২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন গবেষক—মোহাম্মদ ক্লার্ক, মিশেল ডেভরেট এবং জন মার্টিনিস। তাঁদের কাজ কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানকে জীবন্ত করে তুলেছে, যা ভবিষ্যতের ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই পুরস্কারটি কোয়ান্টাম প্রযুক্তির আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আমেরিকান গবেষক মোহাম্মদ ক্লার্ক, মিশেল ডেভরেট ও জন মার্টিনিসকে পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে “পরীক্ষণসমূহ যা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানকে ক্রিয়া করছে এমন অবস্থা প্রকাশ করেছে” – এই কাজ তাঁদেরকে ডিজিটাল প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম গড়তে পথ দেখাবে। ([NobelPrize.org][1])
ক্লার্ক এক প্রেস কনফারেন্সে ফোনে বলেন,
“আমার অনুভূতি হলো — আমি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছি। কখনোই ভাবিনি যে এমন কিছু কাজ নোবেল পুরস্কারের ভিত্তি হতে পারে।” ([Reuters][2])
ক্লার্ক আরও বলেন,
“আমি এখন আমার সেলফোনে কথা বলছি, আপনারাও বলছেন সম্ভবত — সেই কাজগুলোই সেলফোন কাজ করার একটি মূল কারণ।” ([Reuters][2])
কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ‘নতুন বিস্ময়’
পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স মূলত পারমাণবিক স্তর ও উপ-পারমাণবিক কণাগুলোর আচরণ ব্যাখ্যা করে; অনেক সময় এগুলো ধরা কঠিন ও অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু ক্লার্ক ও সহকর্মীরা ১৯৮০ দশকে অতিস্বেধক (superconductor) সার্কিট তৈরি করে দেখান যে সঠিক পরিস্থিতিতে এই কোয়ান্টাম আচরণ দৈনন্দিন বস্তুতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ([NobelPrize.org][1])
নোবেল কমিটির পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ার ওলে এরিকসন বলেন,
“শত বছর পুরনো কোয়ান্টাম মেকানিক্স পুনরায় নতুন বিস্ময় এনে দেয় — এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং বেশ কার্যকর, কারণ কোয়ান্টাম মেকানিক্স সব ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি।” ([NobelPrize.org][1])
ক্লাসিক ডিজিটাল যন্ত্রে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বেশি ব্যবহৃত: কম্পিউটার মাইক্রচিপের ট্রানজিস্টর এ প্রযুক্তির এক সাধারণ উদাহরণ। ([Reuters][2])
কোয়ান্টাম প্রযুক্তির সম্ভাবনা:
“এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার উন্নতমানের কোয়ান্টাম প্রযুক্তি — যেমন কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও সেন্সর — গঠনে সুযোগ এনে দিয়েছে,” বলে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি এক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে। ([Reuters][2])
কোয়ান্টাম কম্পিউটার জটিল গণনা করে, ভবিষ্যদ্বাণী করতে এবং বিশ্লেষণ করতে পারে — এমন কাজ যা ক্লাসিক কম্পিউটারকে বহু বছর লাগাতে পারে। ([Reuters][2])
এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনেক — বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলা থেকে শুরু করে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান। তবে চ্যালেঞ্জও অনেক: চিপের নির্ভুলতা উন্নত করা, বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সময়সীমা নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় বিতর্কিত। ([Reuters][2])
গুগল সংযোগযুক্ত দুই পুরস্কার বিজয়ী:
ক্লার্ক, ডেভরেট ও মার্টিনিসের মধ্যে দুই জন গুগলের সঙ্গে সংযুক্তি রাখেন। ([Reuters][2])
ক্লার্ক ব্রিটিশ শুভ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বার্কলে) অধ্যাপক। ([Reuters][2])
ডেভরেট ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে ইয়েলে এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (সান্তা বারবারা) এ অধ্যাপনা করেন। ([Reuters][2])
মার্টিনিস ২০২০ পর্যন্ত গুগলের কোয়ান্টাম এআই ল্যাবের প্রধান ছিলেন। গুগলে, ২০১৯ সালে তার দল দাবি করেছিল তারা “কোয়ান্টাম স্যুপ্রিমেসি” অর্জন করেছেন — অর্থাৎ সাব-আণবিক কণার গুণাগুণ ব্যবহার করে এমন একটি সমস্যা সমাধান করেছেন যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারও করতে পারত না। ([Reuters][2])
২০২৪ সালের রাসায়নিক নোবেল ও গুগল:
এটি দ্বিতীয় বছর যে গুগল সংযুক্ত গবেষক নোবেল জিতেছেন। ২০২৪ সালের রসায়ন নোবেল দেওয়া হয়েছিল ডেমিস হাসাবিস ও জন জামপারের — যারা গুগল ডীপমাইন্ডে কাজ করেছেন — এবং একই বছর পদার্থবিজ্ঞানে জেতেন জিফরি হিন্টন, যিনি দীর্ঘকাল গুগলে কাজ করেছিলেন। ([Reuters][2])
বিজয়ীদের সম্মাননা:
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদ গ্রহীতারা স্টকহোমে সুইডেনের রাজা কর্তৃক ১০ ডিসেম্বর (আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে) প্রদান করবেন। এরপর সিটি হলে একটি অভিজাত ভোজ অনুষ্ঠিত হবে। ([Reuters][2])
শান্তি পুরস্কার শুক্রবার ঘোষণা করা হবে এবং তা অসলোর এক পৃথক অনুষ্ঠানে দেওয়া হবে। ([Reuters][2])
#NobelPrize2025 #QuantumPhysics #DigitalTechnology #PhysicsNobel #ClarkeDeVoretMartinis #QuantumMechanics #NobelPrizeWinners #QuantumComputing #InnovationInTechnology