সারাংশ
- ভারতে স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞায় সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস রফতানি অর্ধেকে নেমেছে।
- বিকল্প সমুদ্রপথে রফতানিতে সময় ও খরচ তিনগুণ বেড়েছে।
- উৎপাদন কমেছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে।
- স্থানীয় বাজারে বিক্রি বাড়লেও লাভ কম।
- রফতানি রুট পুনরায় খোলা ও নীতি-সহযোগিতা এখন জরুরি।
ভারত হঠাৎ স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্প বড় ধাক্কায় পড়েছে। রফতানি অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে, খরচ বেড়েছে, আর হাজারো শ্রমিক সংকটে পড়েছেন।
রফতানি হঠাৎ কমে অর্ধেকে
নীলফামারীর বাণিজ্যিক উপজেলা সৈয়দপুরের রফতানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্পে বড় ধাক্কা লেগেছে। ঝুটভিত্তিক পোশাক তৈরি করা দুই শ’ থেকে বেশি কারখানায় রফতানি এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
এই পরিস্থিতি স্থানীয় অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে; অনেক কর্মী এখন বেকায়দায় পড়েছেন।
প্রধান কারণ: ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা
মন্দার বড় কারণ ভারতের সিদ্ধান্ত। তারা স্থলবন্দর পথে বাংলাদেশ থেকে পোশাকসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সৈয়দপুরের অনেক কারখানা আগে বেনাপোল, সোনামসজিদ ও সোনাহাট হয়ে পণ্য রফতানি করত। এখন বাধ্য হয়ে সমুদ্রপথ বা বিকল্প রুট নিতে হচ্ছে—ফলে খরচ ও সময় উভয়ই বেড়েছে।

পরিবহন খরচ তিনগুণ, সময়ও বাড়ছে
ব্যবসায়ীরা জানান, সমুদ্রপথে রফতানি করতে এখন প্রায় তিন গুণ বেশি খরচ পড়ছে এবং পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগছে ২০-২৫ দিন।
এতে আয় বাড়ছে না; বরং রফতানি করার চেয়ে খরচই বেশি হচ্ছে।
উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে সংকট
রফতানি কমে যাওয়ায় অনেক কারখানায় উৎপাদন কমেছে। শীতের মৌসুমে আগে ৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্ডার আসত; এখন তা অর্ধেকে নেমে গেছে বা তারও কম।
শ্রমিক, কারিগর, উদ্যোক্তারা সবাই সংকটে। উৎপাদন কমায় কর্মীদের কাজ কমে যাচ্ছে; কেউ কেউ বেকারও হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় বাজারে পোশাক বিক্রি, লাভ কম
রফতানির পথ বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পোশাকের বড় অংশ এখন স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করতে হচ্ছে। বিদেশে রফতানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা জ্যাকেট ৪০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করছেন।
তবে এই বিক্রি রফতানির লাভের তুলনায় অনেক কম।
শিল্পের ইতিহাস ও সম্প্রসারণ
সৈয়দপুরে ঝুটভিত্তিক পোশাক কারখানার শুরু পাকিস্তান আমলে। ২০০২ সাল থেকে এই খাতে দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম থেকে ঝুট কাপড় এনে এখানে পোশাক তৈরি হতো। বর্তমানে প্রায় ৫০০-র বেশি পরিবার এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

বড় ধাক্কায় খাত, সমাধান জরুরি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করেছে প্রায় ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য, যা আগের বছরের তুলনায় কম।
৭০ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রফতানির মধ্যে ৯৩% হতো স্থলপথে। সেই পথ বন্ধ হওয়ায় খাত বড় বিপর্যয়ে পড়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দ্রুত সমাধান দরকার। বাণিজ্যিক সংলাপ, রফতানি রুট পুনর্বিবেচনা এবং দুই দেশের নীতিগত সহযোগিতা ছাড়া পরিস্থিতি ঠিক হবে না।
#সৈয়দপুর #রফতানি #স্থলবন্দর_নিষেধাজ্ঞা #ভারত_বাংলাদেশ_বাণিজ্য #ঝুটগার্মেন্টস #রপ্তানি_সংকট #বাংলাদেশঅর্থনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















