০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬) শাওমির ১৭ আল্ট্রা ‘লাইকা এডিশন’: স্মার্টফোনে ফিরছে ম্যানুয়াল জুম রিং একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার

জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা ফেরত: ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল

জাতিসংঘ আবারও ইরানের ওপর অস্ত্র ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, যা মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি অভিযোগ করেছে যে ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ওই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে সরিয়ে রাখা। তবে তেহরান বরাবরের মতোই বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।

২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দিয়েছিল, সেগুলো শনিবার রাত ৮টায় (ইস্টার্ন টাইম) পুনর্বহাল হয়। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সপ্তাহে এ নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ইউরোপীয় ও ইসরায়েলি অবস্থান

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে ইরান ও অন্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মানতে আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস ঘোষণা করেছেন, বিলম্ব ছাড়াই জাতিসংঘ ও ইইউ-এর পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো ফের কার্যকর হবে।

ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, ইরান বারবার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, “লক্ষ্য স্পষ্ট—পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরানকে ঠেকানো। এর জন্য বিশ্বকে সব ধরনের উপায় কাজে লাগাতে হবে।”

ইরানের প্রতিক্রিয়া

তেহরান জানিয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া জবাব দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের তারা পরামর্শের জন্য ডেকে নিয়েছে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না।

রাশিয়া আবারও জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং কার্যকর করার মতো নয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব যদি এ পদক্ষেপ মেনে নেন, তবে তা হবে “একটি বড় ভুল”।

UN arms embargo, other sanctions reimposed on Iran over nuclear programme

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

ইউরোপীয় শক্তিগুলো প্রস্তাব দিয়েছিল যে ছয় মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে না, যদি ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেয়, ইউরেনিয়ামের মজুত কমায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলেও কূটনৈতিক দরজা এখনও বন্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থান পরিষ্কার—কূটনীতি এখনও সম্ভব, এবং নতুন চুক্তিই হবে সবচেয়ে ভালো সমাধান। তবে এজন্য ইরানকে আন্তরিকভাবে সরাসরি আলোচনায় আসতে হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও মুদ্রার পতন

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকেই ইরান কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে আছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় ইরানের মুদ্রা রিয়াল আরও বড় ধস নামিয়েছে। শনিবার এক ডলারের বিপরীতে রিয়ালের মান নেমে দাঁড়ায় ১১ লাখ ২৩ হাজারে, যা আগের দিনের ১০ লাখ ৮৫ হাজার থেকে অনেক নিচে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার পরিধি

নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ইরানের ওপর আবারও অস্ত্র আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে নিয়ন্ত্রণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া বহু ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দকরণ ফের চালু হয়েছে। সব দেশকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে এবং ইরানকে বিদেশে ইউরেনিয়াম খনন, উৎপাদন বা প্রযুক্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দিতে।

এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ খোলা থাকলেও ইরান ও পশ্চিমা শক্তির দ্বন্দ্ব আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬)

জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা ফেরত: ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

০৭:০০:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল

জাতিসংঘ আবারও ইরানের ওপর অস্ত্র ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, যা মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি অভিযোগ করেছে যে ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ওই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে সরিয়ে রাখা। তবে তেহরান বরাবরের মতোই বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।

২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দিয়েছিল, সেগুলো শনিবার রাত ৮টায় (ইস্টার্ন টাইম) পুনর্বহাল হয়। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সপ্তাহে এ নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ইউরোপীয় ও ইসরায়েলি অবস্থান

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে ইরান ও অন্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মানতে আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস ঘোষণা করেছেন, বিলম্ব ছাড়াই জাতিসংঘ ও ইইউ-এর পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো ফের কার্যকর হবে।

ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, ইরান বারবার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, “লক্ষ্য স্পষ্ট—পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইরানকে ঠেকানো। এর জন্য বিশ্বকে সব ধরনের উপায় কাজে লাগাতে হবে।”

ইরানের প্রতিক্রিয়া

তেহরান জানিয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া জবাব দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের তারা পরামর্শের জন্য ডেকে নিয়েছে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না।

রাশিয়া আবারও জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং কার্যকর করার মতো নয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব যদি এ পদক্ষেপ মেনে নেন, তবে তা হবে “একটি বড় ভুল”।

UN arms embargo, other sanctions reimposed on Iran over nuclear programme

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

ইউরোপীয় শক্তিগুলো প্রস্তাব দিয়েছিল যে ছয় মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে না, যদি ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেয়, ইউরেনিয়ামের মজুত কমায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলেও কূটনৈতিক দরজা এখনও বন্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থান পরিষ্কার—কূটনীতি এখনও সম্ভব, এবং নতুন চুক্তিই হবে সবচেয়ে ভালো সমাধান। তবে এজন্য ইরানকে আন্তরিকভাবে সরাসরি আলোচনায় আসতে হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও মুদ্রার পতন

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকেই ইরান কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে আছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় ইরানের মুদ্রা রিয়াল আরও বড় ধস নামিয়েছে। শনিবার এক ডলারের বিপরীতে রিয়ালের মান নেমে দাঁড়ায় ১১ লাখ ২৩ হাজারে, যা আগের দিনের ১০ লাখ ৮৫ হাজার থেকে অনেক নিচে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার পরিধি

নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ইরানের ওপর আবারও অস্ত্র আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে নিয়ন্ত্রণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া বহু ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দকরণ ফের চালু হয়েছে। সব দেশকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে এবং ইরানকে বিদেশে ইউরেনিয়াম খনন, উৎপাদন বা প্রযুক্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দিতে।

এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ খোলা থাকলেও ইরান ও পশ্চিমা শক্তির দ্বন্দ্ব আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।