তাইওয়ানে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
সুপার টাইফুন রাগাসা তাইওয়ানে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। সেখানে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ নিখোঁজ, অন্তত ১৮ জন আহত এবং শত শত মানুষ আটকা পড়েছেন। হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে একটি সেতু ভেসে গেছে এবং ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজারের বেশি পরিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এবং ৪ হাজারেরও বেশি পরিবার পানি পাচ্ছে না।
গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে বুধবার দুপুরের আগে থেকেই রাগাসার তীব্র প্রভাব পড়তে শুরু করে। জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানায়, ঝুহাই শহরে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। গুয়াংডং প্রদেশ সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা ঘোষণা করেছে। প্রদেশজুড়ে ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২৩টি জাহাজ, ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং ৩৮ হাজারের বেশি দমকলকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রবল বাতাস, ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গুয়াংডংয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় তাইশান থেকে ঝুয়েন পর্যন্ত এলাকায় রাগাসা আঘাত হানতে পারে। ২৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত এবং ৭ মিটার উঁচু ঢেউয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
স্কুল, ব্যবসা ও পরিবহন বন্ধ
গুয়াংডংয়ের ১০টিরও বেশি শহরে স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শেনজেনে ২১০টি ফ্লাইট বাতিল এবং ৩১৯টি আগত ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। সব বাস, ট্যাক্সি, মেট্রো ও মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নাগরিকদের প্রস্তুতি
গত দুই দিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা খাবার, পানি এবং মোবাইল ব্যাটারি মজুত করেছেন। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জানালায় টেপ লাগিয়েছে, আসবাবপত্র বেঁধে রেখেছে। স্থানীয় সরকার গাছ ছাঁটা, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, নির্মাণস্থল ও পাহাড়ি এলাকা ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করেছে।
সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া
ঝুহাই শহরের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের ভেতরের দিকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কয়েকটি হোটেলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ছাড় দেওয়া ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্লাবিত
রাগাসা মূল ভূখণ্ড চীনে আঘাত হানার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকরা প্রবল ঝড়-বৃষ্টির ভিডিও শেয়ার করছেন।
ম্যানগখুটের সঙ্গে তুলনা
শেনজেনের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাগাসার কেন্দ্রীয় শক্তি ২০১৮ সালের সুপার টাইফুন ম্যানগখুটকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে শেনজেনের ওপর সরাসরি প্রভাব তুলনামূলক দুর্বল হতে পারে। ২০১৮ সালে ম্যানগখুটে গুয়াংডংয়ে ৪ জন নিহত হন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল ৪২ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি।
পারমাণবিক কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সুরক্ষা
চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রুপ জানিয়েছে, তারা গুয়াংডং ও গুয়াংসি অঞ্চলের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সুরক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে। লুফেং পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ চীনের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো ৪০ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে।
সেনা প্রস্তুত
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, তাদের সেনারা উদ্ধার অভিযানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাদের কাছে নৌকা, লাইফ জ্যাকেট এবং জরুরি আলোকসজ্জার সরঞ্জাম রয়েছে।
পরিবহন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির
শেনজেন ও গুয়াংজুতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সব রেল, বাস, ট্যাক্সি বন্ধ রয়েছে। মহাসড়ক ও সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও সেতু ও শেনজেন-ঝংশান লিংকেও যান চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে।
ব্যবসা ও শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতি
রাগাসার কারণে প্রযুক্তিনির্ভর শহর শেনজেনসহ গ্রেটার বে এরিয়ার শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফক্সকন তাদের শেনজেন ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ করেছে। খাদ্য সরবরাহ প্ল্যাটফর্ম মেইতুয়ান, আলিবাবা ও জেডি ডটকম সেবা বন্ধ রেখেছে।
হংকংয়ে প্রভাব
রাগাসা হংকং শহরেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। শহরজুড়ে সর্বোচ্চ টাইফুন সতর্কতা ঘোষণা করা হয়। বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে শহরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
নতুন টাইফুনের আশঙ্কা
বুধবার ভোরে ফিলিপাইনের পূর্ব দিকে আরেকটি নতুন টাইফুন ‘বুয়ালয়’ তৈরি হয়েছে। এটি শনিবারের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রবেশ করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সুপার টাইফুন রাগাসা দক্ষিণ চীন ও তাইওয়ানে তীব্র ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রাণহানি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতিমধ্যেই চরম আকার নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, তবে ঝড়ের প্রকৃত ক্ষতির চিত্র আগামী কয়েকদিনে স্পষ্ট হবে।