০৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ৫ সশস্ত্র বাহিনী দিবস শুক্রবার পালিত হবে ডাকসু নেত্রীর বাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ স্টক মার্কেট সপ্তাহ শেষ করল নিম্নমুখী লেনদেনে বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশ আরও চারজনের মৃত্যুতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে সুযোগ দেব না: সিএসসি-কে ঢাকার বার্তা স্কুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের নিয়ম: শিক্ষার্থীদের জানা উচিত করণীয় ও বর্জনীয় অনুপ কুমার বিশ্বাস, নবমিতা সরকার ও কাজী আরিফুর রহমান–এই তিন সহকারী কমিশনারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে

খাগড়াছড়ি ধর্ষণ ও গুইমারা গুলি: ৩৬ নাগরিকের বিবৃতি

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় অষ্টম শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীর ধর্ষণ এবং পরে সেই ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ চলাকালে গুইমারায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে তিনজন পাহাড়ি আদিবাসী নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তির জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণের দাবি তুলেছেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কী ঘটেছে

  • • ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাত ৯টা: প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। রাত ১১টার দিকে তাঁকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়।
  • • গ্রেফতার: এ ঘটনায় শয়ন শীল নামে একজন গ্রেফতার হলেও, পরিবারের অভিযোগ—অভিযুক্ত অন্য দুই সেটলার বাঙালিকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি।
  • • ২৬২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে অবরোধ পালন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পূর্বসতর্কতা ছাড়াই গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ।
  • • সহিংসতা: গুলির পর ২০–২৫ জন অ-পাহাড়ি ব্যক্তি ও মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা দোকান, বসতঘর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—সেটলার বাঙালিরাও সেখানে ছিল এবং জালিয়াপাড়া ও মুসলিমপাড়া দিক থেকে আসা লোকজন হামলায় অংশ নেয়।
  • • হতাহত: নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন পাহাড়ি আদিবাসী নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হন—এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত।

পূর্বাপর প্রেক্ষাপট

  • • ২৭ জুন ২০২৫: খাগড়াছড়িতে আরেকজন আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনার বিচার এখনও হয়নি।
  • • গত বছরের সেপ্টেম্বর: মোটরসাইকেল চুরি ও এক সেটলার নিহত হওয়ার ঘটনায় সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিনজন আদিবাসী নিহত হন; সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ।
  • • নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ: এসব ঘটনায় একটি অভিন্ন চিত্র দেখা যায়—আদিবাসী বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, আর গুলিতে প্রাণহানি হয় মূলত আদিবাসীদের। সেটলার জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি থেকে যায়। তাঁরা এটিকে রাষ্ট্রের ‘একচোখো’ নীতির ফল বলে মনে করেন।
  • • নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে না গিয়ে কেবল দুঃখ প্রকাশ ও শান্ত থাকার আহ্বানে সীমাবদ্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

নাগরিকদের সমালোচনা ও বিশ্লেষণ

বিবৃতিদাতারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আদিবাসীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের মুখে পড়েছেন; মৌলিক নিরাপত্তা ও মানবিক আচরণ থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ন্যায়বিচার না পাওয়াই যেন তাঁদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য ও বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

খাগড়াছড়িতে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় মামলা নিতে গড়িমসি! –  আওয়ার নিউজ

সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি

১) খাগড়াছড়ির কিশোরী ধর্ষণ মামলার সব অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২) গুইমারায় তিন আদিবাসী হত্যাসহ সব ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে; ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩) নিহত তিন পরিবারের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; পাশাপাশি লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও দোকানের মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) পাহাড়ে শান্তি ও সমঝোতার পরিবেশ বজায় রাখতে পাহাড়ি-বিরোধী কোনো বহিরাগতকে রাষ্ট্রীয় এজেন্সির প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য মদদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৫) সাম্প্রতিক হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে সেনাবাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আদিবাসী প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্বাক্ষরকারী ৩৬ জন

১) আনু মোহাম্মদ—অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২) সুলতানা কামাল—মানবাধিকার কর্মী; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
৩) খুশি কবির—সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
৪) ড. ইফতেখারুজ্জামান—নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
৫) রাশেদা কে. চৌধুরী—নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৬) জেড আই খান পান্না—সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; চেয়ারপার্সন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৭) ব্যারিস্টার সারা হোসেন—অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
৮) শিরীন পারভীন হক—সদস্য, নারী পক্ষ
৯) শামসুল হুদা—নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
১০) পাভেল পার্থ—লেখক ও গবেষক
১১) রেহেনুমা আহমেদ—লেখক ও গবেষক
১২) সুব্রত চৌধুরী—সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
১৩) তাসলিমা ইসলাম—প্রধান নির্বাহী, বেলা
১৪) মো. নুর খান—মানবাধিকার কর্মী
১৫) ড. শাহনাজ হুদা—অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬) ড. সুমাইয়া খায়ের—অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭) ড. সামিনা লুৎফা—অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

খাগড়াছড়ির গুইমারায় নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে
১৮) ড. স্বপন আদনান—ভিজিটিং প্রফেসর, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স
১৯) তাসনীম সিরাজ মাহমুদ—সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০) ড. জোবাইদা নাসরীন—অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১) ড. খাইরুল চৌধুরী—অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২) ড. ফিরদৌস আজীম—অধ্যাপক, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৩) নোভা আহমেদ—অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৪) জাকির হোসেন—প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
২৫) ড. ফস্টিনা পেরেইরা—আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৬) মিনহাজুল হক চৌধুরী—আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৭) ড. সাদাব নুর—গবেষক, লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন
২৮) রেজাউল করিম চৌধুরী—নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
২৯) অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান—প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)
৩০) মনীন্দ্র কুমার নাথ—ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
৩১) রোজীনা বেগম—গবেষক ও অধিকারকর্মী
৩২) মাইদুল ইসলাম—সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩) আমিরুল রসুল—মানবাধিকার কর্মী
৩৪) সাঈদ আহমেদ—মানবাধিকার কর্মী
৩৫) হানা শামস আহমেদ—গবেষক ও আদিবাসী অধিকারকর্মী
৩৬) অরূপ রাহী—সাংস্কৃতিক কর্মী

ধর্ষণের বিচার, গুলির ঘটনার নিরপেক্ষ অনুসন্ধান, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ—এই তিনটি তাৎক্ষণিক ধাপের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পক্ষের সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। স্বাক্ষরকারীরা মনে করছেন, এর জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ উদ্যোগ ও জবাবদিহিমূলক রোডম্যাপ জরুরি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকায় সবজি–প্রোটিনে আগুন-দাম: নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই

খাগড়াছড়ি ধর্ষণ ও গুইমারা গুলি: ৩৬ নাগরিকের বিবৃতি

০৬:৪৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় অষ্টম শ্রেণির এক আদিবাসী ছাত্রীর ধর্ষণ এবং পরে সেই ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ চলাকালে গুইমারায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে তিনজন পাহাড়ি আদিবাসী নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তির জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণের দাবি তুলেছেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কী ঘটেছে

  • • ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাত ৯টা: প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। রাত ১১টার দিকে তাঁকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়।
  • • গ্রেফতার: এ ঘটনায় শয়ন শীল নামে একজন গ্রেফতার হলেও, পরিবারের অভিযোগ—অভিযুক্ত অন্য দুই সেটলার বাঙালিকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি।
  • • ২৬২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে অবরোধ পালন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পূর্বসতর্কতা ছাড়াই গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ।
  • • সহিংসতা: গুলির পর ২০–২৫ জন অ-পাহাড়ি ব্যক্তি ও মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা দোকান, বসতঘর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—সেটলার বাঙালিরাও সেখানে ছিল এবং জালিয়াপাড়া ও মুসলিমপাড়া দিক থেকে আসা লোকজন হামলায় অংশ নেয়।
  • • হতাহত: নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন পাহাড়ি আদিবাসী নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হন—এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত।

পূর্বাপর প্রেক্ষাপট

  • • ২৭ জুন ২০২৫: খাগড়াছড়িতে আরেকজন আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনার বিচার এখনও হয়নি।
  • • গত বছরের সেপ্টেম্বর: মোটরসাইকেল চুরি ও এক সেটলার নিহত হওয়ার ঘটনায় সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিনজন আদিবাসী নিহত হন; সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ।
  • • নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ: এসব ঘটনায় একটি অভিন্ন চিত্র দেখা যায়—আদিবাসী বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, আর গুলিতে প্রাণহানি হয় মূলত আদিবাসীদের। সেটলার জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি থেকে যায়। তাঁরা এটিকে রাষ্ট্রের ‘একচোখো’ নীতির ফল বলে মনে করেন।
  • • নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে না গিয়ে কেবল দুঃখ প্রকাশ ও শান্ত থাকার আহ্বানে সীমাবদ্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

নাগরিকদের সমালোচনা ও বিশ্লেষণ

বিবৃতিদাতারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আদিবাসীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের মুখে পড়েছেন; মৌলিক নিরাপত্তা ও মানবিক আচরণ থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ন্যায়বিচার না পাওয়াই যেন তাঁদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য ও বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

খাগড়াছড়িতে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ঘটনায় মামলা নিতে গড়িমসি! –  আওয়ার নিউজ

সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি

১) খাগড়াছড়ির কিশোরী ধর্ষণ মামলার সব অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২) গুইমারায় তিন আদিবাসী হত্যাসহ সব ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে; ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩) নিহত তিন পরিবারের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; পাশাপাশি লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও দোকানের মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) পাহাড়ে শান্তি ও সমঝোতার পরিবেশ বজায় রাখতে পাহাড়ি-বিরোধী কোনো বহিরাগতকে রাষ্ট্রীয় এজেন্সির প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য মদদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৫) সাম্প্রতিক হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে সেনাবাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আদিবাসী প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্বাক্ষরকারী ৩৬ জন

১) আনু মোহাম্মদ—অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২) সুলতানা কামাল—মানবাধিকার কর্মী; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
৩) খুশি কবির—সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
৪) ড. ইফতেখারুজ্জামান—নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
৫) রাশেদা কে. চৌধুরী—নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৬) জেড আই খান পান্না—সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; চেয়ারপার্সন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৭) ব্যারিস্টার সারা হোসেন—অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
৮) শিরীন পারভীন হক—সদস্য, নারী পক্ষ
৯) শামসুল হুদা—নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
১০) পাভেল পার্থ—লেখক ও গবেষক
১১) রেহেনুমা আহমেদ—লেখক ও গবেষক
১২) সুব্রত চৌধুরী—সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
১৩) তাসলিমা ইসলাম—প্রধান নির্বাহী, বেলা
১৪) মো. নুর খান—মানবাধিকার কর্মী
১৫) ড. শাহনাজ হুদা—অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬) ড. সুমাইয়া খায়ের—অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭) ড. সামিনা লুৎফা—অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

খাগড়াছড়ির গুইমারায় নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে
১৮) ড. স্বপন আদনান—ভিজিটিং প্রফেসর, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স
১৯) তাসনীম সিরাজ মাহমুদ—সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০) ড. জোবাইদা নাসরীন—অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১) ড. খাইরুল চৌধুরী—অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২) ড. ফিরদৌস আজীম—অধ্যাপক, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৩) নোভা আহমেদ—অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৪) জাকির হোসেন—প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
২৫) ড. ফস্টিনা পেরেইরা—আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৬) মিনহাজুল হক চৌধুরী—আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৭) ড. সাদাব নুর—গবেষক, লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন
২৮) রেজাউল করিম চৌধুরী—নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
২৯) অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান—প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)
৩০) মনীন্দ্র কুমার নাথ—ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
৩১) রোজীনা বেগম—গবেষক ও অধিকারকর্মী
৩২) মাইদুল ইসলাম—সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩) আমিরুল রসুল—মানবাধিকার কর্মী
৩৪) সাঈদ আহমেদ—মানবাধিকার কর্মী
৩৫) হানা শামস আহমেদ—গবেষক ও আদিবাসী অধিকারকর্মী
৩৬) অরূপ রাহী—সাংস্কৃতিক কর্মী

ধর্ষণের বিচার, গুলির ঘটনার নিরপেক্ষ অনুসন্ধান, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ—এই তিনটি তাৎক্ষণিক ধাপের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পক্ষের সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই শান্তি সম্ভব নয়। স্বাক্ষরকারীরা মনে করছেন, এর জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ উদ্যোগ ও জবাবদিহিমূলক রোডম্যাপ জরুরি।