আউকাস চুক্তি বহাল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি আউকাস (AUKUS) নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদি পর্যালোচনা শেষের পথে। এই সিদ্ধান্তের ফলে পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ২০৩২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াকে অন্তত তিনটি ভার্জিনিয়া-শ্রেণির পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন বিক্রি করবে।
এই চুক্তি প্রথম করা হয়েছিল ২০২১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন তা তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা যাচাই করতে পর্যালোচনায় আনে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি এলব্রিজ কোলবি এ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ২০ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সফরের আগে এই পর্যালোচনা শেষ হওয়ার কথা।
আশঙ্কা ও বিতর্ক
প্রধান উদ্বেগ ছিল মার্কিন শিল্প ঘাঁটির সক্ষমতা। যুক্তরাষ্ট্র নিজের নৌবাহিনীর জন্য পর্যাপ্ত সাবমেরিন উৎপাদনেই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আবার অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন সরবরাহ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এছাড়া পেন্টাগনের শঙ্কা — যদি তাইওয়ানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সংঘাত দেখা দেয়, অস্ট্রেলিয়া আদৌ এসব সাবমেরিন মোতায়েন করতে রাজি হবে কি না।
আউকাসের দুই স্তম্ভ
১. প্রথম স্তম্ভ: তিন দশকের পরিকল্পনা, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়ার পুরনো কোলিন্স-শ্রেণির সাবমেরিন বদলে দেওয়া হবে পারমাণবিকচালিত নতুন সাবমেরিনে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তা থাকবে।
২. দ্বিতীয় স্তম্ভ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সামুদ্রিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ইত্যাদির যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন। এই অংশে জাপানকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াকে ৩–৫টি ভার্জিনিয়া-শ্রেণির সাবমেরিন বিক্রি করবে। এরপর যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে ব্রিটিশ নকশার ওপর ভিত্তি করে আউকাস-শ্রেণির সাবমেরিন তৈরি করবে—প্রথমে যুক্তরাজ্যে ২০৩০-এর দশকের শেষভাগে, পরে অস্ট্রেলিয়ায় ২০৪০-এর দশকের শুরুতে।
বিশেষজ্ঞদের মত
এলব্রিজ কোলবি আগে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ভার্জিনিয়া-শ্রেণির সাবমেরিন হলো তাইওয়ান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। তাই এসব সাবমেরিন অন্য দেশে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ক্ষমতায় ঘাটতি আনতে পারে।
তবে তিনি এটাও বলেন, যদি মিত্ররা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, তাহলে আউকাস সফল হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের এলিজাবেথ বুচানান সতর্ক করে বলেছেন, ওয়াশিংটনের কাছে আউকাস চালিয়ে যাওয়া রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হলেও এর মানে এই নয় যে অস্ট্রেলিয়া সময়মতো সাবমেরিন পাবে। তিনি আশঙ্কা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপি’র ৫ শতাংশ ব্যয় করতে চাপ দিতে পারে, যা আলবানিজের জন্য রাজনৈতিকভাবে কঠিন হবে।
বিনিয়োগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাবমেরিন শিল্পে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে উৎপাদন হার বাড়ানোর চেষ্টা হবে।
মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান ড্যারিল কডল বলেছেন, আউকাসের চাহিদা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে অন্তত ২.২ থেকে ২.৩টি সাবমেরিন তৈরি করতে হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ।
আমেরিকা ফার্স্ট নীতির প্রতিফলন
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, আউকাস আসলে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিরই প্রতিফলন। কারণ অস্ট্রেলিয়া বিলিয়ন ডলার অগ্রিম দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি হোস্ট করছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা নিচ্ছে।
এএসপিআই ইউএসএ-এর গ্রেগ ব্রাউন বলেছেন, ট্রাম্প ও কোলবির দৃষ্টিতে এটিই হলো সঠিক জোটনীতি—যেখানে মিত্ররা নিজেদের আরও কার্যকর ও স্বনির্ভর করে তোলে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রকেও শক্তিশালী করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পর্যালোচনা শেষ হলেও আউকাসের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নয়। শিল্প সক্ষমতা, রাজনৈতিক চাপ ও আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা এই প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে রাখবে। তবু অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশলে এটি বড় পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া জোটকে আরও দৃঢ় করার বার্তা বহন করে।