০৪:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
মুম্বইয়ের উচ্চ সতর্কতা: দিল্লি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত তিনজন আটক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা অনুমোদনকে স্বাগত জানাল জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শারজাহর হোলি কুরআন একাডেমি ও আইসেসকোর সহযোগিতা জোরদারের আলোচনা আকাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উদ্দেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ রাবির ৩ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পিটুনি হানি সিংহের পুনর্জাগরণ: দুবাইয়ের ছোট ঘর থেকে বিশ্বমঞ্চে তার ফিরে আসার গল্প কংগ্রেসের টালমাটাল অবস্থা: রাহুল গান্ধীর বারবার ‘হাওয়া হওয়া’ প্রশ্নের মুখে দুবাই এয়ারশো ২০২৫: বিশাল বিনিয়োগে বদলে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান খাত পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা স্মুদি সাজেশন অবসাদের প্রথম ১৮০ দিনই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ: গবেষণায় নতুন সতর্কবার্তা

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কেন জড়ো হয়েছেন প্রায় দেড়শো মানুষ?

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার একটি সীমান্ত অঞ্চলে প্রায় ১৫০ জন ‘বাংলাদেশি নাগরিক নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য’ জড়ো হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিক, যারা অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ, তাদের মধ্যে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার হার বেড়েছে বলেও বিবিসিকে জানিয়েছেন বিএসএফের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিপুল সংখ্যায় দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলে বেশ কিছু ভুয়া ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে – যার মধ্যে একটি নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার একটি নদী ঘাটের ভিডিও বলে জানাচ্ছে ভুয়া খবর যাচাই করার ওয়েবসাইট অল্টনিউজ।

সাতক্ষীরা সীমান্তে প্রায় ১৫০ জন জড়ো হয়েছেন

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামের হামলার পর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার কর্মসূচি এবং সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন – এসআইআর শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার হার বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিএসএফ।

শুধু দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চল দিয়েই প্রতিদিন ১০০ জনের কাছাকাছি মানুষ বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন এবং এরা সকলেই অবৈধভাবে ভারতে বাস করছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।

তবে তারা সাধারণত ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়েই সীমান্ত অঞ্চলে পৌঁছান।

কিন্তু গত দু-দিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের কাছে হাকিমপুর সীমান্ত অঞ্চলে প্রায় দেড়শ মানুষ জড়ো হয়েছে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য।

বিএসএফ এবং স্থানীয় সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করছে।

এতদিন ভারতে কোনো বৈধ নথি ছাড়াই তারা বসবাস করছিলেন এবং এখন ‘স্বেচ্ছায়’ নিজের দেশে ফিরে যেতে চান বলে বিএসএফ জানাচ্ছে।

একই সীমান্ত এলাকায় একসঙ্গে বহু মানুষ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছেন – এটা কিছুটা অবাক করার মতো ঘটনা। এদের যে ‘পুশব্যাক’ করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়নি, সেটাও স্পষ্ট – কারণ ওইসব ‘পুশ-ব্যাক’ সাধারণত করা হয় কোনো নির্জন সীমান্ত এলাকা দিয়ে রাতের বেলায়।

বিএসএফের ১৪৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই অবৈধ বাংলাদেশিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এদের প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। খতিয়ে দেখা হবে যে কারও বিরুদ্ধে ভারতে কোনো অপরাধের অভিযোগ আছে কি না। এরপরে তাদের বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হবে।

কী বলছেন ওই বাংলাদেশিরা?

উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুরে দু-দিন ধরে নারী-শিশুসহ বাংলাদেশিদের এই দলটি জড়ো হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

এদের সঙ্গে ব্যাগ, কম্বল, জামাকাপড় ইত্যাদি রয়েছে। তারা হাকিমপুর সীমান্ত চেকপোস্টের আগেই রাস্তার ধারে বসে আছেন বলে জানাচ্ছে একাধিক স্থানীয় সূত্র।

স্থানীয় সূত্রগুলো এটাও জানাচ্ছে যে এর আগে ছোট ছোট দলে বাংলাদেশিরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যেতেন, কিন্তু কিছুদিন হলো বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস কড়াকড়ি করছে বলে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা হঠাৎই বেড়ে গেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, অপেক্ষমান ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে বৈধ নথিপত্র ছাড়াই তারা ভারতে বসবাস করছিলেন, এখন এসআইআর শুরু হওয়ায় তারা নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

এরকমই একজন মোমেনা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলছিলেন, “আমার বাড়ি সাতক্ষীরায়। প্রায় ১৫ বছর আগে এ দেশে এসেছিলাম। নিউটাউন থানার ঘূর্ণি অঞ্চলের মাঝেরপাড়ায় থাকতাম। লোকের বাড়িতে কাজ-কাম করতাম। এখন দেশে ফিরে যাচ্ছি।”

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানা এলাকার আদি বাসিন্দা শহিদুল মল্লিক স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় থাকতেন।

“এখানে হাওড়া জেলার ডোমজুড় থানা এলাকায় থাকতাম। দিনমজুরি করতাম। এখন এসআইআর হচ্ছে, আর তো থাকতে পারব না। আমরা বিদেশি। পেটের জ্বালায় এসেছিলাম,” বলছিলেন মি. মল্লিক।

ভুয়া তথ্যও ছড়াচ্ছে

পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু হওয়ার পর বহু বাংলাদেশি – যারা বৈধ নথি ছাড়াই ভারতে বাস করছিলেন, তাদের অনেকে নিজেদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

কলকাতা লাগোয়া যে অঞ্চলে মোমেনা বেগম বাস করতেন, সেই এলাকার এক পুরোনো বাসিন্দার কাছ থেকে আগেই এ তথ্য পেয়েছিল বিবিসি বাংলা। ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ বসবাস করেন।

আবার, ওই এলাকার কারও বাড়িতে তালা বন্ধ দেখলেই সেগুলোয় ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ বাস করতেন বলে এক শ্রেণির ইউটিউবার ও কিছু মূলধারার গণমাধ্যম এরকম খবর করছিল।

এরকম আরও একটি ভুয়া খবর খুঁজে বার করেছে অল্ট নিউজ। এই ওয়েবসাইটটি ভুয়া খবর যাচাই করে থাকে।

অল্ট নিউজ তাদের একটি প্রতিবেদনে লিখেছে, “একটি ভিড়ে ঠাসা নৌকাঘাটের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন শুরু হওয়ার পরে অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গারা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন”।

একটি ভিডিও এক লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছেন বলে জানিয়েছে অল্ট নিউজ। তারা জানাচ্ছে যে ওই একই ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে একটি এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে সঠিকভাবে এসআইআর হলে অর্ধেক বাংলা খালি হয়ে যাবে”।

এই দ্বিতীয় পোস্টটির চার লাখ ৭৫ হাজার ভিউ হয়েছে বলে অল্ট নিউজ খুঁজে দেখেছে।

তথ্য যাচাই করতে গিয়ে অল্ট নিউজ খুঁজে পেয়েছে যে ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলের একটি পুরোনো প্রতিবেদন।

ইউটিউবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের পেইজে সেই পুরনো প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে অল্ট নিউজ। সেটি আসলে মোংলা নদীর একটি ফেরিঘাটের দুরবস্থা নিয়ে করা রিপোর্ট।

অল্ট নিউজ লিখেছে যে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার ওই ফেরিঘাটে নিত্যযাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন এবং দুর্ঘটনাও নিয়মিত ঘটে – এই বিষয়ে ছিল মূল প্রতিবেদনটি।

এরকম আরও বেশ কিছু ভিডিও বিবিসি বাংলাও খুঁজে পেয়েছিল এবং কিছুদিন আগের এক প্রতিবেদনে সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছিল।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

মুম্বইয়ের উচ্চ সতর্কতা: দিল্লি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত তিনজন আটক

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কেন জড়ো হয়েছেন প্রায় দেড়শো মানুষ?

০২:০২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার একটি সীমান্ত অঞ্চলে প্রায় ১৫০ জন ‘বাংলাদেশি নাগরিক নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য’ জড়ো হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিক, যারা অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ, তাদের মধ্যে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার হার বেড়েছে বলেও বিবিসিকে জানিয়েছেন বিএসএফের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, অবৈধভাবে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিপুল সংখ্যায় দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলে বেশ কিছু ভুয়া ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে – যার মধ্যে একটি নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার একটি নদী ঘাটের ভিডিও বলে জানাচ্ছে ভুয়া খবর যাচাই করার ওয়েবসাইট অল্টনিউজ।

সাতক্ষীরা সীমান্তে প্রায় ১৫০ জন জড়ো হয়েছেন

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামের হামলার পর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করার কর্মসূচি এবং সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন – এসআইআর শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার হার বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিএসএফ।

শুধু দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চল দিয়েই প্রতিদিন ১০০ জনের কাছাকাছি মানুষ বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন এবং এরা সকলেই অবৈধভাবে ভারতে বাস করছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।

তবে তারা সাধারণত ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়েই সীমান্ত অঞ্চলে পৌঁছান।

কিন্তু গত দু-দিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের কাছে হাকিমপুর সীমান্ত অঞ্চলে প্রায় দেড়শ মানুষ জড়ো হয়েছে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য।

বিএসএফ এবং স্থানীয় সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করছে।

এতদিন ভারতে কোনো বৈধ নথি ছাড়াই তারা বসবাস করছিলেন এবং এখন ‘স্বেচ্ছায়’ নিজের দেশে ফিরে যেতে চান বলে বিএসএফ জানাচ্ছে।

একই সীমান্ত এলাকায় একসঙ্গে বহু মানুষ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছেন – এটা কিছুটা অবাক করার মতো ঘটনা। এদের যে ‘পুশব্যাক’ করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়নি, সেটাও স্পষ্ট – কারণ ওইসব ‘পুশ-ব্যাক’ সাধারণত করা হয় কোনো নির্জন সীমান্ত এলাকা দিয়ে রাতের বেলায়।

বিএসএফের ১৪৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই অবৈধ বাংলাদেশিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এদের প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। খতিয়ে দেখা হবে যে কারও বিরুদ্ধে ভারতে কোনো অপরাধের অভিযোগ আছে কি না। এরপরে তাদের বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হবে।

কী বলছেন ওই বাংলাদেশিরা?

উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুরে দু-দিন ধরে নারী-শিশুসহ বাংলাদেশিদের এই দলটি জড়ো হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

এদের সঙ্গে ব্যাগ, কম্বল, জামাকাপড় ইত্যাদি রয়েছে। তারা হাকিমপুর সীমান্ত চেকপোস্টের আগেই রাস্তার ধারে বসে আছেন বলে জানাচ্ছে একাধিক স্থানীয় সূত্র।

স্থানীয় সূত্রগুলো এটাও জানাচ্ছে যে এর আগে ছোট ছোট দলে বাংলাদেশিরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যেতেন, কিন্তু কিছুদিন হলো বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস কড়াকড়ি করছে বলে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা হঠাৎই বেড়ে গেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, অপেক্ষমান ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে বৈধ নথিপত্র ছাড়াই তারা ভারতে বসবাস করছিলেন, এখন এসআইআর শুরু হওয়ায় তারা নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

এরকমই একজন মোমেনা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলছিলেন, “আমার বাড়ি সাতক্ষীরায়। প্রায় ১৫ বছর আগে এ দেশে এসেছিলাম। নিউটাউন থানার ঘূর্ণি অঞ্চলের মাঝেরপাড়ায় থাকতাম। লোকের বাড়িতে কাজ-কাম করতাম। এখন দেশে ফিরে যাচ্ছি।”

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানা এলাকার আদি বাসিন্দা শহিদুল মল্লিক স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় থাকতেন।

“এখানে হাওড়া জেলার ডোমজুড় থানা এলাকায় থাকতাম। দিনমজুরি করতাম। এখন এসআইআর হচ্ছে, আর তো থাকতে পারব না। আমরা বিদেশি। পেটের জ্বালায় এসেছিলাম,” বলছিলেন মি. মল্লিক।

ভুয়া তথ্যও ছড়াচ্ছে

পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু হওয়ার পর বহু বাংলাদেশি – যারা বৈধ নথি ছাড়াই ভারতে বাস করছিলেন, তাদের অনেকে নিজেদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

কলকাতা লাগোয়া যে অঞ্চলে মোমেনা বেগম বাস করতেন, সেই এলাকার এক পুরোনো বাসিন্দার কাছ থেকে আগেই এ তথ্য পেয়েছিল বিবিসি বাংলা। ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ বসবাস করেন।

আবার, ওই এলাকার কারও বাড়িতে তালা বন্ধ দেখলেই সেগুলোয় ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ বাস করতেন বলে এক শ্রেণির ইউটিউবার ও কিছু মূলধারার গণমাধ্যম এরকম খবর করছিল।

এরকম আরও একটি ভুয়া খবর খুঁজে বার করেছে অল্ট নিউজ। এই ওয়েবসাইটটি ভুয়া খবর যাচাই করে থাকে।

অল্ট নিউজ তাদের একটি প্রতিবেদনে লিখেছে, “একটি ভিড়ে ঠাসা নৌকাঘাটের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন শুরু হওয়ার পরে অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গারা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন”।

একটি ভিডিও এক লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছেন বলে জানিয়েছে অল্ট নিউজ। তারা জানাচ্ছে যে ওই একই ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে একটি এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে সঠিকভাবে এসআইআর হলে অর্ধেক বাংলা খালি হয়ে যাবে”।

এই দ্বিতীয় পোস্টটির চার লাখ ৭৫ হাজার ভিউ হয়েছে বলে অল্ট নিউজ খুঁজে দেখেছে।

তথ্য যাচাই করতে গিয়ে অল্ট নিউজ খুঁজে পেয়েছে যে ভিডিওটি আসলে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলের একটি পুরোনো প্রতিবেদন।

ইউটিউবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের পেইজে সেই পুরনো প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছে অল্ট নিউজ। সেটি আসলে মোংলা নদীর একটি ফেরিঘাটের দুরবস্থা নিয়ে করা রিপোর্ট।

অল্ট নিউজ লিখেছে যে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার ওই ফেরিঘাটে নিত্যযাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন এবং দুর্ঘটনাও নিয়মিত ঘটে – এই বিষয়ে ছিল মূল প্রতিবেদনটি।

এরকম আরও বেশ কিছু ভিডিও বিবিসি বাংলাও খুঁজে পেয়েছিল এবং কিছুদিন আগের এক প্রতিবেদনে সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছিল।

BBC News বাংলা