পরিচিতি
ভারতীয় র্যাপার ইয়ো ইয়ো হানি সিংহের জীবনে দুবাই শুধু একটি শহর নয়—এটি তার সংগ্রাম, অসুস্থতা, পতন এবং জাগরণের কেন্দ্রবিন্দু। বুর দুবাইয়ের মাত্র ১৪০ দিরহামের একটি ছোট হোটেল রুম থেকে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ তিনি বলেন, এই শহরই তাকে আবার নতুন করে তৈরি করেছে।
দুবাইয়ে প্রথম দিন: কঠিন সময়ের শুরু
দশ বছরেরও বেশি সময় আগে যখন হানি সিংহ প্রথম দুবাইয়ে আসেন, তখন তিনি রোলস-রয়েসে শেইখ জায়েদ রোডে ঘুরছিলেন না। অসুস্থ অবস্থায় তিনি ছিলেন বুর দুবাইয়ের একটি ছোট ঘরে। সেই সময়টিকে তিনি এখন ব্যথা-মেশানো হাসিতে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “দুবাই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে। আমি আজ এখানে আছি, আপনাদের সেবায়।”
দীর্ঘ সংগ্রাম ও ব্যক্তিগত ঝড়
সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থায়ী হওয়ার আগের সময়টা তার জন্য ছিল এক অস্থির দশক। নেশা, আইনি লড়াই, বিবাহবিচ্ছেদ এবং নানা বিতর্কে তার ক্যারিয়ার থমকে গিয়েছিল।
সঙ্গীতযাত্রা ও দুবাইয়ের ভূমিকা
২০১১ সালে ‘ব্রাউন রাং’ ভিডিও দুবাইয়ে শুট করার পর থেকেই তার আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি হয়। তিনি মনে করেন, কোনো ভারতীয় শিল্পী তার মতো এত ভিডিও দুবাইয়ে করেননি। তার মতে, শহরটি যেমন বদলেছে, তেমনই তিনিও বদলেছেন—“দুবাই যেমন বেড়েছে, আমিও প্রতিদিন বেড়েছি। মানুষ যা কল্পনা করতে পারে, দুবাই তা করেছে। আমিও এমন কিছু করতে চাই, যা কেউ কল্পনাও করেনি।”

‘মাই স্টোরি’: দুই ঘণ্টার নাট্যময় কনসার্ট
হানি সিংহ তার ২০ বছরের ক্যারিয়ারকে এবার মঞ্চে গল্প আকারে তুলে ধরতে চান। ‘মাই স্টোরি’ বিশ্বভ্রমণ কনসার্ট হবে এক নাট্যনির্ভর, পরিকল্পিত, পরিচালিত দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান। তিনি জানান, “২০০৫ থেকে ২০২৬—এই ২০ বছরের গল্প দর্শক আমার চোখ দিয়ে দেখবে। কোন গান কোন শহরে তৈরি করেছি, সবই বলব।”
প্রতিটি শহরের জন্য আলাদা শো
পরিচালনা করছেন মিহির গুলাটি, যাকে সিংহ নিজের ছোট ভাইয়ের মতো মনে করেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি শহরের কনটেন্ট আলাদা হবে। সবার জন্য একই শো নয়।”
ফ্যানদের প্রতি শ্রদ্ধা
যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রচুর প্রস্তাব পাওয়ায় বিশ্বভ্রমণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “কানাডা তো মিনি পাঞ্জাব—সেখানে প্রথমবার পারফর্ম করার উত্তেজনা আলাদা।” তার জীবন ও ক্যারিয়ারের উত্থান–পতন ভক্তদের জানা। তিনি স্বীকার করেন—“আমি ফিরে এসেছি কেবল ভক্তদের জন্য।”
ইন্টারনেট যুগে ফেরা
সাত বছর ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকার পর সোশ্যাল মিডিয়ার গতি তাকে অবাক করেছে। তিনি মজা করে বলেন, “আমি যেন নতুন দৌড়ে পুরনো ঘোড়া। সবাই দ্রুত দৌড়াচ্ছে—কিন্তু জানে, আমি এখনো দ্রুততম।”
ব্যক্তিগত এক প্রকাশ: তিনি ‘রোমান্টিক’
হেসে তিনি জানান, “আমি খুব রোমান্টিক… এটা মানুষকে অনুভব করতে হবে।”
দুবাই: বিশ্বের ‘CPU’
অনেকে দুবাইকে দ্বিতীয় বাড়ি বা ট্যাক্স হেভেন ভাবে, কিন্তু সিংহের সম্পর্ক আরও গভীর। তার ভাষায়, “এখানে হিন্দিতে কথা বলা যায়, খাবার ভারতীয়, মানুষও পরিচিত—ইন্ডিয়ার মতোই লাগে।” তিনি দুবাইয়ের বহুসাংস্কৃতিক একতাকে প্রশংসা করে বলেন, “এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বহুজাতিক জায়গা—সবাই পরিবার হয়ে থাকে, একসঙ্গে খায়, শান্তিতে থাকে।”

ভৌগোলিক সুবিধাও তার কাছে বড় কারণ
“এখান থেকে ভারত তিন ঘণ্টা, লন্ডন সাত ঘণ্টা, ইউরোপ পাঁচ, মরক্কো পাঁচ—সব জায়গায় সহজে যাওয়া যায়। তাই সবাই আমার কাছে থাকে, যাতায়াতের সময় কম লাগে।”
দুবাই থেকে শুরু—এক পূর্ণচক্র
তার কাছে দুবাই কেবল ট্যুরের শুরু নয়—জীবনের একটি আবর্তনের সমাপ্তি ও নতুন শুরুর প্রতীক। “আমার সবচেয়ে বড় গল্প দুবাইয়ের সঙ্গে। আমি শুধু ভ্রমণ করিনি—আমি এখানে থেকেছি।”
বুর দুবাইয়ের ছোট ঘর থেকে বিশ্বমঞ্চ—সব পথেই দুবাই তার সঙ্গী। এবার তিনি সেই গল্পটাই দর্শকদের ফিরিয়ে দিতে চান—পর্বে পর্বে—২০২৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। “এসো, আমার দুবাইয়ের গল্প জানো।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















