আমেরিকার ডিজাইনার মার্ক জ্যাকবস ও ফরাসি ব্র্যান্ড এ.পি.সি.-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যঁ তুয়িতো, দুই প্রজন্মের দুই ভিন্ন মনের মানুষ—যাঁরা এবার একসঙ্গে এনেছেন এমন এক ফ্যাশন সংগ্রহ, যা একদিকে কলেজীয় নস্টালজিয়া, অন্যদিকে পরিশীলিত আধুনিকতা। তাঁদের নতুন যৌথ কালেকশনটি শুধু পোশাক নয়, বরং দুই সংস্কৃতির মধ্যকার রুচি ও রসবোধের সেতুবন্ধন।
দুই কিংবদন্তির বন্ধুত্ব থেকে নতুন অধ্যায়
ফ্যাশন দুনিয়ার দুই বিশিষ্ট নাম—আমেরিকান ডিজাইনার মার্ক জ্যাকবস ও ফরাসি ব্র্যান্ড এ.পি.সি.-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যঁ তুয়িতো—দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের কাজের ভক্ত। এবার তাঁরা একসঙ্গে তৈরি করেছেন একটি নতুন ক্যাপসুল কালেকশন, যা তাঁদের অভিন্ন রুচি ও নান্দনিকতার প্রতিফলন ঘটায়।
তুয়িতো বলেন, “আমরা যেন দুই অভিজ্ঞ শিক্ষক—তবুও সবসময় ছাত্র।”

৯০–এর দশকের সূচনা: পারস্পরিক অনুপ্রেরণার গল্প
১৯৯০-এর দশকের শুরুতে মার্ক জ্যাকবসের পোশাকের বড় অংশজুড়ে ছিল এ.পি.সি.-এর ডিজাইন। তখন তিনি পেরি এলিসের জন্য গ্রাঞ্জ ধাঁচের পোশাককে রেশমে রূপান্তর করছিলেন এবং নিজস্ব লেবেলের জন্য তৈরি করছিলেন নরম ক্যাশমির হুডি।
জ্যাকবস বলেন, “ওটা ছিল একদম সাধারণ, কিন্তু সেই সাধারণতাই ছিল নিখুঁত।”
এদিকে তুয়িতো তৈরি করছিলেন একধরনের ‘অ্যান্টি-ফ্যাশন’ আন্দোলন—যেখানে ৮০–এর দশকের অতিরিক্ত চাকচিক্যের বদলে আসছিল সংযম, নির্ভুল কাটিং, এবং স্টিভ ম্যাককুইনের স্টাইলে পরা এক সাধারণ সাদা টি-শার্ট। তাঁর ব্র্যান্ডের মূলে ছিল সরলতা, যা জ্যাকবসকে মুগ্ধ করে।
নতুন কালেকশন: কলেজের স্মৃতি, আধুনিক স্পর্শ
তাঁদের নতুন ক্যাপসুল কালেকশন ‘ব্যাক টু স্কুল’ থিমে তৈরি, যেখানে ক্লাসিক কলেজীয় ফ্যাশন নতুনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এতে আছে কো-ব্র্যান্ডেড ভার্সিটি জ্যাকেট, পেনি লোফার, গাঢ় ডেনিম, স্ট্রাইপড রাগবি শার্ট, এবং নিখুঁত ফিটিংয়ের জিপ-আপ।
জ্যাকবস বলেন, “অতিরিক্ত বড় নয়—ঠিক মাপের জ্যাকেটই আজকের সময়ের সঙ্গে মানানসই।”
কালেকশনে রোমান মুদ্রার ছাপ দেওয়া হয়েছে—যেখানে দেখা যায় জ্যাকবস ও তুয়িতোর মুখাবয়ব। টি-শার্টে ছাপা হয়েছে তুয়িতোর ৮০–এর দশকের ছাত্রপরিচয়পত্র এবং জ্যাকবসের প্রথম প্যারিস ভ্রমণের ‘কার্ত অরাঞ্জ’ মেট্রো পাস—যা তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সফর ছিল।

প্যারিসের প্রভাব ও নস্টালজিয়ার ছোঁয়া
পুরো কালেকশনজুড়ে আছে সেই “আমেরিকান ইন প্যারিস” আবেগ—যেখানে এক তরুণ জ্যাকবস প্রথম ফরাসি স্টাইলের প্রেমে পড়েছিলেন। এই মিশ্রণই এখন এ.পি.সি.-এর স্বাক্ষরধর্মী পরিচয় হয়ে উঠেছে।
১৯৯০-এর দশকে, সোফিয়া কপোলার মাধ্যমে তাঁদের প্রথম দেখা হয় প্যারিসে, যখন জ্যাকবস লুই ভুইতোঁর আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। তুয়িতো আজও ভাবেন, “যদি ১৯৯৬ সালে আমি ওর দরজায় কড়া নাড়তাম—বলতাম, ‘আমরা আলাদা কাজ করি, কিন্তু একে অপরকে পছন্দ করি, চল কিছু তৈরি করি।’”
হাস্যরস, ব্যঙ্গ ও শিক্ষার ধারাবাহিকতা
তুয়িতো মনে করেন, তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে অবিরাম শেখার মনোভাব—যা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত। তাঁর মতে, এমন এক সময় যখন সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা, তখন শেখার মানসিকতা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।
জ্যাকবস যোগ করেন, “প্রিপ স্কুলের পোশাক বা স্টাইল পরা মানে একধরনের অভিনয়—একটা জগতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা, যেখানে তুমি আসলে অন্তর্ভুক্ত নও। এই ভান করার মধ্যেই একধরনের কৌতুক ও বিদ্রূপ আছে।”
তুয়িতো হাসতে হাসতে বলেন, “আমাদের আসল মিলটা হলো রসবোধে।”
এই যৌথ কালেকশন শুধু ফ্যাশনের নয়, দুই প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির সংলাপও বটে। সরলতা, ব্যঙ্গ, ও রুচিশীলতার মিশ্রণে মার্ক জ্যাকবস ও জ্যঁ তুয়িতো দেখিয়েছেন, ফ্যাশন মানে শুধু পোশাক নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক ভাষা, যেখানে বন্ধুত্ব ও সৃষ্টিশীলতা একসঙ্গে মিশে যায়।
#ফ্যাশন #মার্কজ্যাকবস #এপিসি #জ্যঁতুয়িতো #VogueUSA #ক্যাপসুলকালেকশন #ফরাসিসংযোগ #ফ্যাশনসংলাপ #নস্টালজিয়া #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















