খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগের পর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ, গুলিতে তিন আদিবাসীর মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে৷
তারপর সহিংতাকে কেন্দ্র করে পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় এক এক হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু নিহত তিনজনের ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। ফলে প্রশ্ন জাগে- তাহলে ওই তিনজনকে যারা হত্যা করলো তারা কি পার পেয়ে যাবে?
আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার সাত দিন পর যে মেডিকেল প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিশোরীর বাবার প্রশ্ন, ” আমার মেয়ের ছবিসহ ওই প্রতিবেদন কীভাবে ফাঁস হলো?” তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ডয়চে ভেলেকে এ প্রশ্ন করে বলেন, “আমি আর কথা বলতে চাই না। সাংবাদিক হোক আর যা-ই হোক। আমরা তো যা হবার হয়েছে।”
আর মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. জয়া চাকমাও বলেন, ” আমরা তো সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি । তাহলে তা সাংবাদিকদের হাতে গেল কীভাবে? এটা তো গোপন থাকার কথা। ” এ নিয়ে জেলা সিভিল সার্জনের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেছেন, “আমি তো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি সিভিল সার্জনের কাছ থেকে পেয়ে। এর বেশি আমার কিছু জানা নেই। প্রতিবেদন তো আদালত দেখবে।”
ডা. জয়া চাকমা আরো বলেন, ” আমরা শুধু শারীরিক পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিয়েছি। এটা শুধু ওই একটা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে না। এটা তো আদালত দেখবে। ফাইনাল রায় দেবে আদালত।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “আসলে এই প্রতিবেদন দ্রুত সংবাদমাধ্যমের হাতে চলে যাওয়ায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারা এটা সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছে, কী উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছে সেটা থেকে অনেক কিছু বোঝা যায়। আর শুধু এই প্রতিবেদনে সব হয় না। ধর্ষণের পর কিশোরী কী পরিস্থিতিতে ছিল, কত পরে ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে, তাকে গোসল করানো হয়েছে কিনা, তার কাপড় পরিবর্তন হয়েছে কিনা আরো অনেক বিষয় আছে।”
“আসলে এখন আর কোনো রিপোর্টের ওপরই আমাদের বিশ্বাস নেই,” বলেন তিনি।
পুলিশ যে তিনটি মামলা বৃহস্পতিবার করেছে, তারমধ্যে একটি করা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দেয়া, সরকারি কর্মচারীদের আহত করা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। এতে অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি হয়েছে হত্যার অভিযোগে। এতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা ভেঙে সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও সহিংসতার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ মামলা করেনি। পুলিশ সুপার জানান, ” তাদের পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি হচ্ছেন না। গরিব-দুঃখী মানুষ, তাই হয়তো রাজি হচ্ছেন না।”
তবে গুইমারার হেডম্যান পাড়ার নিহত আথুই মারমার বাবা হ্লাচাই মারম বৃহস্পতিবার রাতে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” মামলা করে কী হবে? আপনি বিচার করতে পারবেন? আমরা বিচার পাবো? পারবেন তাদের বিচার করতে?” এরপর তাকে আরো কয়েকটি প্রশ্ন করলে তিনি জবাব না দিয়ে চুপচাপ থাকেন।
ধর্ষণ মামলার মেডিকেল প্রতিবেদন দ্রুত সংবাদ মাধ্যমে চলে এলেও গুইমারায় তিনজন নিহতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেতে দেরি হবে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে। চিকিৎসকরা কবে দেবেন জানি না।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “যে রিপোর্ট দ্রুত পেলে সুবিধা, তারা সেটা দ্রুত পাবার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু হত্যার ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে দেরি হচ্ছে। কারণ, ওই প্রতিবেদনে স্পষ্ট হবে যে, তিন আদিবাসী কীভাবে নিহত হয়েছেন, গুলিতে নিহত হলে কাদের গুলিতে নিহত হয়েছে।”
“আর নিহতদের পরিবার মামলা না করলেও এখানে পুলিশ মামলা করতে পারে। পুলিশের দায়িত্ব হলো মামলা করা,” বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, “শেষ পর্যন্ত পরিবার মামলা না করলে পুলিশকে তো মামলা করতেই হবে।”
খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় এখনো ১৪৪ ধারা বহাল আছে। আর ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
যেভাবে ঘটনার শুরু
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে এক আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেলেও দাবি ছিল ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করার। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ তিনজনকেই গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। সেই দাবি পুরণ না হওয়ায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে খাগড়াছড়িতে অবরোধ শুরু হয়। অবরোধের মধ্যেই খাগড়াছড়ির মহাজন পাড়াসহ আরো কয়েকটি এলাকায় হামলা, লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। মাইকে গুজব ছড়ানো হয়, মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযোগ করেন, জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন চাকমা। ২৮ অক্টোবর ১৪৪ ধারার মধ্যে গুইমারায় অবরোধ চলাকালে প্রতিবাদ মিছিল হয়। সেখানে হামলা ও সংঘর্ষে তিন আদিবাসী নিহত হন। তারা হলেন, গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি হেডম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)।
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনার শেষ পরিণতি কী হয়?
খাগড়াছড়ির মহিলা কল্যাণ সমিতি ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে এই জেলায় সাতজন পাহাড়ী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে তিনটি। এখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণই বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মনীষা তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আসলে এখানে ধর্ষণের বিচার পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামি ধরা পড়লেও তারা পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। ডিএনএ’র মিল না পাওয়া মেডিকেল প্রতিবেদনে আলামত না পাওয়া এখানে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে, যা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে।”
তার কথা, “ধর্ষণের মামলা থেকে শুরু করে ডাক্তারি পরীক্ষা, জবানবন্দি নেয়া, আসামি গ্রেপ্তার সব ক্ষেত্রেই সময় ক্ষেপন করা হয়। বিশেষ করে ডাক্তারি পরীক্ষায় দেরি করায় ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আর সেটাই ধর্ষকের পক্ষে যায়।”
মণীষা জানান, ” করোনার সময় এক প্রতিবন্ধী নারী ১২ জনের একটি ডাকাত দলের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ওই বাড়িতে গিয়ে ডাকাত দল ডাকাতি ও ধর্ষণ করে। কয়েকজন আসামি ধরাও পড়েছিল। কিন্তু পরে তারা সবাই জামিনে ছাড়া পায়। বলা হয়, ডিএনএ টেস্টে মেলেনি। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে।”
“গত ডিসেম্বরে খাগড়াছড়ি সদরে একটি মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে গিয়েছিল। অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু সে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ওই ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু গত ঈদে সে জামিন পায়। ঈদ উপলক্ষে তাকে জামিন দেয়া হয়। এখানেও বলা হয়েছে, তার ডিএনএ মেলেনি। আর বলা হয়, আসামি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি। আসামি কি অপরাধ স্বীকার করতে চায়?”
তার কথা, “ধর্ষণের মামলা করাও বেশ কঠিন। মামলা নিলেও এজাহার দুর্বল করে দেয়া হয়। থানার ইচ্ছামতো এজাহার লিখতে বাধ্য করা হয়। আর যারা ধর্ষণের শিকার হন, তারা প্রায় সবাই আদিবসীনারী।”
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি ওয়াইবাই মারমা বলেন, “আমাদের এখানে এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। পুলিশ প্রশাসনের কাছে গেলে তারা এটাকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ বলে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে, এটা তো ঘটতেই পারে। প্রভাবশালীরা চাপ দিয়ে বা টাকার বিনিময়ে পুলিশের সহায়তায় মীমাংসা করার চেষ্টা করে। তাই মামলা নিতে দেরি করে। সময় নষ্ট করে। নানা ভয় দেখায় যে, মামলা করলে আপনারাই সমস্যায় পড়বেন। ”
জুম্ম ছাত্র-জনতা মুখপাত্র কৃপায়ন ত্রিপুরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সর্বশেষ কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবেদনও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।” তারও প্রশ্ন ‘‘এটা কী উদ্দেশ্যে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হলো?”
সমস্যা কোথায়?
খাগড়াছড়ির ঘটনায় শুরু থেকেই আইএসপিআর ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে। রবিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে।” উপদেষ্টা আরো বলেন, “কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি চালাচ্ছে। এসব অস্ত্র প্রায়ই দেশের বাইরে থেকে আসে।”
আর সোমবার খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ এক ব্রিফিং-এ খাগড়াছড়ি এবং গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার জন্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণ ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে সংগঠনটি। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ফায়ারিং করা হয়েছে।”
একই দিনে পুলিশ সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও একটি গোষ্ঠী বিষয়টিকে ইস্যু করার চেষ্টা করছে।”
কিন্তু নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, শুধু খাগড়াছড়ি নয়, তিন পার্বত্য জেলায়ই দীর্ষদিন ধরে আদিবাসীদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ আছে। খাগড়ছড়ির ঘটনা হতে পারে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। পাহাড়িদের জমিদখল, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, পর্যটনের নামে পাহাড় দখল, জুমের জমি দখল করে রাবার বাগান করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পাহাড়িদের আরো প্রান্তিক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।
এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘর্ষে চারজন আদিবাসী নিহত হন। আহত হন ২০ জনেরও বেশি। ওই সময় বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটে। করা হয় লুটপাট। সদর উপজেলায় ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের সহিংসতার গণপিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। রাতে আবার এ ঘটনায় জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত হন দুই পাহাড়ি যুবক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতেই তারা নিহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিলটি রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে পৌঁছালে বাঙালিদের সঙ্গে সংঘাত বাধে। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের মিছিলটি পিছু হটে গেলেও সশস্ত্র বাঙালিদের একটি দল অনিক চাকমা নামের এক কিশোরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, “আমরা তো গত ২৮ বছর ধরে তাদের সাথে বেঈমানী করেছি। শান্তি চুক্তি করার পর তা বাস্তবায়ন হলো না। চুক্তি কখনো সরকার করেনা, করে রাষ্ট্র। কিন্তু বলা হয়, আগের সরকার করেছে, আমরা করিনি। ইউনূস সরকার আসার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ বৈষম্য দূর করা ছিল এই সরকারের প্রতিশ্রুতি। স্বাধীনতার পর বলা হলো, তোমরা সবাই বঙালি হয়ে যাও। এরপর সেখানে সেটেলারদের নিয়ে তাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হলো। আসলে তাদের প্রতি জাতিগত অবদমন চলছে।”
যতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) গত ১ জানুয়ারি প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০২৪ সালে ২০০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এতে ২১ জন নিহত এবং ১১৯টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত কোম্পানি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সেটেলার কর্তৃক দুই হাজার ৩১৪ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক সামগ্রিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং, সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। উপরন্তু পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম অধিকতর জোরদার হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সবচেয়ে নৃশংস ও রোমহর্ষক ঘটনা হলো, গত সেপ্টেম্বরে জুম্ম জনগণের ওপর নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়া এবং ডিসেম্বরে লামায় ত্রিপুরাদের ১৭টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “পাহাড়ে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। যদি বিচার না হয়, তাহলে কোনো পক্ষ তো সুযোগ নিতেই পারে। সেটা রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে। গুইমারার ঘটনার যে ভিডিও আমরা দেখেছি, তাতে স্পষ্ট যে, গুইমারায় সেনাবাহিনী নির্বচারে গুলি করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বঙালিরাও ছিল।” বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “এখন তো সবাই বলছে গুইমারার ঘটনায় সেনাবাহিনী জড়িত। সরকার তাদের পক্ষ নিচ্ছে। সরকারের নীতি যদি এই হয়, তাহলে এক সময় পাহাড়ে তো আর আদিবাসী থাকবে না। শেষ হয়ে যাবে।”
মানবাধিকার কর্মী এবং নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন,” “আদিবাসীদের ওপর আক্রমণ এবং হামলার ঘটনা আরো ঘটেছে। বমদের ওপর হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুইমারার ঘটনায় তিনজন নিহত হলো। আহত যারা হয়েছেন, তাদের একজনকে যিনি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তাকেও আবার আটক করা হয়েছে। তাহলে তারা কি চিকিৎসাও পাবে না? এটা তো অমানবিক আচরণ,” বলেন তিনি।
তার প্রশ্ন, “ধর্ষণের কি বিচার চাওয়া যাবে না?”
ডিডাব্লিউ ডটকম