সহস্র অত্যাচারময় হইলেও, হতভাগ্য সিরাজকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হয়। সিরাজ মুসল্যান হইয়া কখনও হিন্দুর গুণ অস্বীকার করিত না। সিরাজ বলিয়া কেন, যে দাম্ভিক সম্রাট্ আরঙ্গজেবের মত হিন্দুবিদ্বেষী কেহ দিল্লীর সিংহাসনে অধিরূঢ় হন নাই, সেই আরঙ্গজেবই হিন্দুদিগকে উচ্চপদ প্রদান করিতে কুষ্টিত হইতেন না।
আর সিরাজ, তাঁহার সময়, দুল্লভরাম প্রধান মন্ত্রী, মোহনলাল সেনাপতি, জগৎশেঠ রাজস্ববিষয়ে সর্ব্বেসর্ব্বা, মন্দকুমার হুগলীর ফৌজদার, আর কত নাম করিব! ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ সিরাজের প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাসী ছিলেন।
সিরাজ তাঁহাদের পরামর্শ লইয়া অনেক কার্য্য করিতেন। তাই’ বলিতেছি, সিরাজের অশেষ দোষ থাকিলেও তাঁহার যে সামান্য গুণ ছিল, তাহাও কেন আমরা বিস্তৃত হই, বুঝিতে পারি না। পাপীর জন্য করুণা প্রকাশই পুণ্যধৰ্ম্ম।
বিশেষতঃ তাহার অন্ধকারময় জীবনের মধ্যে যদি একটু সামান্য আলোকও দেখা যায়, তাহা হইলে সে আলোক-টুকু স্বীকার করিয়া তাহার প্রতি সহানুভূতি দেখান কি উচিত নহে? হতভাগ্য সিরাজের হিন্দু মুসলমানের প্রতি সমভাব স্মরণ করিয়া তাহার অন্ধকারময় জীবনের মধ্যে একটু আলোক দেখিতে পাই বলিয়া, তাহার প্রতি করুণার উদ্রেক হয়।
সিরাজের রাজত্বের সময় হিন্দু মুসলমানের সমান আধিপত্য ছিল; কিন্তু আজিও আমাদের শাদা কাল ঘুচিল না! তাহার পর সে সময় হিন্দু মুসল মানে এরূপ প্রতিনিয়ত বিবাদ হইত না। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও স্নেহ প্রকাশ করিত। আর এক্ষণে তাহাদের মধ্যে যে ঘোর বিবাদ হইতেছে, তাহার কারণ কি করিয়া বুঝিব? রাজকর্মচারীকে বিবাদ মীমাংসা করিতে দেখি না।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 


















