সেনা মোতায়েনের ঘোষণা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহরে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, অভিবাসন আটককেন্দ্রগুলোকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে সেনারা ‘পূর্ণ শক্তি’ ব্যবহার করতে পারবে। ট্রাম্প তাঁর বার্তায় শহরটিকে ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী’ বলে বর্ণনা করেছেন।
স্থানীয় সরকারের কড়া বিরোধিতা
ওরেগনের গভর্নর টিনা কোটেক সেনা মোতায়েনের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, “পোর্টল্যান্ডে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি নেই। আমাদের শহর শান্ত ও নিরাপদ।” তিনি এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ উল্লেখ করে আইনি প্রতিকার খোঁজার ঘোষণা দিয়েছেন।
‘পূর্ণ শক্তি’ মানে কী?
ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট নয় যে জাতীয় গার্ড নাকি নিয়মিত মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে। পেন্টাগন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দিলে তারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (DHS) কার্যক্রমে সহায়তার জন্য প্রস্তুত।
বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট
জুন মাস থেকে পোর্টল্যান্ডের অভিবাসন আটককেন্দ্রের বাইরে টানা বিক্ষোভ চলছে। একাধিকবার সহিংসতা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ, পুলিশ আক্রমণ ও গ্রেপ্তার প্রতিরোধসহ নানা অভিযোগে ২৬ জনকে ফেডারেলভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। DHS জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা আটককেন্দ্র অবরোধ করেছে এবং কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে হুমকি দিয়েছে।
অ্যান্টিফাকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা
ট্রাম্প সম্প্রতি অ্যান্টিফাকে দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন আইনে এ ধরনের ঘোষণা করার কোনো বৈধ কাঠামো নেই। এটি সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যেতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের তীব্র সমালোচনা
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের কঠোর বক্তব্য ও আইসিই এজেন্টদের কার্যক্রমের নিন্দা করেছেন। সিনেটর রন ওয়াইডেন সতর্ক করে বলেছেন, “২০২০ সালের মতো আবারও সহিংস দমন অভিযানের চেষ্টা চলছে।” প্রতিনিধি সুজান বোনামিসি অভিযোগ করেছেন, আইসিই এমন মানুষদেরও গ্রেপ্তার করছে যারা সমাজের জন্য কোনো হুমকি নয়। কেটো ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, আইসিই দ্বারা আটক হওয়া ৬৫ শতাংশ মানুষের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।
রিপাবলিকানদের সমর্থন
অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতাদের কেউ কেউ ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মার্কিন শ্রমমন্ত্রী লরি চ্যাভেজ-ডি-রেমার বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে পোর্টল্যান্ড ‘অপরাধে জর্জরিত যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে গেছে। তিনি আইসিই স্থাপনাগুলো সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়ায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।
আইনি জটিলতা ও পূর্বের অভিজ্ঞতা
এর আগে ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জাতীয় গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। সেখানে সহিংসতা, সংঘর্ষ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এক ফেডারেল আদালত রায় দিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে জাতীয় গার্ড মোতায়েন বেআইনি ছিল এবং ‘পসি কমিটাটাস আইন’ লঙ্ঘন করেছে। ফলে ওরেগনে সেনা পাঠানো নিয়েও বড় আইনি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।