গাজায় সামরিক অভিযান ও বাস্তুচ্যুতি
সোমবার গাজা শহর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের পর ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক গাজা শহরের কেন্দ্রের দিকে আরও এগিয়ে গেছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণমুখী হয়েছে। নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে নিহত ও আহতদের খোঁজে মানুষ মরিয়া হয়ে ঘুরছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠকের আগে উত্তেজনা
এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধ শেষ করতে তিনি এবার একটি “বিশেষ উদ্যোগ” নেবেন।
ওয়াশিংটন গত সপ্তাহে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর কাছে ২১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির দাবি রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে।
ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সন্দেহ
যদিও নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন, ইসরায়েলি মহলে এই প্রস্তাব নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলোও কিছু সংশোধন চাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই কূটনীতিক জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি বিস্তারিত কোনো রূপরেখা নয়, বরং সাধারণ উদ্দেশ্যগুলোর তালিকা মাত্র। ইসরায়েল একাধিক বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে, যেমন—যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা, হামাস নেতাদের বহিষ্কার এবং সার্বিক নিরাপত্তা দায়িত্ব নির্ধারণ।
মধ্যস্থতাকারী মিশরও উদ্বিগ্ন যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজার প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কায়রোর শঙ্কা, জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েল কি সত্যিই চুক্তির শর্ত মানবে?
যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা
ভূমিতে এদিকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ইসরায়েল সেপ্টেম্বর জুড়ে গাজা শহরে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালিয়েছে। নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, হামাসকে শেষ ঘাঁটি থেকে নির্মূল করাই তার উদ্দেশ্য।
দুই সন্তানের মা হুদা, যিনি দেইর আল-বালাহতে আশ্রয় নিয়েছেন, বলেন, “ট্রাম্পের নতুন শান্তি পরিকল্পনা আবারও হতাশ করবে। আগেও তার প্রতিশ্রুতিগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।”
অন্যদিকে আবু আবদাল্লাহ, যিনি উপকূলে প্রায় দুই ডজন স্বজন নিয়ে তাঁবুতে আছেন, জানালেন তারা হোয়াইট হাউস বৈঠকের ফলাফলের পর দক্ষিণে পালানোর সিদ্ধান্ত নেবেন। তার ভাষায়, “এখন হয় শান্তি আসবে, নতুবা গাজা শহর রাফাহের মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।”
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গাজা শহরে অভিযানের ফলে মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। এতে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতাও বাড়ছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক সোমবার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে কয়েকশো মিটার দূরত্বে পৌঁছে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও সেখানে শত শত রোগী চিকিৎসাধীন। কাছাকাছি আল-হেলো হাসপাতাল, যেখানে ৯০ জন রোগী ও ইনকিউবেটরে ১২ শিশু রয়েছে, সেটিও ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং রাতভর গোলাবর্ষণ হয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, সব জিম্মি মুক্তি ও হামাসের স্থায়ীভাবে অস্ত্র সমর্পণের আগে তারা যুদ্ধ থামাবে না। অন্যদিকে হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্তে তারা জিম্মি ছাড়তে রাজি, কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের লড়াই চলতে থাকলে অস্ত্র ত্যাগ করবে না। তারা আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো শান্তি পরিকল্পনা তাদের কাছে এখনো উপস্থাপন করা হয়নি।