চাকরির বাজারের বাস্তবতা
বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার আগের মতো স্থিতিশীল নয়—এটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অফিসিয়াল পরিসংখ্যান দীর্ঘদিন ধরে ভালো দেখালেও বাস্তবে চাকরি পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেই অনুভব করেছেন সরকারি তথ্য আর তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যে স্পষ্ট অমিল রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি বৃদ্ধির হালনাগাদ কম পরিসংখ্যান দেখিয়ে দিয়েছে যে আসল পরিস্থিতি অনেকটা মন্দার মতো। ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে, আগের হিসাবের তুলনায় গত এক বছরে অর্ধেকেরও কম নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।
হতাশা নয়, মানসিকতা বদলানো দরকার
চাকরি খোঁজার পথে হতাশা ও দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেকেই নিজেকে অযোগ্য ভেবে বসেন। অথচ বাস্তবে সমস্যা ব্যক্তিগত নয়, বরং সামগ্রিক চাকরির বাজারে মন্দা চলছে। তাই চাকরি খোঁজার সময় এ বিষয়টিকে নিজের গল্পের অংশ করা যেতে পারে। যেমন—সাক্ষাৎকারে জীবনবৃত্তান্তে চাকরির বিরতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বলা যেতে পারে, এটি বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির ফল, ব্যক্তিগত ব্যর্থতার কারণে নয়। তবে এটিকে অভিযোগের সুরে নয়, বরং বাস্তবতার ব্যাখ্যা হিসেবে উপস্থাপন করা জরুরি।
একা নন, অনেকেই একই অবস্থায়
অন্যদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই। ডিজিটাল মার্কেটার অস্ট্রা জুবকোভস্কি প্রায় দেড় বছর ধরে চাকরি খুঁজছেন, তবে এ সময়ে স্বাধীন পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, এত মানুষ একই অবস্থায় থাকায় আর লজ্জা বোধ করার কিছু নেই।
অন্যদিকে, ক্রিস্টেন হারম্যানসন দুই দশকের বেশি সময় একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর ছাঁটাই হন। এখন তিনি বুঝতে পারছেন, আগের সময়ে নেটওয়ার্কিংয়ে গুরুত্ব না দেওয়াই ছিল তার ভুল। বর্তমানে তিনি নিয়মিত লিঙ্কডইনে ৫০ জনের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ পাঠাচ্ছেন, অনেক সময় শুধু আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এমন মানুষদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।
তিনি বলছেন, এভাবে আলাপ-আলোচনার অভ্যাস ঝালিয়ে নেওয়া যায়, যা সাক্ষাৎকারে কাজে লাগে। পাশাপাশি, যে কোনো সময় সম্পর্কগুলো কাজে লাগতে পারে।
পরিসংখ্যানকে নতুনভাবে দেখা
কিয়ার ফ্রানজেন নামের এক নারী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন, চাকরির বাজারের তথ্য সরলভাবে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। প্রশাসনিক সহকারী পদ ছেড়ে তিনি পড়াশোনা শেষ করলেও এখনও বেকার। এখন তিনি সংখ্যাগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখেন এবং বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে বিচার করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পূর্ণভাবে পরিসংখ্যান উপেক্ষা করা ঠিক নয়। বরং প্রবণতা খুঁজে বের করাই গুরুত্বপূর্ণ—কোন খাত বা কোন অঞ্চলে চাকরির সুযোগ বাড়ছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
কোথায় সুযোগ বেশি
চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন, ম্যাসাচুসেটস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে চাকরি বৃদ্ধির হার দেশজুড়ে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে, সাউথ ক্যারোলাইনা ও নিউ মেক্সিকো শীর্ষে রয়েছে। তাই চাকরি খোঁজার কৌশলে অঞ্চলভিত্তিক সুযোগকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
চাকরির বাজার এখন আগের মতো শক্তিশালী নয়। তাই পুরোনো অভ্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। হতাশ না হয়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা, নেটওয়ার্কিংয়ে সক্রিয় হওয়া এবং তথ্যকে ভিন্নভাবে বিচার করাই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর সঠিক পথ।