দুবাই এয়ারশো ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিনটি ছিল বিনিয়োগ, অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় ভরপুর। আমিরাতের বিমান খাত কীভাবে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে—দিনটির উন্নয়নগুলো তারই স্পষ্ট প্রমাণ।
এতিহাদের বড় অর্ডার: বহরে আরও ৩২ এয়ারবাস
এতিহাদ এয়ারওয়েজ দিনের অন্যতম বড় ঘোষণা দেয়—আরও ৩২টি এয়ারবাস বিমান কেনার সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে যাত্রী ও কার্গো উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়বে।
২০২৩ সালের পরিকল্পনা সংশোধন করে এয়ারলাইনটি এখন ২০৩০ সালের মধ্যে বহরকে ২০০ বিমানে উন্নীত করতে যাচ্ছে। যাত্রী পরিবহনের বার্ষিক ক্ষমতাও বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩৭ মিলিয়নে।
ফ্লাইদুবাইয়ের প্রথম এয়ারবাস অর্ডার: ১৫০ এ৩২১ নিও
ফ্লাইদুবাই ইতিহাসে প্রথমবার এয়ারবাসের সঙ্গে চুক্তি করেছে—একসঙ্গে ১৫০টি এ৩২১ নিও কেনার মাধ্যমে। এতদিন এই এয়ারলাইন পুরোপুরি বোয়িংয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল।
এই পরিবর্তন কোম্পানির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির বড় ইঙ্গিত দেয়।

আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: ৩৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের সমর্থন
দুবাইয়ের বিশাল প্রকল্প—আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা—প্রথম আন্তর্জাতিক অর্থায়ন পায় যুক্তরাজ্য থেকে।
ইউকে এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স (UKEF) প্রকল্পে অংশ নেওয়ার আগ্রহ হিসেবে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ‘এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট’ প্রদান করেছে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হিসেবে ২০৩০-এর শুরুর দিকে বছরে ১৫০ মিলিয়ন যাত্রী সেবা দেওয়া, দীর্ঘমেয়াদে সক্ষমতা ২৬০ মিলিয়নে উন্নীত করা, এআই-ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা, বায়োমেট্রিক প্রসেসিং চালু করা এবং উন্নত স্থাপত্য ও পরিবেশবান্ধব নকশা বাস্তবায়ন করা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী স্যার ক্রিস ব্রায়ান্ট বলেন,
“এ প্রকল্প বিশ্ব বিমান পরিবহনের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে এবং ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি প্রদর্শনের বড় সুযোগ তৈরি করবে।”
এমিরেটসের অতিরিক্ত ১০–১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ
ইউকেএফ-এর ঘোষণার পর এমিরেটসও জানায়, তাদের নিজস্ব স্থাপনাগুলোর জন্য আলাদা করে অন্তত ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এমিরেটস চেয়ারম্যান ও সিইও শেখ আহমেদ বিন সাঈদ আল মাকতুম বলেন—
“এটি শুধু সরকারের ৩৫ বিলিয়নের প্রকল্প নয়। এমিরেটসকে আলাদা হ্যাঙ্গার, ক্যাটারিং সেন্টারসহ অন্যান্য সুবিধা নির্মাণ করতে হবে। এগুলো প্রকল্পের মোট পরিধি আরও বাড়াবে।”
তিনি আরও বলেন, দুবাইয়ের শক্তিশালী নগদ প্রবাহের কারণে অর্থায়ন কোনো সমস্যা হবে না।

প্রকল্পের গুরুত্ব: আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আস্থা
ইউকেএফ-এর ৩.৫ বিলিয়ন ডলার এবং এমিরেটসের পৃথক বিনিয়োগ—এই দুই মিলিয়ে এটি দুবাইয়ের বিমানবন্দর উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই সমর্থন প্রমাণ করে যে দুবাই বিশ্বের বৃহত্তম ভবিষ্যৎ বিমানবন্দর নির্মাণে সঠিক পথে এগোচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পটিকে নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছে এবং স্থানীয় প্রধান বিমান সংস্থা এমিরেটস এই প্রকল্পকে দীর্ঘমেয়াদে তাদের কেন্দ্র হিসেবে দেখছে।
দ্বিতীয় দিনের প্রাণবন্ত পরিবেশ
দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রালে দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। দর্শনার্থীরা বিমান প্রদর্শনী, লাইভ ডেমো এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ এবং শেখ মানসুর বিন মোহাম্মদও এয়ারশো পরিদর্শন করেন।
চিনুক হেলিকপ্টার, বিচক্রাফট AT-6 এর মতো বিভিন্ন সামরিক বিমানের প্রদর্শনীও আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল।
দুবাই এয়ারশো ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিনের ঘোষণাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায়—সংযুক্ত আরব আমিরাত আগামী দশকে বৈশ্বিক বিমান পরিবহনের কেন্দ্রস্থল হতে চায়।
অতিরিক্ত বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দুবাই নতুন প্রজন্মের বিমানযাত্রার ভিত্তি গড়ে তুলছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















