বিশ্বজুড়ে অবসাদ শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়—এটি জীবনহানির ঝুঁকিও বড় মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। নতুন এক বিস্তৃত গবেষণায় দেখা গেছে, অবসাদে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু ঝুঁকি দ্বিগুণ হতে পারে এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে প্রায় দশগুণ। বিশেষত রোগ নির্ণয়ের পর প্রথম ১৮০ দিনকে বলা হয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়, যেখানে মৃত্যুঝুঁকি সর্বোচ্চ দেখা যায়।
অবসাদের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়—আর এটাই পরে বিপদ ডেকে আনে।
==================================================
উচ্চ মৃত্যুঝুঁকি: কী দেখালো গবেষণা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মেটা-অ্যানালাইসিস পরিচালনা করেছে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন (হংকং-সহ), সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ১ কোটিরও বেশি অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, অবসাদে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ। আত্মহত্যার ঝুঁকি প্রায় ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। পাশাপাশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক রোগ থেকেও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
গবেষকদের মতে, অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতার মতো অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে শারীরিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে এবং একই সঙ্গে অবসাদ আরও তীব্র হয়।

==================================================
প্রথম ১৮০ দিন কেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, বর্তমানে বিশ্বে কমপক্ষে ৩৩ কোটির বেশি মানুষ অবসাদে ভুগছেন—যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, রোগ নির্ণয়ের পর প্রথম ১৮০ দিনেই মৃত্যুঝুঁকি সর্বোচ্চ থাকে এবং এই সময় ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ বেশি হতে পারে।
সাইকোটিক ডিপ্রেশন আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি সাধারণ ডিপ্রেশনের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে। চিকিৎসা-প্রতিরোধী বা Treatment-resistant অবসাদে ঝুঁকি আরও ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।
বয়স ও লিঙ্গভেদে ও ঝুঁকির পার্থক্য উল্লেখযোগ্য। ২৫ বছরের নিচে নারীর মৃত্যুঝুঁকি ছয়গুণ বেশি দেখা গেছে এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় দশগুণ। আবার ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, যা সর্বোচ্চ ১৩ গুণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
==================================================
সময়মতো চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ব্যবহার মোট মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ কমায়। ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT) বা নিউরোস্টিমুলেশন থেরাপি নিলে মৃত্যুঝুঁকি কমে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া শারীরিক রোগে আক্রান্ত অবসাদগ্রস্তদের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
গবেষকদের মতে, অবসাদকে অবহেলা না করে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে বহু মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

==================================================
গবেষকদের সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবসাদ শুধু মানসিক রোগ নয়—এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে অবসাদ শনাক্ত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক ওষুধ, সাইকোথেরাপি বা নিউরোস্টিমুলেশন গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর জীবনমান ও গড় আয়ু দুটোই বাড়ানো সম্ভব। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি, কারণ অবসাদ সমাজ ও অর্থনীতিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের আহ্বান—অবসাদের প্রাথমিক লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসা নিন, নিয়মিত ফলোআপ করুন এবং পরিবার ও সমাজকে সচেতন রাখুন।
==================================================
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















