প্যাটারসনের মন্তব্যে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসস্থাপন না করিয়া, হেষ্টিংস সাহেব গুড়ল্যাডের কোন দোষ নাই বলিয়া তাঁহাকে অব্যাহতি দিলেন। তিনি এইরূপ প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, যদি দেবীসিংহ কোনরূপ অত্যাচার করিয়া থাকেন, গুডল্যান্ডের তাহা জানিবার কোনই কারণ ছিল না। যদিও তিনি গুড়ুল্যাডকে অব্যাহতি দেন, তথাপি স্পষ্টাক্ষরে দেবী সিংহকে নির্দোষ বলিতে পারেন নাই।
যাহা হউক দেবীসিংহের বিচারের ভার কমিটীর উপর ন্যস্ত হইল। দেবী সিংহ যদিও দোষিরূপে কলিকাতায় আনীত হইলেন, তথাপি সাধারণে তাঁহাকে দোষী বলিয়া বিবেচনা করিতে পারিল না। যে সমস্ত রক্ষক তাঁহার প্রহরিস্বরূপ নিযুক্ত হয়, তাহারা ক্রমে তাঁহার আদালীরূপে পরিণত হইল। তাঁহাকে কারাগারে রাখা দূরে থাকুক, তিনি আপনার বাটীতে পর্য্যন্ত আবদ্ধ ছিলেন না; ইচ্ছামত যেখানে সেখানে গমন করিতে পারিতেন।
সেই সকল প্রহরী বন্দুকগুলি দূরে রাখিয়া বেয়নেট নিম্নাভিমুখ করিয়া কখন কখন রৌপ্যনির্মিত আশা-সোটা লইয়া তাঁহার সহিত গমনাগমন করিত। সাধারণ লোকে অপ-রাধী মনে করা দূরে থাকুক, তাঁহাকে একজন মাননীয় শাসনকর্তা বলিয়া বিবেচনা করিত। যে ব্যক্তি শত শত লোকের প্রাণনাশ করা, শত শত গৃহ অগ্নিমুখে ভস্মীভূত করিয়া, নিরীহ প্রজাদিগের স্ত্রী, পুত্র, পরিবারের প্রতি পাশবিক অত্যাচারের একশেষ করিয়াছে, কোথায় তাহাকে শৃঙ্খলবদ্ধ করিয়া কারাগারের অন্ধতম প্রদেশে আবদ্ধ করিয়া হইবে, না তাহার উপর নিযুক্ত প্রহরীদিগকে তাহার আদালীতে পরিণত করা হইল!
যাঁহাদের উপর বিচারের ভার অর্পিত হয়, দেবীসিংহ সর্ব্বদা তাঁহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। অপরাধী হইয়া বিচারকের সহিত সাক্ষীৎ করিতে তিনি একদিনের জন্যও নিষিদ্ধ হন নাই। বিচারকগণ দেবীসিংহের মহামহিমাময়, অর্থের দাসত্বে আপনাদিগকে যে বিক্রীত করিয়াছিলেন, তাহা কাহারও অবিদিত ছিল না। এই সমস্ত বিচারকগণ বিচারাসনে উপবিষ্ট হইয়া, অপরাধী দেবী সিংহকে তাঁহার সমস্ত অপরাধের কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া, প্যাটারসনকে ক্রমাগত জিজ্ঞাসার উপর জিজ্ঞাসা আরম্ভ করিলেন।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















