পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আকাশপথে উড়তে নিষেধাজ্ঞার কারণে এয়ার ইন্ডিয়া চরম আর্থিক চাপে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংস্থাটি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলের একটি সামরিক সংবেদনশীল আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি আদায়ের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে। একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রেক্ষাপট: ভারত–চীন উত্তেজনার পর নতুন অনুরোধ
পাঁচ বছর পর সম্প্রতি ভারত–চীন সরাসরি ফ্লাইট চালু হলেও দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা পুরোপুরি কাটেনি। এমন সময়ে এয়ার ইন্ডিয়া শিনজিয়াংয়ের সামরিক নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমা ব্যবহারের ব্যতিক্রমী অনুরোধ জানিয়েছে, যা সাধারণত আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো এড়িয়ে চলে।
এয়ার ইন্ডিয়ার আর্থিক সংকট গভীরতর
জুন মাসে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ গুজরাটে বিধ্বস্ত হয়ে ২৬০ জন নিহত হন। এর পর নিরাপত্তা পরীক্ষা ও রুট কমানোর ফলে সংস্থাটি বড় ধাক্কা খেয়েছে।
পাকিস্তান আকাশপথ বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘ দূরত্বের রুটে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত এবং যাত্রা সময় বেড়েছে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। ফলে রুট পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সংস্থার হিসাবে, পাকিস্তান আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে বছরে ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে—যা আগের অর্থবছরের মোট ক্ষতি ৪৩৯ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

চীনের কাছে নতুন রুটের অনুরোধ
এয়ার ইন্ডিয়া ভারত সরকারকে বলেছে, কূটনৈতিকভাবে চীনের সঙ্গে আলোচনা করে হোটান, কাশগর ও উরুমকি হয়ে বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি চাইতে। সংস্থার দাবি, এই পথ ব্যবহার করা গেলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের রুটগুলোতে সময় কমবে, জ্বালানি খরচ কমবে এবং রুটগুলো পুনরায় লাভজনক হতে পারে।
নথিতে বলা হয়েছে, “এয়ার ইন্ডিয়ার দীর্ঘ দূরত্বের নেটওয়ার্ক মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে। হোটান রুট পাওয়া গেলে তা কৌশলগত সুবিধা দেবে।”
কেন কঠিন এই আকাশপথ
শিনজিয়াং অঞ্চলের আকাশসীমা ২০ হাজার ফুটেরও বেশি উঁচু পাহাড়ে ঘেরা—জরুরি পরিস্থিতিতে নেমে আসার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। অঞ্চলটি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের অধীনে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন আছে। হোটান এয়ারবেস সামরিকভাবে আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। গত ১২ মাসে হোটান বিমানবন্দরে কোনো বিদেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ওঠানামা করেনি।
বিমান বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে চীন এই অনুরোধে সম্মতি না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যেসব রুট অকার্যকর হয়ে পড়ছে
পাকিস্তান আকাশপথ বন্ধ থাকায় এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লি–ওয়াশিংটন রুট আগস্টে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। মুম্বাই ও বেঙ্গালুরু–সান ফ্রান্সিসকো রুট এখন অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা সময় লাগায় প্রায় অলাভজনক অবস্থায় রয়েছে। মাঝপথে কলকাতায় প্রযুক্তিগত বিরতি দরকার হয়। এমনকি সান ফ্রান্সিসকো–মুম্বাই রুটে লুফথানসার ফ্লাইট (মিউনিখ হয়ে) এখন এয়ার ইন্ডিয়ার তুলনায় মাত্র পাঁচ মিনিট বেশি সময় নেয়।
ফলে যাত্রীরা দ্রুত রুট প্রদানকারী বিদেশি এয়ারলাইনকে বেছে নিচ্ছেন।
এয়ার ইন্ডিয়ার হিসাবে, হোটান রুট খুলে গেলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১.১৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

ট্যাক্স জটিলতায় আরও চাপ
এয়ার ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিমান কেনার অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু পুরনো কর–বকেয়া নিয়ে নতুন ঝামেলা তৈরি হয়েছে। সরকার ২০২২ সালে টাটার কাছে বিক্রির সময় পুরনো দায়ভার থেকে এয়ার ইন্ডিয়াকে সুরক্ষা দিলেও পরে ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশ কয়েকটি পুরনো কর–নোটিস এসেছে।
একটি গোপন সরকারি নোটিসে কর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৫৮ মিলিয়ন ডলার বকেয়া আদায়ে তারা কঠোর ব্যবস্থা (সম্পদ জব্দসহ) নিতে পারে।
এয়ার ইন্ডিয়ার অভিযোগ, বিক্রির আগে দেওয়া আশ্বাস সত্ত্বেও এই ট্যাক্স নোটিসগুলো সংস্থার নগদ প্রবাহে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা কবে খুলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এয়ার ইন্ডিয়া চীনের আকাশপথ ব্যবহার, অস্থায়ী ভর্তুকি এবং কর–জটিলতা নিরসনের সরকারি সহায়তা চাইছে। আন্তর্জাতিক রুটগুলো টিকিয়ে রাখতে সংস্থার সামনে এখন কূটনৈতিক, আর্থিক ও নীতিগত—তিন দিক থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ।
#AirIndia #IndiaChina #PakistanAirspaceClosure #AviationCrisis #SarakkhonReport
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















