০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৬)

শিখরা যখন ভারতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তখন তরুণ গুরু গোবিন্দ পাটনা থেকে পাঞ্জাব যেতে চাইলেন। বুলাকি তখন ঢাকার সঙ্গতের প্রধান।

ঢাকায় ছিল হুজুর সঙ্গত বা প্রাদেশিক সঙ্গতসমূহের কেন্দ্র। তাদের ওপরে ছিল (যা গড়ে ওঠে শুরু গোবিন্দ সিংয়ের সময়। আনন্দপুর। পরবর্তীকালে কেন্দ্র হয়ে ওঠে পাটনা। এগুলো যারা চালাবেন তাদের বলা হতো মসনদ যা এসেছে মসনদ-ই-আলা শব্দ থেকে। সাধুরা যেসব সঙ্গত বা উপাসনালয় করেছিলেন তাদের কেন্দ্র ছিল রাজমহল, মালদহ।

গুরুদুয়ারা নানকশাহী 

গুরু বখশ সিং মনে করেন, ঢাকার শিখরা ছিলেন সম্পদশালী এবং খুবই ধার্মিক। অষ্টাদশ শতকে গুরু গোবিন্দ সিং ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকার শিখদের ভক্তি দেখে তিনি বলেছিলেন উচ্ছ্বাসে, ‘ঢাকা হচ্ছে শিখ ধর্মের কেন্দ্র। তাঁর অনেক হুকুমনামায় এ উল্লেখ আছে। শিখরা যখন ভারতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তখন তরুণ গুরু গোবিন্দ পাটনা থেকে পাঞ্জাব যেতে চাইলেন। বুলাকি তখন ঢাকার সঙ্গতের প্রধান। তাঁকে অনুরোধ জানানো হলো এর বন্দোবস্ত করার জন্য। রাখার জন্য প্রথম শ্রেণির যুদ্ধবাজ হাতি, সমরাস্ত্র ও মসলিনের জন্য ঢাকার কাছে অনুরোধ পাঠানো হলো। সব অনুরোধ রাখা হয়েছিল।

শিখদের ঢাকায় পদার্পণ ঘটে মুঘলদের আগে। হুসেন শাহ তখন বাংলার অধিপতি। গুরু নানক তখন ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা থেকে ১৫২৪ সালে ফেরার পর বাবুরের হাতে গুরু নানক বন্দি হন।

শুরু নানক ওই সময় সঠিক সন জানা যায়নি, ১৫২০ থেকে ১৫২৩ হতে পারে। ঠিক করেছিলেন একজন সঙ্গী নিয়ে ভারতবর্ষ ঘুরবেন। ভারতবর্ষের নানা ধরনের তীর্থ ঘুরে তিনি এলেন কামরূপ, তারপর পুরি, ফের ঢাকায়- ঢাকেশ্বরী মন্দির দেখতে। তিনি এসে নামলেন রায়েরবাজারের একেবারে উত্তরের এক ঘাটে। গুরু বখশ জানিয়েছেন (১৯১৫) রায়েরবাজারের গরিব কুমোরদের মনে এখনও গুরু নানকের স্মৃতি বহমান।

জাফরাবাদের কাছে তখনও দুটি ধ্বংসস্তূপ ও একটি কূপ চোখে পড়ত। বলা যেতে পারে, সেটিই ছিল ঢাকার প্রথম শিখ মন্দির চারকোনা একটি দালান, দরজা ‘arched vaulted’. পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় একটি পুকুর।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৫)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৫)

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৬)

০৭:০০:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

শিখরা যখন ভারতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তখন তরুণ গুরু গোবিন্দ পাটনা থেকে পাঞ্জাব যেতে চাইলেন। বুলাকি তখন ঢাকার সঙ্গতের প্রধান।

ঢাকায় ছিল হুজুর সঙ্গত বা প্রাদেশিক সঙ্গতসমূহের কেন্দ্র। তাদের ওপরে ছিল (যা গড়ে ওঠে শুরু গোবিন্দ সিংয়ের সময়। আনন্দপুর। পরবর্তীকালে কেন্দ্র হয়ে ওঠে পাটনা। এগুলো যারা চালাবেন তাদের বলা হতো মসনদ যা এসেছে মসনদ-ই-আলা শব্দ থেকে। সাধুরা যেসব সঙ্গত বা উপাসনালয় করেছিলেন তাদের কেন্দ্র ছিল রাজমহল, মালদহ।

গুরুদুয়ারা নানকশাহী 

গুরু বখশ সিং মনে করেন, ঢাকার শিখরা ছিলেন সম্পদশালী এবং খুবই ধার্মিক। অষ্টাদশ শতকে গুরু গোবিন্দ সিং ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকার শিখদের ভক্তি দেখে তিনি বলেছিলেন উচ্ছ্বাসে, ‘ঢাকা হচ্ছে শিখ ধর্মের কেন্দ্র। তাঁর অনেক হুকুমনামায় এ উল্লেখ আছে। শিখরা যখন ভারতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন তখন তরুণ গুরু গোবিন্দ পাটনা থেকে পাঞ্জাব যেতে চাইলেন। বুলাকি তখন ঢাকার সঙ্গতের প্রধান। তাঁকে অনুরোধ জানানো হলো এর বন্দোবস্ত করার জন্য। রাখার জন্য প্রথম শ্রেণির যুদ্ধবাজ হাতি, সমরাস্ত্র ও মসলিনের জন্য ঢাকার কাছে অনুরোধ পাঠানো হলো। সব অনুরোধ রাখা হয়েছিল।

শিখদের ঢাকায় পদার্পণ ঘটে মুঘলদের আগে। হুসেন শাহ তখন বাংলার অধিপতি। গুরু নানক তখন ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা থেকে ১৫২৪ সালে ফেরার পর বাবুরের হাতে গুরু নানক বন্দি হন।

শুরু নানক ওই সময় সঠিক সন জানা যায়নি, ১৫২০ থেকে ১৫২৩ হতে পারে। ঠিক করেছিলেন একজন সঙ্গী নিয়ে ভারতবর্ষ ঘুরবেন। ভারতবর্ষের নানা ধরনের তীর্থ ঘুরে তিনি এলেন কামরূপ, তারপর পুরি, ফের ঢাকায়- ঢাকেশ্বরী মন্দির দেখতে। তিনি এসে নামলেন রায়েরবাজারের একেবারে উত্তরের এক ঘাটে। গুরু বখশ জানিয়েছেন (১৯১৫) রায়েরবাজারের গরিব কুমোরদের মনে এখনও গুরু নানকের স্মৃতি বহমান।

জাফরাবাদের কাছে তখনও দুটি ধ্বংসস্তূপ ও একটি কূপ চোখে পড়ত। বলা যেতে পারে, সেটিই ছিল ঢাকার প্রথম শিখ মন্দির চারকোনা একটি দালান, দরজা ‘arched vaulted’. পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় একটি পুকুর।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৫)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-৯৫)