প্রেক্ষাপট
ইন্দোনেশিয়ার নতুন অর্থমন্ত্রী পুরবায়া ইউধি সাদেওয়া ১৫ সেপ্টেম্বর ১৬.২৩ ট্রিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার) মূল্যের এক অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ কর্মসূচি মূলত গৃহস্থালি খরচ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসার ব্যয় কমানো এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
আগস্টে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের পর সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। এরপরপরই ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয় এবং প্রশংসিত অর্থমন্ত্রী শ্রী মুল্যানি ইন্দ্রাওয়াতি অপসারিত হন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত ড. সাদেওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে আরও আগ্রাসী নীতি নেওয়ার ঘোষণা দেন।
শ্রমিকদের জন্য স্বস্তি, কিন্তু সাময়িক
পশ্চিম জাভার সুবাংয়ের শ্রমিক আসেপ দাদি করোনাভাইরাস মহামারির সময় ব্যবসা হারিয়ে নানা খণ্ডকালীন কাজে টিকে ছিলেন। এখন তিনি তিন মাসের ‘ক্যাশ ফর ওয়ার্ক’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আশায় আছেন। এ কর্মসূচিতে ৬ লাখ গ্রামীণ শ্রমিককে অস্থায়ীভাবে সড়ক ও সেতুর মতো অবকাঠামো প্রকল্পে নিয়োগ দিয়ে দৈনিক মজুরি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা যারা দিনমজুর তাদের জন্য এ সুযোগ দরজা খুলে দিয়েছে। যদিও বয়স বাড়ার কারণে আমি হয়তো আগের মতো কাজের গতি রাখতে পারব না, তবে পরিবারের জন্য এটিই আশার আলো।”
প্রণোদনা প্যাকেজের মূল দিক
- • ইন্টার্নশিপ: ২০ হাজার নতুন স্নাতককে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপের সুযোগ।
- • করছাড়: পর্যটন, হোটেল ও ক্যাফে খাতের ৫.৫২ লাখ কর্মী করছাড়ের সুবিধা পাবেন।
- • চাল বিতরণ: অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল দেওয়া হবে।
- • বীমা ভর্তুকি: রাইড-শেয়ারিং চালক ও কুরিয়ারদের দুর্ঘটনা ও মৃত্যুবীমায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি, যা ৭.৩১ লাখের বেশি মানুষকে উপকৃত করবে।
- • বাসস্থান সহায়তা: ১,০৫০টি সাশ্রয়ী মূল্যের হাউজিং ইউনিটসমূহে সহায়তা এবং অবকাঠামো ও নগর উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন।
- • বিনিয়োগ সহজীকরণ: ব্যবসায় বিনিয়োগে জটিলতা কমাতে অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও লালফিতা কমানোর উদ্যোগ।
- • দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: সমবায়ভিত্তিক কর্মসংস্থান, বাগান পুনরোপণ, উপকূলীয় মৎস্য গ্রাম উন্নয়ন, পুকুর সংস্কার এবং মাছ ধরার নৌকা আধুনিকীকরণ।
অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ কর্মসূচি স্বল্পমেয়াদে নিম্ন আয়ের মানুষের চাপ কমাবে, কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
ইকো লিস্টিয়ানতো বলেন, “এ প্যাকেজ সাময়িকভাবে দারিদ্র্যপীড়িত ও অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষকে সাহায্য করবে। তবে ১৬ ট্রিলিয়ন রুপিয়াহর সীমিত পরিসরে মধ্যবিত্তের জন্য সহায়তা প্রায় নেই বললেই চলে।” তিনি যোগ করেন, “এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে না, বরং পতন ঠেকাতে সহায়ক হবে।”
ভীমা ইউধিষ্ঠির সমালোচনা করে বলেন, “এ প্রণোদনা খুব সাধারণ, অনেক কর্মসূচিই পুরোনো প্রকল্পের পুনরাবৃত্তি। যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ০.৫ শতাংশ কর ছাড় অব্যাহত রাখলে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। মানুষের হাতে নগদ আয় বাড়ানোই সবচেয়ে কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন ইন্টার্নশিপ পরিকল্পনা নিয়ে। “ছয় মাস শেষে স্নাতকেরা কোথায় কাজ করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই,” তিনি উল্লেখ করেন।
ছোট ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গি
ফ্লোরেসের লাবুয়ান বাজোয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘তেনুন ইকাত’ বস্ত্রের দোকান চালান হেরি ক্রিস্টিয়ানো। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল তাঁর দোকানের আয় গত বছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তিনি জানান, চালু হওয়া করছাড় তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
একইভাবে সুম্বাওয়া’র কালোকা এয়ারপোর্ট হোটেলের রিসেপশনিস্ট পুতু একা বলেন, “২০২৬ পর্যন্ত পর্যটন খাতের কর্মীদের জন্য আয়করে ছাড় দেখায় সরকার আমাদের মতো ছোট কর্মীদের দিকেও নজর দিয়েছে।”
বিতরণ ব্যবস্থায় আস্থার সংকট
শ্রমিক আসেপ দাদি অতীতের নগদ সহায়তা কর্মসূচির অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন অনেক সময় সঠিকভাবে অর্থ বিতরণ করতে পারে না। ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়।
তবুও শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ীরা সরকারের দ্রুত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। হেরি ক্রিস্টিয়ানো বলেন, “সহায়তা যত ক্ষুদ্রই হোক, অন্তত সরকার আমাদের সংগ্রামকে স্বীকার করছে।”
প্রাবোওয়ের সরকারের এ প্রণোদনা প্যাকেজ আপাতত জনরোষ প্রশমিত করতে এবং শ্রমিকদের স্বস্তি দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো মৌলিক সংস্কার ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে পারবে না।