এ অবস্থায় ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের এই একচ্ছত্র জয়ে দেশে জামায়াতের কর্মীদের মাঝে মনোবল আরো পোক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
‘‘আপনি একে ঐতিহাসিক পালাবদল বলতে পারেন,” ডয়চে ভেলেকে বলেন রাজনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ৷
তিনি বলেন, এই পরিবর্তন এক দিনে ঘটেনি, ধীরে ধীরে ঘটেছে৷
ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থানের কারণে শিবিরকে প্রত্যাখ্যানের যে আহ্বান জানানো হয়েছিল অন্য প্রার্থী বা জোটের পক্ষ থেকে, তা তেমন কাজ করেনি বলে মনে করেন আলতাফ পারভেজ৷
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক আচরণের ঠিক বিপরীত দিকে হেঁটেছে৷”
ইসলামপন্থি শিবিরগুলোর প্রতি সমাজে সমর্থন বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে এই পরিবর্তন আগের কর্তৃত্ববাদের চেয়ে ভিন্ন বলে মনে করেন তিনি৷
‘‘এক ধরনের কর্তৃত্ববাদ থেকে আরেক ধরনের কর্তৃত্ববাদে আছি আমরা৷ তবে এখনকার কর্তৃত্ববাদ ভিন্ন৷ এখন কর্তৃত্ববাদীরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রভাব ফেলছে,”

জাতীয় নির্বাচনের লিটমাস টেস্ট?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে করার ঘোষণা দিয়েছেন৷
এর আগে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে, একে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনমতের একটি পরীক্ষামূলক মাপকাঠি হিসেবে দেখছে৷
ছাত্র সংসদে পরপর দুটি বড় জয়ের পরজামায়াতে ইসলামী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এবং জাতীয় নির্বাচনেও ভালো ফলাফল করার আশা ব্যক্ত করেছে৷
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে একটি আসনও না জেতা বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বলেছে, তাদের খারাপ ফল জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে না৷
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুখসানা খন্দকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি না এর প্রতিফলন জাতীয় নির্বাচনে হবে৷ আপনি যদি ইতিহাস দেখেন, তাহলে দেখবেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সবসময়ই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে বেশি৷ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা শীর্ষ পদে হেরে গিয়েছে৷”
তবে তিনি এই ফলাফলকে একেবারে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ফলাফল সমাজে একটি ‘পারসেপশন’ বা ধারণা তৈরি করে, যার প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে৷ আর এখন তো একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, এই ফলাফলের একটা সাধারণ কারণ আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি পরিষ্কার যে, ইসলামপন্থিদের প্রতি সমর্থন সমাজে বেড়েছে৷ এর ফলাফল আপনি জামায়াত বা অন্য দলগুলোর উত্থানের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন৷”
যুবসমাজ ও নির্বাচনের হিসেব-নিকেশ
বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী তাদের সর্বোচ্চ ভোট শেয়ার পেয়েছিল, যা প্রায় ১২%৷ এরপর থেকে তাদের সমর্থন হ্রাস পেয়েছে৷ ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ৪.৭%-এ নেমে আসে৷ এটাই ছিল জামায়াতের শেষ নির্বাচনি অংশগ্রহণ৷
এরপর থেকে তারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল৷
দক্ষিণ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং সানেম-এর একটি সাম্প্রতিক জাতীয় যুব জরিপে দেখা গেছে যে, ৩৫ বছরের নিচের প্রায় ২২% ভোটার এখন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক, আর ৩৯% বিএনপিকে সমর্থন করে৷
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের গড় বয়স মাত্র ২৬ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী. দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি৷ এর ফলে তরুণ ভোটাররা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷
সানেম-এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় অর্ধেক তরুণ ভোটার এখনও সিদ্ধান্তহীন—যা আগামী মাসগুলোতে রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাসের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করছে৷
রোকসানা বলেন, ‘‘আমরা ছোট আকারে কিছু জরিপ করে দেখেছি৷ মানুষ আসলে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন৷”
dw.com