টানা তিন দিনের ধারাবাহিক পতনে শেয়ারবাজারে আবারও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে, লেনদেনও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে, যা বাজারে উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি করেছে।

ধারাবাহিক পতনে বাজারে অস্থিরতা

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার টানা তৃতীয় দিনের মতো পতনের মুখে পড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এবং নতুন তহবিলের অভাব এই মন্দাভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

ডিএসইতে সূচক ও লেনদেনের পতন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯ পয়েন্ট কমে দিনের শেষে নিম্নমুখী অবস্থায় বন্ধ হয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস সূচক ১২ পয়েন্ট এবং ব্লু-চিপ ডিএস৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে গেছে।

দিনে মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টির দর বেড়েছে, ২২১টির কমেছে এবং ৭৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল। ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন শ্রেণিতেই বেশিরভাগ কোম্পানি ক্ষতির মুখে পড়েছে। মৌলিকভাবে শক্তিশালী ‘এ’ ক্যাটাগরিতেও ৬৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কিন্তু ১২৩টির কমে গেছে।

ব্লক মার্কেটে লেনদেন কমেছে

ব্লক মার্কেটে ২২টি কোম্পানির মধ্যে মোট ৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড সর্বাধিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করে শীর্ষে ছিল। তবে ডিএসইর মোট লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৬১১ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের ৭৮৭ কোটি টাকার তুলনায় অনেক কম।

দিনের সেরা ও খারাপ পারফরমার

দিনের সেরা পারফরমার হিসেবে উঠে এসেছে পায়োনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার, যার দর ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি ৯ শতাংশ দরপতনের মাধ্যমে দিনের সবচেয়ে দুর্বল পারফরমার হয়েছে।

সিএসইতেও একই চিত্র

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরনের মন্দাভাব দেখা গেছে। প্রধান সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমেছে। বন্দরনগরীর এই এক্সচেঞ্জে ৬৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কিন্তু ১৩৫টির কমেছে। এদিন সিএসইতে মোট লেনদেনও কমে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের ১২ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় একতৃতীয়াংশ কম।

শীর্ষে রিলায়েন্স ওয়ান, সর্বনিম্নে ডেসকো

সিএসইর শীর্ষ লাভজনক শেয়ারের তালিকায় ছিল রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের প্রথম স্কিম ‘রিলায়েন্স ওয়ান’। এর শেয়ারের দাম ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ১০ শতাংশ দরপতনের ফলে দিনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

বাজারে আস্থাহীনতা বাড়ছে

টানা তিন দিনের পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কম লেনদেন, সূচকের ধারাবাহিক পতন এবং আর্থিক খাতের চাপ একত্রে বাজারে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। এর ফলে অনেক বিনিয়োগকারী আপাতত অপেক্ষার নীতি গ্রহণ করছেন।

#বিনিয়োগ #শেয়ারবাজার #ডিএসই #সিএসই #অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট