চীন এ বছর জাপানি সামুদ্রিক পণ্যের ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিল।
প্রায় ৭০০ জাপানি রপ্তানিকারক সবচেয়ে বড় বাজারে ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
চীন তাদের নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ না করারও নির্দেশ দিয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর তাইওয়ান–সম্পর্কিত মন্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।
চীনের নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত
টোকিওর দুই জন সরকারি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, চীন সম্ভবত জাপানি সামুদ্রিক পণ্যের ওপর সম্পূর্ণ আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। এটি দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক তীব্র কূটনৈতিক উত্তেজনার সর্বশেষ ধাপ।
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সম্প্রতি বলেন—তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য আগ্রাসন যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। এই মন্তব্য ঘিরেই মূল সংঘাতের সূত্রপাত।
চীনের প্রতিক্রিয়া
চীন তাকাইচিকে মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এবং তাদের নাগরিকদের জাপানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এর ফলে ব্যাপক হারে টিকিট বাতিল হয়েছে, যা জাপানের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাপানি সামুদ্রিক পণ্য চীনে রপ্তানি করা হলেও তার বাজার পাওয়া যাবে না। তিনি আবারও বলেন, তাকাইচি মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে চীন ‘কঠোর ও দৃঢ়’ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
জাপানের সরকার কী বলছে
জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সচিব মিনোরু কিহারা জানান, সামুদ্রিক পণ্য নিষিদ্ধের বিষয়ে টোকিও এখনো কোনও আনুষ্ঠানিক নোটিশ পায়নি।
দুই বছর আগে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিশোধিত বর্জ্য পানির নিঃসরণ নিয়ে চীন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেটির কিছু অংশ এ বছর শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার চীন জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়কে জানায়—বর্তমান আমদানি পরীক্ষার পদ্ধতি ‘অপর্যাপ্ত’। এতে বোঝা যাচ্ছে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
জাপানি কর্মকর্তারা মনে করছেন, আসল কারণ তাকাইচির মন্তব্যের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা।
উত্তেজনা বাড়ছে দুই দেশে
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও চীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কূটনীতিকের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর জাপানও তাদের নাগরিকদের চীনে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
টোকিও জানিয়েছে, তাকাইচির বক্তব্য সরকারের অবস্থানের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ—অতএব কোনও সমঝোতার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
বাজার ও অর্থনীতিতে প্রভাব
চীন জুনে ঘোষণা করেছিল—৪৭টির মধ্যে ১০টি প্রিফেকচার ছাড়া সব অঞ্চল থেকে সামুদ্রিক পণ্য আমদানি পুনরায় শুরু করবে। এখন নিষেধাজ্ঞা ফিরে এলে এটি হবে বহু কোম্পানির জন্য বড় আঘাত—কারণ চীন ছিল জাপানের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানির অন্যতম সবচেয়ে বড় বাজার।
প্রায় ৭০০ জাপানি রপ্তানিকারক ইতোমধ্যেই পুনরায় নিবন্ধনের আবেদন করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে মাত্র তিনটি কোম্পানি।
২০২৩ সালের নিষেধাজ্ঞার আগে চীন ছিল জাপানি স্ক্যালপের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং সি–কিউকাম্বারের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক।
চীনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক ক্ষতি
চীনের নাগরিকদের জাপানে না যাওয়ার নির্দেশ আরও বড় ধাক্কা দিতে পারে। জাপানের মোট জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ছিল প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। মূলভূমি চীন ও হংকং থেকে আগত পর্যটকরাই মোট পর্যটকের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ।

ইতিমধ্যে ১০টির বেশি চীনা বিমান সংস্থা ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত জাপানমুখী ফ্লাইটের টিকিট ফেরত দিচ্ছে। এক বিশ্লেষক জানাচ্ছেন, পাঁচ লাখের বেশি টিকিট বাতিল হয়েছে।
একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের কর্মী জানিয়েছেন—তাদের জানানো হয়েছে আপাতত জাপানে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও প্রভাব
দুই দেশের শিক্ষাবিদদের বার্ষিক সম্মেলন, যা শনিবার বেইজিংয়ে হওয়ার কথা ছিল, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করেছে চীন। হিরোশিমায় নভেম্বর ২১-এ নির্ধারিত এক জাপান–চীন বন্ধুত্ব অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে।
বিনোদন শিল্পেও প্রভাব পড়েছে—শাংহাইয়ের একটি উৎসবে জাপানি কৌতুকশিল্পীদের পারফরম্যান্স বাতিল করা হয়েছে। চীনে আসন্ন কয়েকটি জাপানি সিনেমার প্রদর্শনী স্থগিত করা হয়েছে। একটি জাপানি বয় ব্যান্ড গুয়াংজুতে তাদের ফ্যান ইভেন্ট বাতিল করেছে ‘অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে।
চীনে জনপ্রিয় আরও কয়েকজন জাপানি শিল্পী সামাজিকমাধ্যমে বার্তা দিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন যেন কোনো প্রতিক্রিয়া না আসে। জাপানি গায়িকা মারিয়া ওয়েইবোতে লিখেছেন, চীন আমার কাছে দ্বিতীয় স্বদেশের মতো। চীনে থাকা আমার বন্ধুরা আমার পরিবারের মতো—আমি সবসময় ‘ওয়ান চায়না’ সমর্থন করি।
#news #Japan #China #SeafoodDispute #Diplomacy #Taiwan #TravelBan
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















