০৭:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয় জেলগেট থেকে ফের গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ নেতা বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় রাষ্ট্রপতির দেশে ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বড় উল্লম্ফন: বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে ক্ষমতায় এলে মহানবী (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবো: তারেক রহমান বিশ্বজুড়ে স্ট্রিমিং চাহিদায় কোরিয়ান নাটকের রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী শহরে বাড়ছে শিয়ালের উপস্থিতি, নগর পরিবেশে বন্যপ্রাণীর অভিযোজন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় উপকূলীয় শহরের নগর পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন এশিয়ায় উন্নত চিপ উৎপাদন বাড়ায় বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে পরিবর্তন গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার

আলোভিত্তিক কম্পিউটিং বদলে দিতে পারে এআইয়ের ভবিষ্যৎ

নতুন গবেষণার দিগন্ত

বিশ্বজুড়ে দ্রুততর ও বেশি কার্যকর এআই তৈরি করার চাহিদা বাড়ছে। প্রচলিত কম্পিউটারগুলো বিদ্যুতের ইলেকট্রননির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে গতি ও শক্তি খরচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই খুঁজছেন বিকল্প পথ। তারই একটি প্রতিশ্রুতিশীল দিক হলো আলোভিত্তিক বা অপটিক্যাল কম্পিউটিং, যেখানে ইলেকট্রনের পরিবর্তে ফোটন ব্যবহার করা হয়।

ফোটন আলোর গতিতে চলে এবং এতে তাপ উৎপাদন কম হয়। ফলে অপটিক্যাল কম্পিউটিং হতে পারে দ্রুততর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং বেশি ব্যান্ডউইথক্ষম। এই প্রযুক্তির মূল উপাদান হলো অপটিক্যাল ফাইবার, যা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আলোয় নতুন সম্ভাবনা

আলো সাধারণত কাচ বা পানির মতো মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে আচরণ করে, যাকে বলে লিনিয়ার রেসপন্স। কিন্তু খুব শক্তিশালী আলোক তরঙ্গ, যেমন লেজার, গেলে তৈরি হয় নন-লিনিয়ার প্রতিক্রিয়া। এই অবস্থায় আলোক তরঙ্গ একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, ছড়িয়ে পড়ে বা সংকুচিত হয় এবং নতুন রঙ (ফ্রিকোয়েন্সি) তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের টাম্পেরে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সের ইউনিভার্সিতে মারি এ লুই পাস্তুরের গবেষকরা কাচের পাতলা ফাইবারে এমন আলোর নন-লিনিয়ার মিথস্ক্রিয়া পরীক্ষা করে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন। তারা দেখেছেন, এই প্রক্রিয়ায় জটিল এআই কাজ প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় দ্রুত ও কম শক্তি খরচে সম্পন্ন করা সম্ভব। জুন মাসে অপটিক্যাল লেটার্স জার্নালে তাদের গবেষণা প্রকাশিত হয়।

The physics of light-based computers can change the way AI works - The Hindu

ছবি থেকে সংখ্যায় রূপান্তর

গবেষণায় তারা ব্যবহার করেছেন এক ধরনের এআই মডেল—এক্সট্রিম লার্নিং মেশিন (ELM)। এটি সহজ ও দ্রুত কাজ করে, যেখানে কেবল একটি হিডেন লেয়ার থাকে এবং আউটপুট ওয়েট এক ধাপে নির্ধারিত হয়। এখানে ছবি ডেটাকে সংখ্যার সেটে রূপান্তর করা হয়, যাতে আলাদা আলাদা ইনপুট সহজে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়।

গবেষকরা আলোর ভৌত বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে এই রূপান্তর সম্পন্ন করেছেন। প্রথমে ছবিগুলো ছোট আকারে (যেমন 28×28 পিক্সেল থেকে 10×10) নামিয়ে আনা হয়। তারপর ছবির তথ্য আলোক তরঙ্গে এনকোড করা হয়—কখনও তরঙ্গের ফেজ (দোলনের ধরণ), আবার কখনও অ্যামপ্লিটিউড (তীব্রতা) বদলে।

আলোর রঙে লুকানো ছাপ

এরপর আলোক তরঙ্গটি ফাইবারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়, যেখানে নন-লিনিয়ার প্রতিক্রিয়া ঘটে। আলো বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ছড়ায়, যাকে বলে ডিসপারশন। এর ফলে তথ্য এমনভাবে মিশে যায় যা উল্টানো কঠিন হলেও শ্রেণিবিন্যাসে কার্যকর।

ফাইবারের শেষে প্রতিটি রঙের তীব্রতা মাপা হয়। এই বর্ণালীতে ছবির একটি অনন্য ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরি হয়। সেটিকেই ব্যবহার করা হয় ELM-এর হিডেন লেয়ার হিসেবে। এরপর হাজারো ছবির মাধ্যমে মডেলটি প্রশিক্ষিত করা হয় এবং নতুন ছবিতে পরীক্ষা চালানো হয়।

গবেষণার ফলাফল

গবেষক দল পেয়েছেন, সঠিক সেটিংসে এই পদ্ধতিতে হাতে লেখা সংখ্যা চেনার নির্ভুলতা ৯১% থেকে ৯৩% পর্যন্ত পৌঁছায়। এটি প্রচলিত কম্পিউটারনির্ভর ELM-এর সমতুল্য হলেও এখানে ইলেকট্রনিক্সের বদলে ব্যবহৃত হয়েছে আলোর পদার্থবিদ্যা।

তবে দেখা গেছে, নন-লিনিয়ার প্রভাব ও ফাইবারের দৈর্ঘ্য বাড়ালে নির্ভুলতা উন্নত হয়, কিন্তু অতিরিক্ত বাড়ালে সিস্টেম অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। অর্থাৎ এখানে একটি নির্দিষ্ট ভারসাম্য প্রয়োজন।

Light-Based Chips Could Help Slake AI's Ever-Growing Thirst for Energy | WIRED

সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ

গবেষণায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন, মডেলে আলোর পোলারাইজেশন বা বৈদ্যুতিক তরঙ্গের দিক পরিবর্তনের প্রভাব ধরা হয়নি। ভবিষ্যতে ভিন্ন পোলারাইজেশন বা জটিল ফাইবার ব্যবহার করে আরও উন্নত ফল পাওয়া যেতে পারে।

গবেষকরা আরও বলেছেন, শুধু বর্ণালীর তীব্রতা নয়, এর ফেজও মাপা হলে সিস্টেম আরও শক্তিশালী হতে পারে।

উপসংহার

এই গবেষণা প্রমাণ করছে, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে আলোর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব। এতে তৈরি হতে পারে দ্রুততর ও শক্তি সাশ্রয়ী এআই, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে বদলে দেবে। তবে এর পূর্ণ বিকাশে আরও সময় ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রয়োজন—যেমন ফোটোনিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও অপটিক্যাল নিউরাল নেটওয়ার্ক।

সারকথা, আলোভিত্তিক কম্পিউটিং এআইয়ের জন্য এমন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যা একদিন আজকের মডেলগুলোকে আদিম মনে হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

আলোভিত্তিক কম্পিউটিং বদলে দিতে পারে এআইয়ের ভবিষ্যৎ

০৩:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন গবেষণার দিগন্ত

বিশ্বজুড়ে দ্রুততর ও বেশি কার্যকর এআই তৈরি করার চাহিদা বাড়ছে। প্রচলিত কম্পিউটারগুলো বিদ্যুতের ইলেকট্রননির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে গতি ও শক্তি খরচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই খুঁজছেন বিকল্প পথ। তারই একটি প্রতিশ্রুতিশীল দিক হলো আলোভিত্তিক বা অপটিক্যাল কম্পিউটিং, যেখানে ইলেকট্রনের পরিবর্তে ফোটন ব্যবহার করা হয়।

ফোটন আলোর গতিতে চলে এবং এতে তাপ উৎপাদন কম হয়। ফলে অপটিক্যাল কম্পিউটিং হতে পারে দ্রুততর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং বেশি ব্যান্ডউইথক্ষম। এই প্রযুক্তির মূল উপাদান হলো অপটিক্যাল ফাইবার, যা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আলোয় নতুন সম্ভাবনা

আলো সাধারণত কাচ বা পানির মতো মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে আচরণ করে, যাকে বলে লিনিয়ার রেসপন্স। কিন্তু খুব শক্তিশালী আলোক তরঙ্গ, যেমন লেজার, গেলে তৈরি হয় নন-লিনিয়ার প্রতিক্রিয়া। এই অবস্থায় আলোক তরঙ্গ একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, ছড়িয়ে পড়ে বা সংকুচিত হয় এবং নতুন রঙ (ফ্রিকোয়েন্সি) তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের টাম্পেরে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সের ইউনিভার্সিতে মারি এ লুই পাস্তুরের গবেষকরা কাচের পাতলা ফাইবারে এমন আলোর নন-লিনিয়ার মিথস্ক্রিয়া পরীক্ষা করে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন। তারা দেখেছেন, এই প্রক্রিয়ায় জটিল এআই কাজ প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় দ্রুত ও কম শক্তি খরচে সম্পন্ন করা সম্ভব। জুন মাসে অপটিক্যাল লেটার্স জার্নালে তাদের গবেষণা প্রকাশিত হয়।

The physics of light-based computers can change the way AI works - The Hindu

ছবি থেকে সংখ্যায় রূপান্তর

গবেষণায় তারা ব্যবহার করেছেন এক ধরনের এআই মডেল—এক্সট্রিম লার্নিং মেশিন (ELM)। এটি সহজ ও দ্রুত কাজ করে, যেখানে কেবল একটি হিডেন লেয়ার থাকে এবং আউটপুট ওয়েট এক ধাপে নির্ধারিত হয়। এখানে ছবি ডেটাকে সংখ্যার সেটে রূপান্তর করা হয়, যাতে আলাদা আলাদা ইনপুট সহজে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়।

গবেষকরা আলোর ভৌত বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে এই রূপান্তর সম্পন্ন করেছেন। প্রথমে ছবিগুলো ছোট আকারে (যেমন 28×28 পিক্সেল থেকে 10×10) নামিয়ে আনা হয়। তারপর ছবির তথ্য আলোক তরঙ্গে এনকোড করা হয়—কখনও তরঙ্গের ফেজ (দোলনের ধরণ), আবার কখনও অ্যামপ্লিটিউড (তীব্রতা) বদলে।

আলোর রঙে লুকানো ছাপ

এরপর আলোক তরঙ্গটি ফাইবারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়, যেখানে নন-লিনিয়ার প্রতিক্রিয়া ঘটে। আলো বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ছড়ায়, যাকে বলে ডিসপারশন। এর ফলে তথ্য এমনভাবে মিশে যায় যা উল্টানো কঠিন হলেও শ্রেণিবিন্যাসে কার্যকর।

ফাইবারের শেষে প্রতিটি রঙের তীব্রতা মাপা হয়। এই বর্ণালীতে ছবির একটি অনন্য ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরি হয়। সেটিকেই ব্যবহার করা হয় ELM-এর হিডেন লেয়ার হিসেবে। এরপর হাজারো ছবির মাধ্যমে মডেলটি প্রশিক্ষিত করা হয় এবং নতুন ছবিতে পরীক্ষা চালানো হয়।

গবেষণার ফলাফল

গবেষক দল পেয়েছেন, সঠিক সেটিংসে এই পদ্ধতিতে হাতে লেখা সংখ্যা চেনার নির্ভুলতা ৯১% থেকে ৯৩% পর্যন্ত পৌঁছায়। এটি প্রচলিত কম্পিউটারনির্ভর ELM-এর সমতুল্য হলেও এখানে ইলেকট্রনিক্সের বদলে ব্যবহৃত হয়েছে আলোর পদার্থবিদ্যা।

তবে দেখা গেছে, নন-লিনিয়ার প্রভাব ও ফাইবারের দৈর্ঘ্য বাড়ালে নির্ভুলতা উন্নত হয়, কিন্তু অতিরিক্ত বাড়ালে সিস্টেম অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। অর্থাৎ এখানে একটি নির্দিষ্ট ভারসাম্য প্রয়োজন।

Light-Based Chips Could Help Slake AI's Ever-Growing Thirst for Energy | WIRED

সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ

গবেষণায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন, মডেলে আলোর পোলারাইজেশন বা বৈদ্যুতিক তরঙ্গের দিক পরিবর্তনের প্রভাব ধরা হয়নি। ভবিষ্যতে ভিন্ন পোলারাইজেশন বা জটিল ফাইবার ব্যবহার করে আরও উন্নত ফল পাওয়া যেতে পারে।

গবেষকরা আরও বলেছেন, শুধু বর্ণালীর তীব্রতা নয়, এর ফেজও মাপা হলে সিস্টেম আরও শক্তিশালী হতে পারে।

উপসংহার

এই গবেষণা প্রমাণ করছে, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে আলোর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব। এতে তৈরি হতে পারে দ্রুততর ও শক্তি সাশ্রয়ী এআই, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে বদলে দেবে। তবে এর পূর্ণ বিকাশে আরও সময় ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রয়োজন—যেমন ফোটোনিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও অপটিক্যাল নিউরাল নেটওয়ার্ক।

সারকথা, আলোভিত্তিক কম্পিউটিং এআইয়ের জন্য এমন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যা একদিন আজকের মডেলগুলোকে আদিম মনে হতে পারে।