০৯:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ৫ সশস্ত্র বাহিনী দিবস শুক্রবার পালিত হবে ডাকসু নেত্রীর বাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ স্টক মার্কেট সপ্তাহ শেষ করল নিম্নমুখী লেনদেনে বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশ আরও চারজনের মৃত্যুতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে সুযোগ দেব না: সিএসসি-কে ঢাকার বার্তা স্কুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নিয়ম: শিক্ষার্থীদের জানা উচিত করণীয় ও বর্জনীয় অনুপ কুমার বিশ্বাস, নবমিতা সরকার ও কাজী আরিফুর রহমান–এই তিন সহকারী কমিশনারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে

আন্তঃশিল্প রপ্তানি যোগ্যতা যাচাই: বাংলাদেশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার। দেশের মোট রপ্তানির ষাট শতাংশের বেশি যায় ইইউভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে। বর্তমানে বাংলাদেশ ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) স্কিমের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। তবে এই সুবিধা ধরে রাখতে হলে ইইউর কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা অপরিহার্য।

সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ইইউ হঠাৎ করে বিভিন্ন শিল্পে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপত্তি ও নিয়মকানুন মেনে চলা যাচাই করবে।

আরইএক্স সিস্টেমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
রপ্তানিকারকদেরকে ‘রেজিস্টার্ড এক্সপোর্টার’ বা আরইএক্স সিস্টেমে যুক্ত হতে হবে। এর ফলে তারা নিজেরাই উৎপত্তি ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন।

অনলাইন নজরদারি বৃদ্ধি
ঘোষণাপত্র ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে, তবে কারিগরি সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।

ইইউ প্রতিনিধি দলের সফর
নভেম্বর মাসে ইইউর প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে টেক্সটাইল, জুতা ও কৃষি খাতের কারখানা পরিদর্শন করবে।

সম্ভাব্য প্রভাব

ইতিবাচক দিক

  • আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হবে।
  • জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখা সহজ হবে।
  • শিল্পখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে।

চ্যালেঞ্জ

  • ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নিবন্ধন ও অনলাইন ব্যবস্থায় মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে।
  • আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
  • ইইউর স্পট চেক কঠোর হলে অনেক কারখানা তাৎক্ষণিকভাবে মানদণ্ডে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক তুলনা

বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী রপ্তানিকারক দেশগুলো যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারত ইতিমধ্যেই ইইউর নিয়মকানুন মানতে অধিক সক্ষমতা অর্জন করেছে।

ভিয়েতনাম ইউরোপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে, ফলে তারা শুল্ক সুবিধার পাশাপাশি আরও কঠোর শর্ত পূরণ করছে। তাদের টেক্সটাইল শিল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও দক্ষ শ্রমশক্তি বেশি থাকায় ইইউর নজরদারি মেনে চলা তুলনামূলক সহজ হচ্ছে।

কম্বোডিয়া যদিও বাংলাদেশের মতোই উন্নয়নশীল অবস্থায় আছে, তবুও তারা শ্রমনীতি ও উৎপাদন মানদণ্ডে সংস্কার এনে ইইউর কাছে কিছুটা আস্থা অর্জন করেছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রম অধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে তাদের বাজার সুবিধা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ভারত রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এগিয়ে রয়েছে। তারা শুধু পোশাক নয়, বরং ফার্মাসিউটিক্যালস, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্যেও ইইউ বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য আলোচনায় অবস্থান শক্তিশালী।

এই তুলনা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের জন্য সময় এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা টিকে থাকার জন্য শুধু নিয়ম মানা নয়, বরং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার স্বচ্ছতাও জরুরি।

বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ভূমিকা

ইপিবি ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে। এসব সংগঠনকে সদস্য কারখানার তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই সংগঠনগুলো কি কার্যকরভাবে নজরদারি করতে পারবে?

নীতিগত দিক

বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা হারানোর পর অনেক বিশেষ সুবিধা কমে আসবে। তাই এখন থেকেই রপ্তানি খাতকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রস্তুত করতে হবে।

সুপারিশ

  • রপ্তানিকারকদের জন্য নিবন্ধন ও ঘোষণাপত্র প্রদানে সহজ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
  • ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া।
  • ইপিবি ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠন করা।
  • দীর্ঘমেয়াদে ইইউর বাইরে নতুন বাজার খুঁজে বের করা, যাতে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমে।

ইইউর নতুন নিয়ম ও হঠাৎ যাচাই ব্যবস্থা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চাপ। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করবে। কিন্তু অদক্ষতা ও অনিয়ম থাকলে তা রপ্তানি আয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থাকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই

আন্তঃশিল্প রপ্তানি যোগ্যতা যাচাই: বাংলাদেশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

১১:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার। দেশের মোট রপ্তানির ষাট শতাংশের বেশি যায় ইইউভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে। বর্তমানে বাংলাদেশ ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) স্কিমের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। তবে এই সুবিধা ধরে রাখতে হলে ইইউর কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা অপরিহার্য।

সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ইইউ হঠাৎ করে বিভিন্ন শিল্পে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপত্তি ও নিয়মকানুন মেনে চলা যাচাই করবে।

আরইএক্স সিস্টেমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
রপ্তানিকারকদেরকে ‘রেজিস্টার্ড এক্সপোর্টার’ বা আরইএক্স সিস্টেমে যুক্ত হতে হবে। এর ফলে তারা নিজেরাই উৎপত্তি ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন।

অনলাইন নজরদারি বৃদ্ধি
ঘোষণাপত্র ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে, তবে কারিগরি সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।

ইইউ প্রতিনিধি দলের সফর
নভেম্বর মাসে ইইউর প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে টেক্সটাইল, জুতা ও কৃষি খাতের কারখানা পরিদর্শন করবে।

সম্ভাব্য প্রভাব

ইতিবাচক দিক

  • আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হবে।
  • জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখা সহজ হবে।
  • শিল্পখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে।

চ্যালেঞ্জ

  • ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নিবন্ধন ও অনলাইন ব্যবস্থায় মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে।
  • আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
  • ইইউর স্পট চেক কঠোর হলে অনেক কারখানা তাৎক্ষণিকভাবে মানদণ্ডে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক তুলনা

বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী রপ্তানিকারক দেশগুলো যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারত ইতিমধ্যেই ইইউর নিয়মকানুন মানতে অধিক সক্ষমতা অর্জন করেছে।

ভিয়েতনাম ইউরোপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে, ফলে তারা শুল্ক সুবিধার পাশাপাশি আরও কঠোর শর্ত পূরণ করছে। তাদের টেক্সটাইল শিল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও দক্ষ শ্রমশক্তি বেশি থাকায় ইইউর নজরদারি মেনে চলা তুলনামূলক সহজ হচ্ছে।

কম্বোডিয়া যদিও বাংলাদেশের মতোই উন্নয়নশীল অবস্থায় আছে, তবুও তারা শ্রমনীতি ও উৎপাদন মানদণ্ডে সংস্কার এনে ইইউর কাছে কিছুটা আস্থা অর্জন করেছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রম অধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে তাদের বাজার সুবিধা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ভারত রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এগিয়ে রয়েছে। তারা শুধু পোশাক নয়, বরং ফার্মাসিউটিক্যালস, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্যেও ইইউ বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য আলোচনায় অবস্থান শক্তিশালী।

এই তুলনা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের জন্য সময় এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা টিকে থাকার জন্য শুধু নিয়ম মানা নয়, বরং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার স্বচ্ছতাও জরুরি।

বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ভূমিকা

ইপিবি ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে। এসব সংগঠনকে সদস্য কারখানার তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই সংগঠনগুলো কি কার্যকরভাবে নজরদারি করতে পারবে?

নীতিগত দিক

বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা হারানোর পর অনেক বিশেষ সুবিধা কমে আসবে। তাই এখন থেকেই রপ্তানি খাতকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রস্তুত করতে হবে।

সুপারিশ

  • রপ্তানিকারকদের জন্য নিবন্ধন ও ঘোষণাপত্র প্রদানে সহজ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
  • ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া।
  • ইপিবি ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠন করা।
  • দীর্ঘমেয়াদে ইইউর বাইরে নতুন বাজার খুঁজে বের করা, যাতে অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমে।

ইইউর নতুন নিয়ম ও হঠাৎ যাচাই ব্যবস্থা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চাপ। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করবে। কিন্তু অদক্ষতা ও অনিয়ম থাকলে তা রপ্তানি আয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থাকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।