শিশুর ঘুমের পোশাক শুধু রঙিন নকশা বা মিলানো সেট নয়—সঠিক কাপড়, মাপ এবং আরাম তাদের ঘুমকে কতটা গভীর ও নিরাপদ করবে, তাতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে দুবাইয়ের মতো অঞ্চলে, যেখানে দিনের তাপ আর রাতের ঠান্ডা এয়ারকন্ডিশন করা ঘরের তাপমাত্রা মিলেমিশে শিশুদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
শিশুর ঘুমের পোশাক কেন গুরুত্বপূর্ণ
ঘুমের সময় শরীরকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে সাহায্য করে সঠিক পোশাক। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চারা বড়দের মতো সহজে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন হালকা, আরামদায়ক কাপড় তাদের দ্রুত ঘুমাতে এবং দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে সাহায্য করে। Snuz-এর গ্লোবাল ব্র্যান্ড ম্যানেজার বেথানি ওকস বলেন, শিশুরা যখন নরম, বাতাস চলাচলকারী পোশাক নিয়মিত পরে, তখন তারা এটিকে ঘুমের সঙ্গে যুক্ত করতে শেখে। ফলে রাতের রুটিন আরও সহজ হয়ে যায়।
ঘুম ভাঙার লুকানো কারণ: অতিরিক্ত গরম
অনেক সময় টের না পেলেও অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া শিশুদের রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সিন্থেটিক বা খুব টাইট পোশাক শরীরে তাপ আটকে রাখে, ত্বকে জ্বালা ধরায় এবং শিশুকে অস্বস্তিতে ফেলে। ওকস জানান, বিশেষ করে গরম অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত গরম হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এটি শুধু ঘুম নষ্ট করে না, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মত: ভালো ঘুম শুরু হয় ভালো পোশাক থেকে
ড. রুহিল বাদিয়ানি বলেন, শিশু কী পরে ঘুমাতে যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে তারা কতটা আরামে ঘুমাবে। মোটা বা রুক্ষ কাপড় তাপ আটকায়, ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ঘন ঘন ঘুম ভাঙায়। তিনি সতর্ক করেন যে টাইট বা বাতাস না চলা কাপড় র্যাশ, ছত্রাক সংক্রমণ এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে। ঘুমের জন্য আদর্শ রুম টেম্পারেচার হলো ২০–২২° সেলসিয়াস।
দুবাইয়ের আবহাওয়ায় কোন পোশাক উপযুক্ত?
গরমকালে হালকা তুলা বা বাঁশের কাপড়ের পাজামা সবচেয়ে ভালো। শীতকালে লম্বা হাতার তুলার পোশাক এবং হালকা চাদর যথেষ্ট। ঘর খুব ঠান্ডা না হলে ভারী কাপড় পরানোর দরকার নেই। বাঁশের কাপড় বিশেষভাবে উপযোগী, কারণ এটি গরমে ঠান্ডা আর শীতে উষ্ণ রাখে।
সঠিক মাপ: খুব ঢিলা না, খুব টাইটও না
MULU প্রতিষ্ঠাতা কানেসা মুলুনেহ জানান, খুব ঢিলা পোশাক রাতে মুখ ঢেকে ফেলতে পারে, যা ঝুঁকি তৈরি করে। আবার খুব টাইট হলে অস্বস্তি হয় এবং ঘুমের সময় নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই সেরা হলো ঠিকমতো মানানসই, আরামদায়ক এবং শরীরে স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে পারে এমন স্নাগ-ফিট পোশাক। স্ট্রেচযোগ্য কাপড়ও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ঘুমের সময় ঘাম কমায় এবং ত্বক ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের পোশাক
শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ঘুমের ধরনও বদলায়। ছোট শিশুরা বেশি নড়ে-চড়ে, তাই তাদের জন্য সাধারণ পাজামা অনেক সময় গুটিয়ে যায় বা উপরে উঠে যায়। বড় শিশুদের নড়াচড়া কম হয়, তাই তাদের জন্য প্রচলিত পাজামা বেশ আরামদায়ক থাকে।

ঘুমের জন্য সেরা কাপড়
প্রাকৃতিক কাপড়ই সবচেয়ে ভালো। তুলা, মসলিন এবং বাঁশের কাপড় শিশুদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এগুলো ত্বক-বান্ধব, বাতাস চলাচল করতে দেয় এবং গরম বা ঠান্ডা—দুই অবস্থাতেই আরাম দেয়। পলিয়েস্টারের মতো সিন্থেটিক কাপড় শিশুদের পরানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দুবাইয়ে ঘুমের পোশাক বাছাইয়ের সহজ নিয়ম
বাইরে গরম হলেও ঘরের তাপমাত্রা দেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। গ্রীষ্মে খুব হালকা ও ঢিলেঢালা তুলার পোশাক ব্যবহার করা উচিত। শীতে এয়ারকন্ডিশন চলার কারণে ঘর যদি ঠান্ডা থাকে, তবে সামান্য ভারী তুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুর ঘর ঠিকমতো গরম বা ঠান্ডা কিনা তা বুঝতে একটি রুম থার্মোমিটার সহায়ক হতে পারে।
শিশুর ভালো ঘুম শুধু রুটিন বা আলো-আঁধারির ওপর নির্ভর করে না—পোশাকও বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক পোশাক শিশুকে আরাম দেয়, নিরাপদ রাখে এবং গভীর ঘুমে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নরম, হালকা এবং আরামদায়ক ঘুমের পোশাকই ভালো ঘুমের চাবিকাঠি। শিশুরা ভালো ঘুমালে বাবা-মারা ভালো বিশ্রাম পান।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















