অফ-ব্রডওয়ের আলোচনায় এখন এক নাম—নাটালি পালামিদেস। একাই দু’টি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নতুন করে সংজ্ঞা দিচ্ছেন ক্লাউনশিল্পের হাস্যরস, বেদনা ও মানবিকতার ভারসাম্যকে। তার সাম্প্রতিক নাটক ‘উইয়ার’ প্রমাণ করেছে, মঞ্চে আবেগ ও রসবোধের সংঘাতই হতে পারে সবচেয়ে গভীর শিল্প।
অফ-ব্রডওয়েতে নতুন আলোড়ন
নাটালি পালামিদেসের অভিনয়জীবনে সর্বশেষ সংযোজন ‘উইয়ার’। নিউইয়র্কের চেরি লেন থিয়েটারে চলা এই একক মঞ্চনাটকটি নভেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে, এবং ইতোমধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অর্ধেক মুখে পুরুষ চরিত্র মার্ক ও বাকি অর্ধেকে নারী চরিত্র ক্রিস্টিনার মেকআপ—এই অভিনব ভিজ্যুয়ালই যেন দর্শকদের চমকে দেওয়ার প্রথম ইঙ্গিত।
একসঙ্গে দুজন: মার্ক ও ক্রিস্টিনা
‘উইয়ার’ মূলত একটি রোমান্টিক কমেডি ঘরানার গল্প। নববর্ষের রাতে এক দম্পতির ঝগড়া দিয়ে শুরু হয়ে গল্পটি ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়, যেখানে দেখা যায় তাদের প্রথম দেখা ও প্রেমের সূচনা। পালামিদেস একাই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন—অর্ধেক শরীরে দাড়িওয়ালা মার্ক, অন্য অর্ধেকে ফুরফুরে পোশাকের ক্রিস্টিনা। এই দুই দিকের সংঘর্ষই নাটকের মূল বিনোদন ও ব্যঙ্গাত্মক বুনন।
আগের কাজের ধারাবাহিকতা: ‘নেট’-এর উত্তরাধিকার
এর আগে ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নেট: এ ওয়ান ম্যান শো’ তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। সেই নাটকেও তিনি পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেখানে লিঙ্গ, সম্মতি ও ক্ষমতার প্রশ্ন উঠে আসে সরাসরি ও রূঢ়ভাবে। দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ, অস্বস্তিকর মুহূর্ত—সবকিছুই ছিল পরিকল্পিত এক নাটকীয় আঘাত। ‘উইয়ার’ সেই একই ধারার একটি বর্ধিত ও পরিণত রূপ, যেখানে হাসির আড়ালে বয়ে যায় গভীর ট্র্যাজেডির স্রোত।
হাসির ভেতর লুকানো বেদনা
পালামিদেস বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে দর্শকদের আবেগের ওঠানামা ঘটান—এক মুহূর্তে হাসি, পরের মুহূর্তে ধাক্কা বা বেদনা। ‘উইয়ার’-এও রয়েছে একটি সহিংস গাড়ি দুর্ঘটনার দৃশ্য, যা তিনি তৈরি করেছেন ৬০-এর দশকের গান ‘লাস্ট কিস’-এর প্রেরণায়। ক্লাউনশিল্পে এই হাসি ও কান্নার ভারসাম্যই তার কাছে সবচেয়ে বড় নান্দনিক চ্যালেঞ্জ।
ক্লাউনের পথে যাত্রা
পিটসবার্গে বেড়ে ওঠা পালামিদেস স্কুলজীবনেই চরিত্রাভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাউন ক্লাসে তিনি প্রথমে ব্যর্থ হন। শিক্ষক রিক কেম্প বলেছিলেন, “তুমি যদি ভঙ্গুর হতে না শেখো, তবে ক্লাউন হতে পারবে না।” সেই ব্যর্থতাকেই তিনি রূপ দেন সাফল্যে—নিজেকে উন্মুক্ত করে তোলেন দর্শকের সামনে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে নতুন অধ্যায়
ডিগ্রি শেষে সঙ্গীর সঙ্গে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে পাড়ি জমান এবং জন গিলকির “ইডিয়ট ওয়ার্কশপ”-এ ভর্তি হন, যা এখন শহরের বিকল্প ক্লাউন সংস্কৃতির কেন্দ্র। সেখানে তিনি শিখেছেন কীভাবে দর্শকের প্রতিক্রিয়া থেকে নাটকের গতিপথ গড়ে ওঠে। তার প্রতিটি নাটকই যেন একেকটি চলমান পরীক্ষা—স্ক্রিপ্ট ছাড়া, পূর্ব রিহার্স ছাড়া, সরাসরি দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি এক অভিনব থিয়েটার ফর্ম।
মঞ্চে ঝুঁকি, বাস্তবতার ছোঁয়া
তার সহশিল্পী কোর্টনি পাওরোসো বলেন, “নাটালি নিজের মঞ্চকে বিপজ্জনক করে তোলে, তবু সেখান থেকেই সমাধান বের করে।” কখনও আগুনের খেলা, কখনও নগ্নতা—সবই থাকে তার অভিনয়ের অংশ। তবে এসব ‘শক ভ্যালু’ নয়, বরং মানুষের ভেতরের অসহায়তা ও হাস্যরসের সীমা অন্বেষণের প্রচেষ্টা।
নতুন দিগন্ত: ‘লেডি ম্যাজিক’
বর্তমানে তিনি ‘লেডি ম্যাজিক’ নামের নতুন প্রযোজনায় কাজ করছেন, যা ম্যাজিক শিল্পীদের অহমিকা নিয়ে তৈরি এক ব্যঙ্গাত্মক নাটক। এতে বাস্তব জাদুকরী ট্রিকসও যুক্ত হয়েছে। এই নাটকটি এখন স্পিগেলওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যৌথভাবে লাস ভেগাসে মঞ্চস্থের পরিকল্পনায় আছে।
ক্লাউনের দর্শন: ব্যর্থতার আনন্দ
অ্যাপল টিভি+ সিরিজ ‘গাটসি’-তে হিলারি ও চেলসি ক্লিনটনের সঙ্গে এক পর্বে অভিনয় করে তিনি বলেন, “খেলা ও ব্যর্থতার জন্য সবসময়ই জায়গা থাকা উচিত—এটাই ক্লাউনের আত্মা।” হাসি, অস্বস্তি ও আবেগের মাঝামাঝি এই সেতুবন্ধনই নাটালি পালামিদেসকে আলাদা করে তুলেছে সমকালীন অফ-ব্রডওয়ে থিয়েটারে।
নাটালি_পালামিদেস, উইয়ার_নাটক, অফ_ব্রডওয়ে, ক্লাউন_থিয়েটার, আমেরিকান_সংস্কৃতি, সমকালীন_থিয়েটার, সারাক্ষণ_রিপোর্ট