০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত আলিয়া ভাটের ‘এক্সপ্যানশন ইরা’: ঘরোয়া সুপারস্টার থেকে গ্লোবাল, মাল্টি-হাইফেনেট ক্যারিয়ার প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১০) সিউলে ২১তম পারফর্মিং আর্টস মার্কেট: বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচন ড্যাশবোর্ডে ভরসা করছে বোরবন—ডেটা ও অটোমেশনে ‘ক্রাফট’ বদলাবে কি? আমাজন এমজিএমে ডোয়েন জনসন–বেনি সাফদির ‘Lizard Music’ চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব জাপানে ভিসা ফি বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমান হবে হার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে ভারত হয়ে উঠছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিকল্প আউটসোর্সিং কেন্দ্র বৈশ্বিক মানবিক সহায়তায় নতুন ভূমিকা নিচ্ছে বেইজিং, তবে ‘গণতান্ত্রিক বিকল্প’ও দরকার

সৌদির গেমিং সাম্রাজ্যে নতুন মাইলফলক

সারসংক্ষেপ

  • সিলভার লেক ও কুশনার মিলে ৫৫ বিলিয়ন ডলারে ইএকে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা
  • সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF) ইএ’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার
  • কুশনারের তহবিল অ্যাফিনিটি পার্টনার্স ৫% মালিকানা পেয়েছে
  • এই চুক্তি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অংশ, অর্থনীতিকে বহুমুখী করার কৌশল

সিলভার লেকের বহুদিনের স্বপ্ন

বিখ্যাত ভিডিও গেম কোম্পানি ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ), যা “ব্যাটলফিল্ড” ও “ম্যাডেন এনএফএল”-এর মতো জনপ্রিয় গেমের জন্য পরিচিত, বহুদিন ধরেই সিলভার লেকের নজরে ছিল। এ বছরের বসন্তে এক বৈঠকে সিলভার লেকের সহ-সিইও এগন ডারবান ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার প্রাথমিকভাবে আলোচনা শুরু করেন। এখান থেকেই গড়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিভারেজ্ড বাইআউটের পরিকল্পনা।

From Riyadh to Silicon Valley: How EA became the jewel of Saudi Arabia's  gaming vision | Reuters

সৌদি অর্থে বিশ্ব রেকর্ড চুক্তি

সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (PIF)-এর সহায়তায় ৫৫ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি সোমবার ঘোষণা করা হয়। এতে সিলভার লেক তাদের গেমস, ক্রীড়া ও বিনোদন খাতকে শক্তিশালী করবে, আর সৌদি ফান্ড দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় সম্পদ ধরে রাখার সুযোগ পাবে।

এই চুক্তির ফলে PIF ইএ’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার হয়ে যায় এবং কুশনারের ব্যক্তিগত প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড অ্যাফিনিটি পার্টনার্স পায় ৫% মালিকানা। কুশনার বলেছেন, তিনি ছোটবেলা থেকে ইএ’র গেমস খেলেছেন এবং এখনো সন্তানদের সঙ্গে খেলেন।

সৌদি ভিশন ২০৩০ এবং গেমিং স্বপ্ন

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বহুবার উল্লেখ করেছেন, তিনি বন্ধু ও সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও গেম খেলতে পছন্দ করেন। তাঁর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরবকে বৈশ্বিক গেমস ও ই-স্পোর্টসের কেন্দ্র বানানো।

তিনি আগের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতি বছর আমাদের ১৫ থেকে ২৫% মুনাফা হয়, তাই এটা হাতছাড়া করা যাবে না।”

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুস্ট ভ্যান ড্রিউনেন বলেন, “এটা শুধু একটি ব্যবসায়িক লেনদেন নয়। সৌদি আরব একসাথে সময়, প্রতিভা ও সাংস্কৃতিক প্রভাব কিনছে।” তাঁর মতে, ইএ’র মতো একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডকে ভিশন ২০৩০-এর অগ্রভাগে রাখা হচ্ছে, যেখানে সৌদি সরকার ইতিমধ্যে গেমসের জন্য ৩৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।

From Riyadh to Silicon Valley: How EA became the jewel of Saudi Arabia's  gaming vision - The Economic Times

সৌদির বিনিয়োগ কৌশল

প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ তহবিল PIF সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিডিও গেম প্রকাশকদের মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড, নিনটেন্ডোতে প্রায় ৪% এবং টেক-টু ইন্টারঅ্যাকটিভে প্রায় ৬% শেয়ার। লক্ষ্য হলো তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বহুমুখী করা।

ইএ’র জনপ্রিয় গেম ফ্র্যাঞ্চাইজ এবং ব্র্যান্ড, পাশাপাশি সৌদিতে গেম ডেভেলপমেন্ট সক্ষমতা আনার সুযোগ, ফান্ডকে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করেছে।

ই-স্পোর্টস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সৌদি ই-স্পোর্টস ফাউন্ডেশন আগামী বছর জাতীয় দলের জন্য নতুন টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে, যেখানে ইএ অংশীদার হিসেবে থাকবে। এছাড়া রিয়াদের “কিদ্দিয়া” মেগা প্রকল্পের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ১ কোটি দর্শক আকর্ষণ করা। সেখানে ই-স্পোর্টস ও গেমিং জেলা গড়ে তোলা হচ্ছে, যা বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে এবং ৩০টি শীর্ষ গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে লালন করবে।

Video game company behind "The Sims" to be acquired in $55 billion deal

আর্থিক কাঠামো

চুক্তির অংশ হিসেবে “কনসোর্টিয়াম” ৩৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, যার মধ্যে PIF-এর বিদ্যমান শেয়ার অন্তর্ভুক্ত। বাকি ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দিয়েছে জেপি মরগান। ইএ’র শেয়ারহোল্ডাররা প্রতি শেয়ারে নগদ ২১০ ডলার পাবেন, যা ঘোষণার আগের দামের তুলনায় ২৫% বেশি।

তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, আসল আয়-ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। তবুও নতুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা কম বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

নিয়ন্ত্রক অনুমোদন ও সম্ভাবনা

চুক্তি বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সৌদি সম্পর্কের বর্তমান ইতিবাচক অবস্থার কারণে এটি বড় বাধার মুখে পড়বে না। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

এই চুক্তি শুধু একটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নয়, বরং সৌদি আরবের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে দেশটি গেমিং ও ই-স্পোর্টসকে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ইএ এখন সেই উচ্চাভিলাষী যাত্রার রত্নে পরিণত হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত

সৌদির গেমিং সাম্রাজ্যে নতুন মাইলফলক

০৬:১৭:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • সিলভার লেক ও কুশনার মিলে ৫৫ বিলিয়ন ডলারে ইএকে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা
  • সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF) ইএ’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার
  • কুশনারের তহবিল অ্যাফিনিটি পার্টনার্স ৫% মালিকানা পেয়েছে
  • এই চুক্তি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অংশ, অর্থনীতিকে বহুমুখী করার কৌশল

সিলভার লেকের বহুদিনের স্বপ্ন

বিখ্যাত ভিডিও গেম কোম্পানি ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ), যা “ব্যাটলফিল্ড” ও “ম্যাডেন এনএফএল”-এর মতো জনপ্রিয় গেমের জন্য পরিচিত, বহুদিন ধরেই সিলভার লেকের নজরে ছিল। এ বছরের বসন্তে এক বৈঠকে সিলভার লেকের সহ-সিইও এগন ডারবান ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার প্রাথমিকভাবে আলোচনা শুরু করেন। এখান থেকেই গড়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিভারেজ্ড বাইআউটের পরিকল্পনা।

From Riyadh to Silicon Valley: How EA became the jewel of Saudi Arabia's  gaming vision | Reuters

সৌদি অর্থে বিশ্ব রেকর্ড চুক্তি

সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (PIF)-এর সহায়তায় ৫৫ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি সোমবার ঘোষণা করা হয়। এতে সিলভার লেক তাদের গেমস, ক্রীড়া ও বিনোদন খাতকে শক্তিশালী করবে, আর সৌদি ফান্ড দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় সম্পদ ধরে রাখার সুযোগ পাবে।

এই চুক্তির ফলে PIF ইএ’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার হয়ে যায় এবং কুশনারের ব্যক্তিগত প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড অ্যাফিনিটি পার্টনার্স পায় ৫% মালিকানা। কুশনার বলেছেন, তিনি ছোটবেলা থেকে ইএ’র গেমস খেলেছেন এবং এখনো সন্তানদের সঙ্গে খেলেন।

সৌদি ভিশন ২০৩০ এবং গেমিং স্বপ্ন

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বহুবার উল্লেখ করেছেন, তিনি বন্ধু ও সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও গেম খেলতে পছন্দ করেন। তাঁর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরবকে বৈশ্বিক গেমস ও ই-স্পোর্টসের কেন্দ্র বানানো।

তিনি আগের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতি বছর আমাদের ১৫ থেকে ২৫% মুনাফা হয়, তাই এটা হাতছাড়া করা যাবে না।”

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুস্ট ভ্যান ড্রিউনেন বলেন, “এটা শুধু একটি ব্যবসায়িক লেনদেন নয়। সৌদি আরব একসাথে সময়, প্রতিভা ও সাংস্কৃতিক প্রভাব কিনছে।” তাঁর মতে, ইএ’র মতো একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডকে ভিশন ২০৩০-এর অগ্রভাগে রাখা হচ্ছে, যেখানে সৌদি সরকার ইতিমধ্যে গেমসের জন্য ৩৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।

From Riyadh to Silicon Valley: How EA became the jewel of Saudi Arabia's  gaming vision - The Economic Times

সৌদির বিনিয়োগ কৌশল

প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ তহবিল PIF সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিডিও গেম প্রকাশকদের মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড, নিনটেন্ডোতে প্রায় ৪% এবং টেক-টু ইন্টারঅ্যাকটিভে প্রায় ৬% শেয়ার। লক্ষ্য হলো তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বহুমুখী করা।

ইএ’র জনপ্রিয় গেম ফ্র্যাঞ্চাইজ এবং ব্র্যান্ড, পাশাপাশি সৌদিতে গেম ডেভেলপমেন্ট সক্ষমতা আনার সুযোগ, ফান্ডকে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করেছে।

ই-স্পোর্টস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সৌদি ই-স্পোর্টস ফাউন্ডেশন আগামী বছর জাতীয় দলের জন্য নতুন টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে, যেখানে ইএ অংশীদার হিসেবে থাকবে। এছাড়া রিয়াদের “কিদ্দিয়া” মেগা প্রকল্পের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ১ কোটি দর্শক আকর্ষণ করা। সেখানে ই-স্পোর্টস ও গেমিং জেলা গড়ে তোলা হচ্ছে, যা বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে এবং ৩০টি শীর্ষ গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে লালন করবে।

Video game company behind "The Sims" to be acquired in $55 billion deal

আর্থিক কাঠামো

চুক্তির অংশ হিসেবে “কনসোর্টিয়াম” ৩৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, যার মধ্যে PIF-এর বিদ্যমান শেয়ার অন্তর্ভুক্ত। বাকি ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দিয়েছে জেপি মরগান। ইএ’র শেয়ারহোল্ডাররা প্রতি শেয়ারে নগদ ২১০ ডলার পাবেন, যা ঘোষণার আগের দামের তুলনায় ২৫% বেশি।

তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, আসল আয়-ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। তবুও নতুন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা কম বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

নিয়ন্ত্রক অনুমোদন ও সম্ভাবনা

চুক্তি বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সৌদি সম্পর্কের বর্তমান ইতিবাচক অবস্থার কারণে এটি বড় বাধার মুখে পড়বে না। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

এই চুক্তি শুধু একটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নয়, বরং সৌদি আরবের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে দেশটি গেমিং ও ই-স্পোর্টসকে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। ইএ এখন সেই উচ্চাভিলাষী যাত্রার রত্নে পরিণত হয়েছে।