ইউএনবি থেকে অনূদিত
বাংলাদেশে গৃহঋণ ও গাড়ি ঋণের সীমা বাড়ানো এবং সার্ভিস চার্জ নির্ধারণে আরও স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব প্রস্তাব উত্থাপন করে সংগঠনটি।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মঞ্জুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এবিবি প্রতিনিধিরা গৃহঋণ ও গাড়ি ঋণের সীমা বৃদ্ধিসহ একাধিক দাবি উপস্থাপন করেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এবিবির প্রস্তাব অনুযায়ী—
- • গৃহঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ কোটি টাকা করা,
- • গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনায় ঋণ-টু-ভ্যালু অনুপাত ৯০ শতাংশে উন্নীত করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, এবিবি কয়েক মাস ধরেই লিখিতভাবে এসব প্রস্তাব দিচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বৈঠকের আয়োজন করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া
সূত্রমতে, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগতভাবে কিছু প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। তবে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় কিছু দাবি নাকচ করা হয়েছে। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে কয়েকটি শিগগিরই সার্কুলারের মাধ্যমে জানানো হবে।
এবিবির অন্যান্য দাবি
গৃহ ও গাড়ি ঋণের সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি এবিবি আরও কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে। সেগুলো হলো—
- • সব ধরনের লেনদেন ডিজিটালাইজ করা, যাতে জমা গ্রহণে বিলম্ব না হয়,
- • টায়ার-টু বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংগ্রহ সহজ করা,
- • কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (CMSME) খাতে ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন নীতিতে নমনীয়তা আনা।
এছাড়া সংগঠনটি আরও দাবি করেছে—
- • এক বছরের বেশি সময় ধরে খেলাপি থাকা ঋণ মওকুফ করার অনুমতি,
- • অতিরিক্ত ঘূর্ণায়মান ঋণের সমন্বয়ে অতিরিক্ত সময় প্রদান ও ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়নের সুযোগ।
সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য সুবিধা
এবিবি স্থির সার্ভিস চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে, যাতে প্রতিটি ব্যাংক নিজস্ব ফি নির্ধারণ করতে পারে। পাশাপাশি, নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে গ্রাহকের স্থায়ী ঠিকানা যাচাই বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে।
সংগঠনের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—
- • হাইব্রিড গাড়ি কেনায় ঋণের সীমা তুলে দিয়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ফাইন্যান্সিংয়ের সুযোগ,
- • ব্যক্তিগত ঋণের সীমা ৪০ লাখ টাকা এবং ক্রেডিট কার্ডের সীমা ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা
বৈঠকে এবিবি চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—
- • ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন,
- • পুবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী,
- • প্রাইম ব্যাংকের এমডি হাসান ও রাশেদ,
- • ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার,
- • এমটিবির এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান,
- • ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আরকে হোসেন,
- • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়সহ আরও কয়েকজন ব্যাংকপ্রধান।
বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদদের মতে, গৃহ ও গাড়ি ঋণের সীমা বাড়ালে ব্যক্তিগত ভোগব্যয় ও সম্পদ সৃষ্টিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে ঝুঁকি হলো—ঋণের সহজলভ্যতা বাড়লে খেলাপির আশঙ্কাও বাড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ভারসাম্য রক্ষা করে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।