০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
ভালো স্মৃতি চাই? আগে ‘স্মৃতি’ বলতে কী বোঝায় তা নতুন করে ভাবুন দক্ষিণ আফ্রিকার রহস্যময় ও বিস্ময়কর রিংখালস সাপ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১১) এই সপ্তাহে কী দেখবেন–শুনবেন: বিগেলোর থ্রিলার, স্টিলারের পারিবারিক ডক, কারলাইল–লোভাটো ব্রডওয়েতে ‘রাগটাইম’ মঞ্চায়ন: শক্তিশালী সুর ও আবেগের পরিপূরক স্মৃতি দ্রুত মলিন হয়ে যায় কিন্তু ফটোগ্রাফি মুহূর্তটিকে থামিয়ে দিতে পারে এসএনএলে সাব্রিনা কারপেন্টার: ইমেজ, রসিকতা আর ভাইরাল কৌশল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: বিশ্বে উন্নতির সুযোগ, সতর্কতার সাথে পরিচালনা জরুরি – প্রেসিডেন্ট থারমান বালি পাচার নিয়ে তল্লাশি ইডি-র, ভোটের আগে সক্রিয়তার অভিযোগ যেখানে ভয়ই নিয়ম—করাচি চিড়িয়াখানার অদৃশ্য কর্মীদের গল্প -পঞ্চম পর্ব

সুশিমার উপকূলে প্লাস্টিকের পাহাড়, টিকে থাকার লড়াই জাপানের সীমান্ত দ্বীপে

বর্জ্যে ভরা উপকূল

জাপানের নাগাসাকি প্রিফেকচারের সুশিমা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে কুজুকা সমুদ্রসৈকতজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সমুদ্রবর্জ্য। প্লাস্টিকের ট্যাংক, মাছ ধরার ভাসা, কাঠ ও ভাঙা স্টাইরোফোমের স্তূপ এমনভাবে জমে আছে যে হাঁটার সময় সৈকতের মাটি যেন নরম হয়ে ওঠে। অনেক জায়গায় বর্জ্য পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত পৌঁছেছে।

দ্বীপের এসডিজি কৌশল বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাকুতো কুবো বলেন, “এই বাস্তবতা এখনও অনেকের অজানা। আমি চাই দ্বীপের বাইরের মানুষও বিষয়টিকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখুক।”

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ

সুশিমা দ্বীপ জাপানের কিউশু ও কোরীয় উপদ্বীপের মাঝামাঝি অবস্থিত। ভৌগোলিক কারণে এখানে প্রতিবছর ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ভেসে আসে, যা প্রায় ১২টি ৫০ মিটার দীর্ঘ সুইমিংপুল পূর্ণ করার মতো পরিমাণ। এসব প্লাস্টিকের বোতলের বেশিরভাগই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসে।

সমুদ্রস্রোত ও মৌসুমি বাতাসের কারণে এসব বর্জ্য দ্বীপের খাঁড়ি-খাঁড়ি উপকূলে জমা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, সুশিমায় যদি বর্জ্য সংগ্রহ করা যায়, তবে তা মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ সম্ভব।

ব্যয় ও মানবসম্পদের সংকট

দ্বীপ প্রশাসন প্রতিবছর প্রায় ৩০ কোটি ইয়েন (২.০৪ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করে বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ ও পুনর্ব্যবহারের জন্য। এর ৯০ শতাংশই বহন করে জাপান সরকার। উপকূলের অধিকাংশ জায়গা স্থলপথে অপ্রবেশযোগ্য হওয়ায় মৎস্যজীবী সমবায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিবছর পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়ে ১ ঘনমিটারের ব্যাগে বর্জ্য ভরে নৌকায় করে ফিরিয়ে আনে। কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

SARAYA - Combating Marine Plastic Pollution in Tsushima: A Collaborative Approach

২০২৪ অর্থবছরে ৭১০০ ঘনমিটার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। পরিকল্পিত ৫৬টি স্থানের মধ্যে জনবলের অভাবে ১০টিতে কাজ করা যায়নি। জনসংখ্যা এক সময় ৭০ হাজার থাকলেও এখন কমে ২৭ হাজারে নেমেছে, যার ৪০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

দ্বীপের মেয়র নাওকি হিতাকাতসু বলেন, “আমরা চাই আরও স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে আসুক।” গত জুনে তিনি ওসাকার বিশ্ব প্রদর্শনীতে এক আলোচনায় সমুদ্রবর্জ্য সংকট নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

শিল্পকর্মে জনসচেতনতা

শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়, সুশিমা দ্বীপ কর্তৃপক্ষ শিল্পকর্মের মাধ্যমেও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ২০২৪ সাল থেকে সমুদ্রবর্জ্য দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম জাপানের ১৬টি স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে। এসব শিল্পকর্মে দ্বীপের ছোট মন্দিরগুলোর প্রতিচ্ছবি যুক্ত করা হয়।

প্রথমে নাগাসাকি ও ফুকুওকায় প্রদর্শিত হওয়ার পর শিল্পকর্মগুলো টোকিওর কাছে ইয়োকোহামা ও ওসাকা এক্সপোতেও প্রদর্শিত হয়।

স্বেচ্ছাসেবী ও অর্থায়ন বাড়ছে

কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৪ অর্থবছরে শিল্প প্রকল্প ও বর্জ্য সংগ্রহে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ ইয়েন সংগ্রহ করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ লাখ ইয়েন বেশি।

বর্জ্য সংগ্রহে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই দ্বীপের বাইরের, এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও এসেছে অনেকে।

সুশিমা ক্যাপ্পা সংস্থার মিচিনাও সুয়েনাগা বলেন, “ওকিনাওয়া ও কিউশুর অন্যান্য দ্বীপ থেকেও কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সমুদ্রবর্জ্য কেবল সুশিমার সমস্যা নয়।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ভালো স্মৃতি চাই? আগে ‘স্মৃতি’ বলতে কী বোঝায় তা নতুন করে ভাবুন

সুশিমার উপকূলে প্লাস্টিকের পাহাড়, টিকে থাকার লড়াই জাপানের সীমান্ত দ্বীপে

০৩:০৩:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বর্জ্যে ভরা উপকূল

জাপানের নাগাসাকি প্রিফেকচারের সুশিমা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে কুজুকা সমুদ্রসৈকতজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সমুদ্রবর্জ্য। প্লাস্টিকের ট্যাংক, মাছ ধরার ভাসা, কাঠ ও ভাঙা স্টাইরোফোমের স্তূপ এমনভাবে জমে আছে যে হাঁটার সময় সৈকতের মাটি যেন নরম হয়ে ওঠে। অনেক জায়গায় বর্জ্য পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত পৌঁছেছে।

দ্বীপের এসডিজি কৌশল বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাকুতো কুবো বলেন, “এই বাস্তবতা এখনও অনেকের অজানা। আমি চাই দ্বীপের বাইরের মানুষও বিষয়টিকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখুক।”

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ

সুশিমা দ্বীপ জাপানের কিউশু ও কোরীয় উপদ্বীপের মাঝামাঝি অবস্থিত। ভৌগোলিক কারণে এখানে প্রতিবছর ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ভেসে আসে, যা প্রায় ১২টি ৫০ মিটার দীর্ঘ সুইমিংপুল পূর্ণ করার মতো পরিমাণ। এসব প্লাস্টিকের বোতলের বেশিরভাগই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসে।

সমুদ্রস্রোত ও মৌসুমি বাতাসের কারণে এসব বর্জ্য দ্বীপের খাঁড়ি-খাঁড়ি উপকূলে জমা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, সুশিমায় যদি বর্জ্য সংগ্রহ করা যায়, তবে তা মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ সম্ভব।

ব্যয় ও মানবসম্পদের সংকট

দ্বীপ প্রশাসন প্রতিবছর প্রায় ৩০ কোটি ইয়েন (২.০৪ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করে বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ ও পুনর্ব্যবহারের জন্য। এর ৯০ শতাংশই বহন করে জাপান সরকার। উপকূলের অধিকাংশ জায়গা স্থলপথে অপ্রবেশযোগ্য হওয়ায় মৎস্যজীবী সমবায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিবছর পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়ে ১ ঘনমিটারের ব্যাগে বর্জ্য ভরে নৌকায় করে ফিরিয়ে আনে। কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

SARAYA - Combating Marine Plastic Pollution in Tsushima: A Collaborative Approach

২০২৪ অর্থবছরে ৭১০০ ঘনমিটার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। পরিকল্পিত ৫৬টি স্থানের মধ্যে জনবলের অভাবে ১০টিতে কাজ করা যায়নি। জনসংখ্যা এক সময় ৭০ হাজার থাকলেও এখন কমে ২৭ হাজারে নেমেছে, যার ৪০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

দ্বীপের মেয়র নাওকি হিতাকাতসু বলেন, “আমরা চাই আরও স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে আসুক।” গত জুনে তিনি ওসাকার বিশ্ব প্রদর্শনীতে এক আলোচনায় সমুদ্রবর্জ্য সংকট নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

শিল্পকর্মে জনসচেতনতা

শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়, সুশিমা দ্বীপ কর্তৃপক্ষ শিল্পকর্মের মাধ্যমেও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ২০২৪ সাল থেকে সমুদ্রবর্জ্য দিয়ে তৈরি ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম জাপানের ১৬টি স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে। এসব শিল্পকর্মে দ্বীপের ছোট মন্দিরগুলোর প্রতিচ্ছবি যুক্ত করা হয়।

প্রথমে নাগাসাকি ও ফুকুওকায় প্রদর্শিত হওয়ার পর শিল্পকর্মগুলো টোকিওর কাছে ইয়োকোহামা ও ওসাকা এক্সপোতেও প্রদর্শিত হয়।

স্বেচ্ছাসেবী ও অর্থায়ন বাড়ছে

কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৪ অর্থবছরে শিল্প প্রকল্প ও বর্জ্য সংগ্রহে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ ইয়েন সংগ্রহ করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ লাখ ইয়েন বেশি।

বর্জ্য সংগ্রহে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই দ্বীপের বাইরের, এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও এসেছে অনেকে।

সুশিমা ক্যাপ্পা সংস্থার মিচিনাও সুয়েনাগা বলেন, “ওকিনাওয়া ও কিউশুর অন্যান্য দ্বীপ থেকেও কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। সমুদ্রবর্জ্য কেবল সুশিমার সমস্যা নয়।”