০৬:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

দুই শীর্ষ কোম্পানি কি আবার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারবে?

শেয়ারবাজারে ধাক্কা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওজন কমানোর ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। জুলাইয়ের শেষের দিকে ডেনমার্কের নোভো নরডিস্ক যারা জনপ্রিয় ওষুধ ওজেম্পিক বাজারে এনেছিল, একদিনে তাদের বাজারমূল্যের এক-চতুর্থাংশ হারায়। কারণ তারা বিক্রি ও মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়ে দেয়। এর পরের সপ্তাহে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার ইলি লিলির শেয়ারের দাম একদিনে ১৪ % কমে যায়। গত ২৫ বছরে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় পতন।

গত ৬৩ সপ্তাহে এই দুই কোম্পানি মিলিয়ে প্রায় অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। ওজেম্পিক ও ওয়েগোভি ওষুধের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় নোভো নরডিস্ক ইতিমধ্যেই নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দিয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ

আমেরিকার বাজারে বিক্রি কমার কারণে নোভো নরডিস্ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০১৭ সালে ডায়াবেটিসের জন্য অনুমোদিত ওজেম্পিক এবং ২০২১ সালে ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে অনুমোদিত ওয়েগোভি প্রথমে জনপ্রিয় হলেও, ইলি লিলি যখন আরও কার্যকর মাউনজারো (২০২২) ও জেপবাউন্ড (২০২৩) বাজারে আনে, তখন চাহিদা দ্রুত কমে যায়।

ইলি লিলির ক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় তাদের নতুন ওষুধ প্রত্যাশিত ফল না দেখানোর কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়।

সরবরাহ ঘাটতি ও কপি ওষুধ

ওয়েগোভির উৎপাদন ঘাটতির কারণে আমেরিকার বাজারে অনেক ফার্মেসি ওষুধের কপি বিক্রি শুরু করে। এসব কপি ওষুধের প্রায় ৩০ % আসে চীনের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে, এবং এগুলো অনেক সস্তায় বিক্রি হয়।

নতুন খেলোয়াড়দের আগমন

অন্যান্য বড় কোম্পানিও এখন প্রতিযোগিতায় নামছে।

  • ২২ সেপ্টেম্বর ফাইজার ঘোষণা করেছে, তারা ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা নামের একটি বায়োটেক কোম্পানি কিনবে।
  • একই দিনে সুইস কোম্পানি রশে জানায়, আগামী বছর তারা নিজেদের নতুন ওজন কমানোর ওষুধের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে।
  • এর আগে রশে ৫.৩ বিলিয়ন ডলারে ডেনমার্কের জিল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে।
  • জুনে চীনের ইনোভেন্ট নিজেদের তৈরি জিএলপি-১ ইনজেকশন বাজারজাত করার অনুমোদন পেয়েছে।

পুরনোদের সম্ভাবনা

যদিও প্রতিযোগিতা বাড়ছে, নোভো নরডিস্ক ও ইলি লিলির এখনও বড় সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। নোভো নরডিস্ক গত চার বছরে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের আমেরিকায় সরবরাহ বাড়াতে সহায়তা করছে। এমনকি তারা আমেরিকান উৎপাদনকারী ক্যাটালান্টকে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিয়েছে।

ইলি লিলিও ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা রশে বা ফাইজারের তুলনায় অনেক বেশি।

নকল ওষুধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

নোভো নরডিস্ক ইতিমধ্যেই আমেরিকায় ১৩০টি মামলা করেছে নকল ওষুধের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৪টিতে তারা জিতেছে। আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এখন এসব কপি ওষুধের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে।

নতুন প্রজন্মের ওষুধ

দুই কোম্পানিরই নতুন ওষুধ আসছে।

  • নোভো নরডিস্ক ঘোষণা করেছে, তাদের তৈরি ট্যাবলেট সংস্করণের ওয়েগোভি ইনজেকশনের মতোই কার্যকর।
  • ইলি লিলির নতুন ট্যাবলেট কম কার্যকর হলেও এটি তৈরি করতে সস্তা এবং খাওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয় না।
  • নোভো নরডিস্কের আরেকটি ইনজেকশন কাগ্রিলিন্টাইড কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এসেছে। এছাড়া তাদের কাগ্রিসেমা নামে নতুন ওষুধের সংমিশ্রণ আরও বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
  • ইলি লিলির রেটাট্রুটাইডও বড় ধরনের ফলাফল দেখাচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত

প্রতিদ্বন্দ্বী নতুন কোম্পানিগুলো ২০২৮ সালের আগে বড় বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে স্থূলতা চিকিৎসার বাজার থেকে যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তার মূল অংশই নোভো নরডিস্ক ও ইলি লিলির হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তবে ২০৩০-এর পর প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হতে পারে। আপাতত এই দুই কোম্পানিই বাজারের প্রধান খেলোয়াড়।


জনপ্রিয় সংবাদ

দুই শীর্ষ কোম্পানি কি আবার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারবে?

০১:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শেয়ারবাজারে ধাক্কা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওজন কমানোর ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। জুলাইয়ের শেষের দিকে ডেনমার্কের নোভো নরডিস্ক যারা জনপ্রিয় ওষুধ ওজেম্পিক বাজারে এনেছিল, একদিনে তাদের বাজারমূল্যের এক-চতুর্থাংশ হারায়। কারণ তারা বিক্রি ও মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়ে দেয়। এর পরের সপ্তাহে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার ইলি লিলির শেয়ারের দাম একদিনে ১৪ % কমে যায়। গত ২৫ বছরে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় পতন।

গত ৬৩ সপ্তাহে এই দুই কোম্পানি মিলিয়ে প্রায় অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। ওজেম্পিক ও ওয়েগোভি ওষুধের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় নোভো নরডিস্ক ইতিমধ্যেই নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দিয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ

আমেরিকার বাজারে বিক্রি কমার কারণে নোভো নরডিস্ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০১৭ সালে ডায়াবেটিসের জন্য অনুমোদিত ওজেম্পিক এবং ২০২১ সালে ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে অনুমোদিত ওয়েগোভি প্রথমে জনপ্রিয় হলেও, ইলি লিলি যখন আরও কার্যকর মাউনজারো (২০২২) ও জেপবাউন্ড (২০২৩) বাজারে আনে, তখন চাহিদা দ্রুত কমে যায়।

ইলি লিলির ক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় তাদের নতুন ওষুধ প্রত্যাশিত ফল না দেখানোর কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়।

সরবরাহ ঘাটতি ও কপি ওষুধ

ওয়েগোভির উৎপাদন ঘাটতির কারণে আমেরিকার বাজারে অনেক ফার্মেসি ওষুধের কপি বিক্রি শুরু করে। এসব কপি ওষুধের প্রায় ৩০ % আসে চীনের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে, এবং এগুলো অনেক সস্তায় বিক্রি হয়।

নতুন খেলোয়াড়দের আগমন

অন্যান্য বড় কোম্পানিও এখন প্রতিযোগিতায় নামছে।

  • ২২ সেপ্টেম্বর ফাইজার ঘোষণা করেছে, তারা ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা নামের একটি বায়োটেক কোম্পানি কিনবে।
  • একই দিনে সুইস কোম্পানি রশে জানায়, আগামী বছর তারা নিজেদের নতুন ওজন কমানোর ওষুধের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে।
  • এর আগে রশে ৫.৩ বিলিয়ন ডলারে ডেনমার্কের জিল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে।
  • জুনে চীনের ইনোভেন্ট নিজেদের তৈরি জিএলপি-১ ইনজেকশন বাজারজাত করার অনুমোদন পেয়েছে।

পুরনোদের সম্ভাবনা

যদিও প্রতিযোগিতা বাড়ছে, নোভো নরডিস্ক ও ইলি লিলির এখনও বড় সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। নোভো নরডিস্ক গত চার বছরে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের আমেরিকায় সরবরাহ বাড়াতে সহায়তা করছে। এমনকি তারা আমেরিকান উৎপাদনকারী ক্যাটালান্টকে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিয়েছে।

ইলি লিলিও ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা রশে বা ফাইজারের তুলনায় অনেক বেশি।

নকল ওষুধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

নোভো নরডিস্ক ইতিমধ্যেই আমেরিকায় ১৩০টি মামলা করেছে নকল ওষুধের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৪টিতে তারা জিতেছে। আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এখন এসব কপি ওষুধের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে।

নতুন প্রজন্মের ওষুধ

দুই কোম্পানিরই নতুন ওষুধ আসছে।

  • নোভো নরডিস্ক ঘোষণা করেছে, তাদের তৈরি ট্যাবলেট সংস্করণের ওয়েগোভি ইনজেকশনের মতোই কার্যকর।
  • ইলি লিলির নতুন ট্যাবলেট কম কার্যকর হলেও এটি তৈরি করতে সস্তা এবং খাওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয় না।
  • নোভো নরডিস্কের আরেকটি ইনজেকশন কাগ্রিলিন্টাইড কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এসেছে। এছাড়া তাদের কাগ্রিসেমা নামে নতুন ওষুধের সংমিশ্রণ আরও বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
  • ইলি লিলির রেটাট্রুটাইডও বড় ধরনের ফলাফল দেখাচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত

প্রতিদ্বন্দ্বী নতুন কোম্পানিগুলো ২০২৮ সালের আগে বড় বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে স্থূলতা চিকিৎসার বাজার থেকে যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তার মূল অংশই নোভো নরডিস্ক ও ইলি লিলির হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তবে ২০৩০-এর পর প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হতে পারে। আপাতত এই দুই কোম্পানিই বাজারের প্রধান খেলোয়াড়।