একটি নতুন ধারার খাবারের সন্ধান
বর্তমান সময়ে, বিভিন্ন ধরনের ফার্মেন্টেশন খাবার আমাদের রোজকার খাবারের অংশ হয়ে উঠেছে, যেমন কম্বুচা, কেফির, ক্রাউট, কিমচি, এবং সাওরডো। তবে একটি নতুন ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে, যা অনেকের কাছে নতুন হতে পারে: পিপঁদে দই। এই খাবারের তৈরির পদ্ধতি অনেকটা আলাদা। পিপঁদগুলোকে দুধের মধ্যে ফেলা হয়, যা পরবর্তীতে পিপঁদদের গর্তে রেখে এক রাত ফার্মেন্ট করা হয়। এটি একটি পুরানো বুলগেরিয়ান ঐতিহ্য, যা এখন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় নতুন করে উদ্ভাবিত হয়েছে।
গবেষণা শুরু: সাইনোটের দৃষ্টি
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভেরোনিকা সাইনোটে এবং তার সহকর্মীরা পিপঁদে দই তৈরির পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হন। কোপেনহেগেনের আলকেমিস্ট রেস্টুরেন্টের গবেষণা ও উন্নয়ন দল যখন এই পদ্ধতি নিয়ে জানার চেষ্টা করে, তখন সাইনোটে তার গবেষণা শুরু করেন। গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পিপঁদে থাকা ফর্মিক অ্যাসিড কি দুধকে দইয়ে পরিণত করতে সাহায্য করছে, নাকি অন্য কোনো প্রক্রিয়া কাজ করছে।
বুলগেরিয়া থেকে পরীক্ষার জন্য তথ্য সংগ্রহ
গবেষক দল বুলগেরিয়ার একটি গ্রামে যান, যেখানে তারা পিপঁদে দই তৈরির প্রাচীন পদ্ধতি পুনর্গঠন করেন। সেখানে, একটি গরুর দুধ সংগ্রহ করে তা গরম করা হয় এবং ৪টি পিপঁদ যোগ করে দুধটি এক রাতের জন্য পিপঁদের গর্তে রেখে দেওয়া হয়। পরদিন সাইনোটে এর স্বাদ পরীক্ষা করেন এবং লক্ষ্য করেন যে, এটি একটি ভাল দইয়ের সূচনা, যেখানে ফার্মেন্টেশন দ্বারা অ্যাসিডিটি কমে এসেছে এবং কিছু সুগন্ধিও তৈরি হয়েছে।
পরীক্ষাগারের ফলাফল
পরবর্তী গবেষণায়, সাইনোটে ও তার দল ডেনমার্কে একটি সম্পর্কিত পিপঁদ ব্যবহার করে পরীক্ষাগুলি পরিচালনা করেন। তাদের পরীক্ষা অনুযায়ী, এই দইয়ের স্বাদ কিছুটা ভিন্ন ছিল—এটি আরও ঘন এবং লেবুর মতো স্বাদযুক্ত ছিল। গবেষণার ফলাফল থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটি পিপঁদ এবং মাইক্রোবগুলির একটি যৌথ প্রক্রিয়া। পিপঁদগুলো দুধের পিএইচ কমিয়ে দেয়, যার ফলে অ্যাসিড-প্রেমী মাইক্রোবগুলো বৃদ্ধি পায় এবং দই তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি হয়।
পিপঁদে দই: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, পিপঁদে থাকা মাইক্রোবগুলো ভবিষ্যতে নতুন ধরনের খাবার তৈরিতে সাহায্য করতে পারে, বা পুরনো খাবারের নতুন স্বাদ দিতে পারে, যেমন সাওরডো। রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব মাইক্রোবায়োম বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মার্টিন ব্লাজার বলেন, “এটি একটি নতুন ধারার খাবার তৈরির পথ খুলে দিচ্ছে, যা আমাদের খাবারের বৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করবে।”
এমনকি পিপঁদে দই তৈরির প্রক্রিয়া একটি উত্তেজনাপূর্ণ গবেষণা, তবে এটি আমাদের বর্তমান জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলবে, তা জানতে আরও সময় প্রয়োজন।
সতর্কতা
তবে, গবেষকরা এও সতর্ক করেছেন যে, কিছু পিপঁদে প্যারাসাইট থাকতে পারে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের মতে, পিপঁদে দই তৈরির প্রক্রিয়া গৃহীত হলে, একে সঠিকভাবে প্রস্তুত এবং পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
#পিপঁদেদই #ফার্মেন্টেশন #বিজ্ঞান #নতুনখাবার #গবেষণা