বাংলাদেশ হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আদানি পাওয়ার–বিপিডিবি বিরোধকে শুধু থামিয়েই দেয়নি—এটি নতুন করে বড় প্রশ্ন তুলেছে: চুক্তিতে সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক সালিশ কেন্দ্র (এসআইএসি) নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও, কতটা পর্যন্ত স্থানীয় আদালত আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে?
বাংলাদেশ হাইকোর্টের নির্দেশ: তদন্ত না আসা পর্যন্ত সালিশি বন্ধ
আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে বিদ্যুৎ বিল এবং মূল্য নির্ধারণ নিয়ে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, তা নিষ্পত্তির জন্য দুই পক্ষ এসআইএসি–তে যেতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট জানিয়েছে—সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত সিঙ্গাপুরভিত্তিক সালিশি শুরু বা চলতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সালিশি কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে।
চুক্তিতে এসআইএসি থাকার পরও কেন এই টানাপোড়েন?
চুক্তিতে যদি এসআইএসি–কে সালিশির ‘মূল সিদ্ধান্তস্থল’ হিসেবে নির্ধারণ করা থাকে, তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তদানের প্রধান অধিকার থাকে সেই ফোরামের কাছেই।
তবে বাস্তবে অনেক দেশের আদালত নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে—যেমন জরুরি তদন্ত, জালিয়াতির সন্দেহ কিংবা জনস্বার্থ সম্পর্কিত উদ্বেগ।
ফলাফল—বিদেশে নির্ধারিত সালিশি ফোরাম ও স্থানীয় আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে সরাসরি সংঘাত।

বিরোধের মূল কারণ: মূল্য, কর-সুবিধা ও অভিযোগ
বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে:
- ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের অতিরিক্ত মূল্য
- কর-সুবিধা নিয়ে অস্পষ্টতা
- উৎপাদন ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
২০২৩–২৪ অর্থবছরে আদানি বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা—যা অন্যান্য ভারতীয় সরবরাহকারীদের গড় মূল্য ৯ টাকা ৫৭ পয়সার তুলনায় অনেক বেশি।
আদানির প্রতিক্রিয়া: “এটি বাংলাদেশের আদালতের এখতিয়ারের বাইরে”
আদানি গ্রুপ বলছে—চুক্তি অনুযায়ী সালিশির একমাত্র স্থান হলো এসআইএসি, তাই বিষয়টি বাংলাদেশের আদালতের সাধারণ এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
তারা হাইকোর্টের আদেশ পর্যালোচনা করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনি পথ অনুসন্ধান করছে।
বিপিডিবি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আইনি বাস্তবতা: আন্তর্জাতিক সালিশি বনাম স্থানীয় আদালত
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তিতে যদি বিদেশকে সালিশির সিদ্ধান্তস্থল হিসেবে নির্ধারণ করা থাকে, তবে সেই দেশের আদালতই সাধারণত সালিশি প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করে—এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর।
কিন্তু কোনো দেশের আদালত যদি মনে করে জনস্বার্থ রক্ষার জন্য জরুরি তদন্ত বা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন, তবে তারা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
এই দ্বৈত কাঠামোই এখন বাংলাদেশ–আদানি বিরোধকে জটিল এক আইনি পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছে।

ফলাফল: অনিশ্চিত পথ
এই মুহূর্তে সালিশি পুনরায় শুরু হবে কি না—তা অনিশ্চিত।
হাইকোর্টের তদন্ত-নির্ভর স্থগিতাদেশ ভবিষ্যতকে ঝুলিয়ে রেখেছে।
এটি শুধু আর্থিক বিরোধ নয়—বাংলাদেশের আদালত ও আন্তর্জাতিক সালিশির সম্পর্কেরও এক বাস্তব পরীক্ষা।
#: আন্তর্জাতিক_সংবাদ | আদানি | বাংলাদেশ | সিঙ্গাপুর_সালিশি | আদালত | আইনি_জটিলতা
আপনি চাইলে আমি এর আরও সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, সোশ্যাল পোস্ট ভার্সন, বা ইনফোগ্রাফিক–উপযোগী পয়েন্টভিত্তিক সারাংশও তৈরি করে দিতে পারি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















