০৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
জাপান টাইমসের মতামতঃ ঘরে যেটিকে ‘বিদ্রোহ’ বলা হয়, বাইরে সেটিকে বলা হয় ‘বিপ্লব’ খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ক্ষোভ, ‘কান্না ছাড়া উপায় নাই’ বলছেন বাবা সাইক্লোন ‘শক্তি’ এখন কোথায়? রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩৫) সানা তাকিৎচি: জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কেন প্রতিটি স্কুলের জন্য একটি এআই ল্যাব প্রয়োজন ধর্ষণের প্রতিবাদ, আদিবাসীর প্রাণ আর পাহাড়ের কান্না যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন হুমকিতে: অর্থনীতির সামনে বড় ঝুঁকি যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা তীব্রতর: হংকং কনসুল জেনারেলকে ঘিরে নতুন দ্বন্দ্ব যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি বদলাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের মানচিত্র

স্বাস্থ্যসেবায় সংকট: প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্য বিয়ানীবাজারে একজন মাত্র ডাক্তার

বিয়ানীবাজারে চিকিৎসার ভয়াবহ ঘাটতি

সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল — ৫০ শয্যার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কার্যত একজন চিকিৎসককেই পুরো জনসংখ্যার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

অনুমোদিত পদ শূন্য, দায়িত্বে মাত্র একজন

সরকারি নথি অনুযায়ী, এখানে মোট ২৭ জন চিকিৎসকের পদ অনুমোদিত। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্বে আছেন মাত্র পাঁচজন। এদের মধ্যে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার এবং তিনজন কনসালট্যান্ট।

তবে বাস্তবে কনসালট্যান্টরা মূলত সার্জারির কাজে যুক্ত থাকেন এবং নিয়মিত রোগী দেখেন না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় রোগী দেখার সুযোগ পান না। ফলে সব চাপ এসে পড়ে একজন ডাক্তারের ওপর।

দীর্ঘদিন ধরে সংকট

গত প্রায় তিন বছর ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। অনেকে যোগ দিলেও অল্প সময়ের মধ্যে অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আসছে না।

অনুপস্থিত ডাক্তারদের তালিকা

হাসপাতালের নথি বলছে, কয়েকজন ডাক্তার বছরের পর বছর দায়িত্বে নেই। যেমন — একজন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ২০১০ সালে যোগ দিলেও ২০১১ সাল থেকে আজ প্রায় ১৪ বছর অনুপস্থিত, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই।

একইভাবে রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার ২০২৩ সালের মে মাস থেকে নেই, ইনডোর মেডিকেল অফিসার জুলাই ২০২৩ থেকে অনুপস্থিত, আরেকজন আগস্ট ২০২৩ থেকে নেই। আরও একজন চিকিৎসক গত তিন বছর ধরে কাজে যোগ দেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে গেছেন।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান জানান, অনেক চিকিৎসক অনুপস্থিত, বদলি কিংবা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হয়েছেন। বিষয়টি নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিনও বলেছেন, বারবার চিঠি দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। “আমরা নিয়মিত সুপারিশ পাঠাচ্ছি,” তিনি বলেন।

ডিসির কঠোর সতর্কতা

সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলম, সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শন করে সেবা ভেঙে পড়ার বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এভাবে হাসপাতাল চলতে দেওয়া হবে না। “গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মানুষের আশঙ্কা

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিয়ানীবাজারের স্বাস্থ্যসেবা অচল অবস্থায় থেকে যাবে। এতে হাজারো মানুষ সময়মতো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

জাপান টাইমসের মতামতঃ ঘরে যেটিকে ‘বিদ্রোহ’ বলা হয়, বাইরে সেটিকে বলা হয় ‘বিপ্লব’

স্বাস্থ্যসেবায় সংকট: প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্য বিয়ানীবাজারে একজন মাত্র ডাক্তার

০১:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

বিয়ানীবাজারে চিকিৎসার ভয়াবহ ঘাটতি

সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল — ৫০ শয্যার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কার্যত একজন চিকিৎসককেই পুরো জনসংখ্যার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

অনুমোদিত পদ শূন্য, দায়িত্বে মাত্র একজন

সরকারি নথি অনুযায়ী, এখানে মোট ২৭ জন চিকিৎসকের পদ অনুমোদিত। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্বে আছেন মাত্র পাঁচজন। এদের মধ্যে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার এবং তিনজন কনসালট্যান্ট।

তবে বাস্তবে কনসালট্যান্টরা মূলত সার্জারির কাজে যুক্ত থাকেন এবং নিয়মিত রোগী দেখেন না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় রোগী দেখার সুযোগ পান না। ফলে সব চাপ এসে পড়ে একজন ডাক্তারের ওপর।

দীর্ঘদিন ধরে সংকট

গত প্রায় তিন বছর ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। অনেকে যোগ দিলেও অল্প সময়ের মধ্যে অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আসছে না।

অনুপস্থিত ডাক্তারদের তালিকা

হাসপাতালের নথি বলছে, কয়েকজন ডাক্তার বছরের পর বছর দায়িত্বে নেই। যেমন — একজন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ২০১০ সালে যোগ দিলেও ২০১১ সাল থেকে আজ প্রায় ১৪ বছর অনুপস্থিত, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই।

একইভাবে রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার ২০২৩ সালের মে মাস থেকে নেই, ইনডোর মেডিকেল অফিসার জুলাই ২০২৩ থেকে অনুপস্থিত, আরেকজন আগস্ট ২০২৩ থেকে নেই। আরও একজন চিকিৎসক গত তিন বছর ধরে কাজে যোগ দেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে গেছেন।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান জানান, অনেক চিকিৎসক অনুপস্থিত, বদলি কিংবা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হয়েছেন। বিষয়টি নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিনও বলেছেন, বারবার চিঠি দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। “আমরা নিয়মিত সুপারিশ পাঠাচ্ছি,” তিনি বলেন।

ডিসির কঠোর সতর্কতা

সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলম, সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা হাসপাতাল পরিদর্শন করে সেবা ভেঙে পড়ার বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এভাবে হাসপাতাল চলতে দেওয়া হবে না। “গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মানুষের আশঙ্কা

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিয়ানীবাজারের স্বাস্থ্যসেবা অচল অবস্থায় থেকে যাবে। এতে হাজারো মানুষ সময়মতো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন।