স্পেনে দূর-ডানপন্থার ক্রমবর্ধমান সমর্থন আবারও সাবেক স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্মৃতিকে সামনে নিয়ে এসেছে। তরুণদের একাংশ জীবনযাত্রার ব্যয়, আয়-ব্যয়ের সংকট এবং আবাসন সমস্যার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সামাজিক মাধ্যমে ফ্রাঙ্কোর যুগকে কেন্দ্র করে একটি নতুন নস্টালজিয়া তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, বামপন্থী সরকার অতীতের স্বৈরশাসনের প্রতীক মুছে ফেলতে চেষ্টা করলেও ডানপন্থী দলগুলো এতে বাধা দিচ্ছে।
ফ্রাঙ্কো যুগের নস্টালজিয়ার পুনরুত্থান
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্পেনের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মনে করেন ফ্রাঙ্কোর শাসনকাল দেশটির জন্য “ভালো” বা “খুব ভালো” ছিল। ২০০০ সালে এ হার ছিল মাত্র ১১.২%। আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের ১৭.৩% গণতন্ত্রের চেয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সমর্থন করে; ২০০৯ সালের তুলনায় এটি ১০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। এ উত্থানের অংশ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে এখন এআই-নির্মিত ফ্রাঙ্কোর ভিডিও, পুনর্লিখিত ইতিহাস এবং নাইটক্লাবে ফ্যাসিবাদী যুগের সংগীতের রিমিক্সও ছড়িয়ে পড়েছে।

সরকারের উদ্যোগ বনাম ডানপন্থার প্রতিরোধ
২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের বামপন্থী সরকার গণতান্ত্রিক স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ জোরদার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দেহাবশেষ শনাক্ত করা ও উৎখনন, নির্যাতনের স্থানগুলোকে “গণতান্ত্রিক স্মৃতি” হিসেবে ঘোষণা, ফ্রাঙ্কো যুগের প্রতীক অপসারণ এবং গণতন্ত্রের উপকারিতা নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার। কিন্তু রক্ষণশীল পপুলার পার্টি (PP) এবং দূর-ডানপন্থী ভোক্স (Vox) দল এসব পদক্ষেপকে “বিভাজন সৃষ্টিকারী” বলে আখ্যা দিচ্ছে এবং আদালতে চ্যালেঞ্জ করছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের জোয়ার
ভোক্স দলের জনপ্রিয়তা ২০২৩ সাল থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাইতে দলের ভোট সমর্থন পৌঁছেছে ১৮.৯ শতাংশে — রেকর্ড উচ্চতায়। বিশেষ করে তরুণ পুরুষদের মধ্যে দলের প্রতি সমর্থন অনেক বেড়েছে। ভোক্সের আইনপ্রণেতা ম্যানুয়েল মারিস্কাল দাবি করেন, “সামাজিক মাধ্যম তরুণদের দেখাচ্ছে, গৃহযুদ্ধের পরের সময়টা ছিল পুনর্গঠন, অগ্রগতি ও জাতীয় ঐক্যের একটি অধ্যায়।” ইতিহাসবিদরা বলছেন, সময়ের ব্যবধানে তরুণদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই এবং সামাজিক মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদকে সমর্থনকারী প্রবণতা বাড়ছে।
ফ্রাঙ্কো যুগকে ‘ভালো’ বলার যুক্তি ও পাল্টা বাস্তবতা
ফ্রাঙ্কো সমর্থকদের দাবি, তার সময় জীবনযাত্রা ছিল সাশ্রয়ী—যা বর্তমান আবাসন সংকট ও ব্যয়বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তারা ফ্রাঙ্কোর নির্মিত বাঁধ, হাসপাতাল, আবাসন প্রকল্প এবং রাষ্ট্রের ঐক্য রক্ষার কাজগুলো তুলে ধরে এবং কমিউনিজম প্রতিরোধের দিকটাও আখ্যা দেন। কিন্তু ইতিহাসবিদদের মতে ফ্রাঙ্কোর বাহিনী হাজার হাজার বিরোধীকে হত্যা করেছে, ব্যাপক কারাগার ও শ্রমশিবির চালিয়েছে, নির্যাতন ছিল নিয়মিত, রাজনৈতিক দল, ইউনিয়ন ও আঞ্চলিক পরিচয় সব নিষিদ্ধ ছিল, নারীদের বেশ কিছু মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রেও স্বামী বা পিতার অনুমতি লাগত, এবং সেন্সরশিপ ও গোপন পুলিশ সর্বত্র ছিল। বহু মানুষ নির্বাসনে পালিয়ে গিয়েছিল, দুর্ভিক্ষ ছড়িয়েছিল এবং জীবনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।

পরবর্তী পথ: ফ্রাঙ্কো ফাউন্ডেশন ভেঙে দেওয়া কি সমাধান?
সরকার ফ্রাঙ্কো ফাউন্ডেশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তবে এর আইনি লড়াই দীর্ঘ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের সভাপতি হুয়ান চিক্যারো বলেন, “সংস্থাকে নিষিদ্ধ করলেও ধারণাকে নিষিদ্ধ করা যায় না। তাই এটি অকার্যকর ও কর্তৃত্ববাদি পদক্ষেপ।” ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধি এমিলিও সিলভা বলেন, “ফ্রাঙ্কো কখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। এখনো অসংখ্য চিহ্ন রয়ে গেছে। তিনি আজও আমাদের করের টাকায় তৈরি এক সমাধিতে শুয়ে আছেন।”
ইতিহাসের ক্ষত ঢাকলে সমস্যা বাড়বে
সরকারি স্মরণোৎসব প্রকল্প ‘স্পেন: স্বাধীনতার ৫০ বছর’—এর প্রধান কারমিনা গুস্ত্রান বলেন, ভুল তথ্য ও বিকৃত ইতিহাস মোকাবিলায় শিক্ষা ও ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়াতে হবে। তার মতে অতীতকে চেপে রাখা নয়; স্বচ্ছ আলোচনা থেকেই গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। “একটি ক্ষত সেরে না উঠলে তা ঢেকে রাখা যায় না—পরিষ্কার না করলে তা আরও গুরুতর হয়ে উঠবে।”
#Spain #FarRight #Franco #Politics #Europe #History #SocialMedia #Vox #Democracy #Crisis
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















