবীসিংহের প্রতি তাদৃশ বিরক্ত না হইলেও, ডিরেক্টারগণের ভয়ে এবং কতকটা চক্ষুলজ্জায় দেবীসিংহের প্রতি দন্তক জারি করিতে এবং তাহার হস্ত হইতে সমস্ত রাজস্ব-আদায়ের ভার উঠাইয়া লইয়া প্রহরী নিযুক্ত করিয়া রাখিতে আদেশ দিলেন, এবং জমিদার ও প্রজাদিগকে দেবীসিংহের নিকট খাজনা দিতে নিষেধ করিয়া পাঠাইলেন।
কিন্তু এ সমস্ত লোকদেখান মাত্র। আমরা পরে তাহা দেখাইতে চেষ্টা করিব। কলিকাতা-কমিটির আদেশ শুনিয়া, দেবীসিংহ একেবারে স্তম্ভিত হইলেন। তিনি জানিতেন না যে, তাঁহাকে সামান্যমাত্র তিরস্কারও সহ্য করিতে হইবে। কোম্পানীর তৎকালীন যাবতীয় কর্মচারীর সহিত তাঁহার বিলক্ষণ বাধ্যবাধকতা ছিল; কিন্তু এক্ষণে তাঁহার প্রতি কঠোর আদেশের প্রচার হওয়ায় তিনি নিরতিশয় দুঃখিত হইয়া কাউন্সিলে এইরূপ দরখাস্ত লিখিয়া পাঠাইলেন।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















