একদিনে ৭০০ জন নতুন রোগী এবং ৩ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে ২২০ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর (DGHS) ও সংবাদসূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবরের শুরুতে দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ৬৮৯ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২১৫ জনের কাছাকাছি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখেরও বেশি মানুষ। এই পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা, সিটি করপোরেশন ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
চলতি বছরের ধারা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্য অধিদফতর (DGHS)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবরের শুরুতে সারাদেশে ডেঙ্গুতে ৫০ হাজার ৬৮৯ জন সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২১৫ জনে পৌঁছেছে।
“৭০০ নতুন রোগী ও ৩ জন মৃত্যু” সংক্রান্ত তথ্য সম্ভবত সংবাদমাধ্যম থেকে সংগৃহীত একদিনের হিসাব। তবে DGHS-এর অফিসিয়াল “ড্যাশবোর্ড”-এর সর্বশেষ আপডেটে দেখা গেছে, মোট ভর্তি প্রায় সাত থেকে আট হাজার এবং মৃত্যু প্রায় ৩০ জন।
DGHS-এর “১ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত” অংশে দেখা যাচ্ছে, ভর্তি ৬,৯২৬ জন এবং মৃত্যু ৩৮ জন হিসেবে আপডেট দেওয়া আছে। অর্থাৎ ড্যাশবোর্ড ও সংবাদসূত্রের তথ্যের মধ্যে কিছু ব্যবধান বা আপডেট দেরি থাকতে পারে।
বিভাগভিত্তিক ও শহরভিত্তিক সংক্রমণ
বিভিন্ন বিভাগে আক্রান্তের হারও উদ্বেগজনক। বরিশালে ১০৫ জন, চট্টগ্রামে ৬১ জন, ঢাকার বাইরে ১৪৯ জন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে ১৫৫ ও ১১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
এই বিভাগভিত্তিক তথ্য সাধারণত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের আপডেটের ওপর নির্ভর করে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
তবে এখন পর্যন্ত DGHS-এর হেলথ বুলেটিনে এসব বিস্তারিত তথ্য সরাসরি প্রকাশ পায়নি।
২০২৪ সালের রেকর্ড অনুযায়ী, সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছিল ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়।
গত বছরের তুলনামূলক পরিসংখ্যান
২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।
এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখেরও বেশি রোগী।
২০২৩ সালে পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ—সে বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন লাখ ২১ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু হয়েছিল ১,৭০৫ জনের।
২০২৪ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগীদের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছিল।
প্রচলিত চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, অর্থ সংকটের কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু পর্যালোচনা (Death Review) সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
ড্যাশবোর্ডে তথ্য হালনাগাদে বিলম্ব ও যাচাইয়ের সীমাবদ্ধতা থাকায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের তথ্য এখন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বৃষ্টির পর স্থায়ী জলাবদ্ধতা মশার প্রজনন বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলছে।
এছাড়া অনেক এলাকায় মশার লার্ভা ধ্বংসকরণ, আবর্জনা নিষ্কাশন ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ এখনও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
ভবিষ্যৎ ভাবনা ও করণীয়
সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংসে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিশেষ ডেঙ্গু ওয়ার্ড এবং চিকিৎসক-পরিচালিত টিম প্রস্তুত থাকা জরুরি।
মৃত্যু পর্যালোচনা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হলে রোগের প্রকৃতি বিশ্লেষণ আরও সহজ হবে।
সবশেষে, DGHS, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের মধ্যে নির্ভরযোগ্য ডেটা আদান-প্রদান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭০০ রোগী ও ৩ জন মৃত্যুর খবর বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। DGHS-এর তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ নাগরিক—সব পক্ষেরই সক্রিয় ভূমিকা এখন অপরিহার্য।
#ডেঙ্গু #স্বাস্থ্য_অধিদফতর #বাংলাদেশ #জনস্বাস্থ্য #ডেঙ্গু_পরিসংখ্যান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট