০৯:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ৫ সশস্ত্র বাহিনী দিবস শুক্রবার পালিত হবে ডাকসু নেত্রীর বাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ স্টক মার্কেট সপ্তাহ শেষ করল নিম্নমুখী লেনদেনে বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশ আরও চারজনের মৃত্যুতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে সুযোগ দেব না: সিএসসি-কে ঢাকার বার্তা স্কুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নিয়ম: শিক্ষার্থীদের জানা উচিত করণীয় ও বর্জনীয় অনুপ কুমার বিশ্বাস, নবমিতা সরকার ও কাজী আরিফুর রহমান–এই তিন সহকারী কমিশনারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

ঘটনাপ্রবাহের পটভূমি

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার ঘটনার পর রবিবার রাতে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল আরোহী মামুন হত্যার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। এরপর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন।

ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে।

ধর্ষণ মামলা ও নতুন অস্থিরতা

২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ইউপিডিএফ (মূল) কর্মী শায়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়।

এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ সংশ্লিষ্ট সংগঠন পিসিপির নেতা উখানু মারমা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর জেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। একই সময়ে দেশি-বিদেশি ব্লগারসহ কয়েকজন পাহাড়ি ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ান।

সহিংসতার বিস্তার

২৬ সেপ্টেম্বর উখানু মারমার নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে সেনা টহলদলের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া হয়, এতে তিন সেনাসদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ধৈর্য, সংযম ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, শক্তি প্রয়োগ করেনি।

২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ পুনরায় হামলা চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী তারা সাধারণ মানুষ ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, গুলি, ভাঙচুর এবং সড়ক অবরোধ করে। এতে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায় এবং ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতভর সমন্বিতভাবে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনী দাবি করে, এর ফলে “অবশ্যম্ভাবী দাঙ্গা” প্রতিরোধ সম্ভব হয়।

২৮ সেপ্টেম্বরের সংঘর্ষ

২৮ সেপ্টেম্বর সকালে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ কর্মীরা ১৪৪ ধারা অমান্য করে সড়ক অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মী ও স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলে তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, ইট ও গুলতি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিন কর্মকর্তা সহ ১০ সেনাসদস্য আহত হন।

একই সময়ে রামগড়ে বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর হয় এবং কয়েকজন সদস্য আহত হন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইউপিডিএফ (মূল) সদস্যরা পাহাড় থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে সেনা সদস্য, পাহাড়ি ও বাঙালি নাগরিক আহত হন।

সেনাবাহিনী পাল্টা অভিযানে গেলে ইউপিডিএফ সদস্যরা রামসু বাজার এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুরের পর অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সেনাবাহিনীর অভিযোগ ও পদক্ষেপ

সেনাবাহিনীর দাবি, ইউপিডিএফ সম্প্রতি নারী ও স্কুলশিক্ষার্থীদের জোর করে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি বাইরের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে যুক্ত করার চেষ্টাও করছে।

সেদিন (২৮ সেপ্টেম্বর) কাপ্তাইয়ে বিজিবির চেকপোস্টে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনী বলছে, এটি ইউপিডিএফের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আরেকটি প্রমাণ।

তাদের মতে, ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটনাগুলো একটি সংগঠিত ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রয়োজনীয় প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে।

শান্তি ও সংযমের আহ্বান

সেনাবাহিনী পাহাড়ি ও বাঙালি সব রাজনৈতিক নেতাকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।

প্রচার, বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

০৭:৩১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঘটনাপ্রবাহের পটভূমি

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার ঘটনার পর রবিবার রাতে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল আরোহী মামুন হত্যার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। এরপর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন।

ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে।

ধর্ষণ মামলা ও নতুন অস্থিরতা

২০২৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ইউপিডিএফ (মূল) কর্মী শায়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়।

এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ সংশ্লিষ্ট সংগঠন পিসিপির নেতা উখানু মারমা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর জেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। একই সময়ে দেশি-বিদেশি ব্লগারসহ কয়েকজন পাহাড়ি ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ান।

সহিংসতার বিস্তার

২৬ সেপ্টেম্বর উখানু মারমার নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে সেনা টহলদলের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়া হয়, এতে তিন সেনাসদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ধৈর্য, সংযম ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, শক্তি প্রয়োগ করেনি।

২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ পুনরায় হামলা চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী তারা সাধারণ মানুষ ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, গুলি, ভাঙচুর এবং সড়ক অবরোধ করে। এতে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায় এবং ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতভর সমন্বিতভাবে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনী দাবি করে, এর ফলে “অবশ্যম্ভাবী দাঙ্গা” প্রতিরোধ সম্ভব হয়।

২৮ সেপ্টেম্বরের সংঘর্ষ

২৮ সেপ্টেম্বর সকালে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ কর্মীরা ১৪৪ ধারা অমান্য করে সড়ক অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মী ও স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলে তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, ইট ও গুলতি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিন কর্মকর্তা সহ ১০ সেনাসদস্য আহত হন।

একই সময়ে রামগড়ে বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর হয় এবং কয়েকজন সদস্য আহত হন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইউপিডিএফ (মূল) সদস্যরা পাহাড় থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে সেনা সদস্য, পাহাড়ি ও বাঙালি নাগরিক আহত হন।

সেনাবাহিনী পাল্টা অভিযানে গেলে ইউপিডিএফ সদস্যরা রামসু বাজার এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুরের পর অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সেনাবাহিনীর অভিযোগ ও পদক্ষেপ

সেনাবাহিনীর দাবি, ইউপিডিএফ সম্প্রতি নারী ও স্কুলশিক্ষার্থীদের জোর করে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি বাইরের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে যুক্ত করার চেষ্টাও করছে।

সেদিন (২৮ সেপ্টেম্বর) কাপ্তাইয়ে বিজিবির চেকপোস্টে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেনাবাহিনী বলছে, এটি ইউপিডিএফের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আরেকটি প্রমাণ।

তাদের মতে, ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটনাগুলো একটি সংগঠিত ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রয়োজনীয় প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে।

শান্তি ও সংযমের আহ্বান

সেনাবাহিনী পাহাড়ি ও বাঙালি সব রাজনৈতিক নেতাকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।

প্রচার, বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।