যাহার সহিত ইংরেজরাজত্বের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ, তাহার পরিচয়ের কি আবস্তুক নাই? তাহার সমাধি কি ভূমির সহিত মিশিয়া থাকিবে? কাহাকেও তাহার সংবাদ লইতে দেখি না। বৎসর বৎসর ভাগীরথী সমাধির নিকটস্থ হইয়া থাকেন; যেন তাহাদের সংবাদ লইতে তাঁহার ইচ্ছা হইয়া থাকে। একদিন তাঁহার তীরে যাহারা ক্রীড়া করিয়াছিল, যে আলিবর্দী ও সিরাজ এক সময়ে তাঁহার তীরে বিজয়নিশান উড়াইয়াছিল, আনন্দ-কোলাহলে তাঁহার তরঙ্গরাশিকে উচ্ছ্বসিত করিয়াছিল, তাহাদের সংবাদ জানিতে ইচ্ছা করিয়াই যেন কেবল তিনিই অগ্রসর হইয়া থাকেন।
কলকল রবে সংবাদ জিজ্ঞাসা করিয়া আবার দূরে প্রস্থান করেন। হতভাগ্য সিরাজ কখনও মনে করে নাই যে তাহার অনন্ত জীবন আঁধারেই পর্যবসিত হইবে। যাউক, আঁধারে থাকিবার জন্য যখন তাহার জন্ম, তখন তাহাকে আঁধারেই থাকিতে দেওয়া হউক। একটি কথা মনে পড়িল,-ইংরেজ ঐতিহাসিকের চক্ষে সিরাজ ঘোর অত্যাচারী।
কিন্তু তাহার এমন কোন কি গুণ ছিল না যে, তাহার উল্লেখ করিয়া হতভাগ্যের প্রতি সহানুভূতি দেখান যায়? অনেক দিন হইল, সিরাজের রাজত্বের অবসান হইয়াছে; তাহার পর কোম্পানীর রাজত্ব গিয়াছে। এক্ষণে আমরা যে রাজত্বে বাস করিতেছি তাহার তুলনা নাই; শান্তিময়ী সাম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া ও তাঁহার উদারহৃদয় পুত্র রাজরাজেশ্বরের আশ্রয়চ্ছায়ায় অবস্থিতি করিয়া এক্ষণে আমরা তাঁহার শান্তিপ্রিয় পৌত্রের আশ্রিত।
আমাদিগকে শান্তিময় রাজত্বে বাস করিতে দেখিয়া পৃথিবীর কত লোক হিংসা করিয়া থাকে। কিন্তু এই শান্তিময় রাজত্বে বাস করিয়াও রাজপুরুষগণের অদূরদর্শিতায় শান্তিচ্ছায়ার মধ্যেও কখনও কখনও আতপতাপ অনুভব করিতে হয়। সিরাজের রাজত্বে যাহাই হউক না কেন, বাস্তবিক সেইরূপ অত্যাচারপূর্ণ না হইলেও অনেকের মনস্তুষ্টির জন্য স্বীকার করিলাম যে তাহার রাজত্ব ঘোর উপদ্রবময় ছিল; কিন্তু তাহার রাজত্বে আমরা যাহা ভোগ করিয়াছি, এখন তাহা পাই না কেন?
শ্রী নিখিলনাথ রায় 

















