গাজা সিটিতে ট্যাংকের অগ্রযাত্রা
রবিবার ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা সিটির আবাসিক এলাকায় আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা অসংখ্য জরুরি কলের জবাব দিতে পারছে না। এতে ওইসব এলাকায় আটকে পড়া মানুষের জীবন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সাবরা, তেল আল-হাওয়া, শেখ রাদওয়ান এবং আল-নাসের মহল্লাগুলোতে ট্যাংকের অগ্রযাত্রা আরও গভীর হয়েছে। ট্যাংকগুলো গাজা সিটির কেন্দ্র এবং পশ্চিম অংশের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
ইসরায়েল ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে গাজা সিটিতে বহু প্রতীক্ষিত স্থল অভিযান শুরু করে। এর আগে সপ্তাহজুড়ে তীব্র বোমা হামলা চলতে থাকে। এর ফলে বহু মানুষ পালিয়ে গেলেও এখনো অসংখ্য পরিবার সেখানে রয়ে গেছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠকের প্রস্তুতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, “গাজার বিষয়ে একটি সমঝোতা সম্ভব হতে পারে।” তবে হামাস জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নতুন কোনো প্রস্তাব পায়নি। সোমবার ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এদিকে মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাক্কাবি নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনার অংশ হিসেবে মিশরে গিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মিশর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে।
আহতদের উদ্ধারে বাধা
গাজার জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে পাঠানো আহতদের উদ্ধারের ৭৩টি অনুরোধ ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শহরে অভিযান বাড়াচ্ছে এবং একটি অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া পাঁচ জন যোদ্ধাকে বিমান হামলায় হত্যা করেছে।
বোমা হামলায় প্রাণহানি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে যোদ্ধা ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আল-নাসের এলাকায় এক বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাজার কয়েকটি বাড়িতে হামলায় আরও ১৬ জন নিহত হয়েছে। ফলে রবিবারের মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২১।
পরবর্তীতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৭৭ জন নিহত হয়েছে।
মানবিক সংকট তীব্রতর
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজা জুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে গাজা সিটির চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, কিছু পুষ্টি কেন্দ্রও কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, গত মাস থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ মানুষ গাজা সিটি ছেড়ে পালিয়েছে। তবে এখনো কয়েক লক্ষ মানুষ সেখানে রয়ে গেছে। আগস্টে গাজা সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস ছিল বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অনুমান।
দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের ফল
ইসরায়েল প্রায় দুই বছর আগে হামাসের এক আক্রমণের পর গাজায় ব্যাপক অভিযান শুরু করে। সেই আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয় বলে ইসরায়েলের হিসাব।
তারপর থেকে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। প্রায় পুরো জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।