০১:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায় আদানি গ্রুপের নতুন উদ্যোগ: নবি মুম্বাই বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় ‘ভুলে যাওয়া রাজা অ্যাথেলস্টানকে শ্রদ্ধা জানাতে শত মাইলের নতুন ভ্রমণ পথ ‘ দেশের হারিয়ে যাওয়া লাল ডাকবাক্স: ডিজিটাল যুগে বিলুপ্ত চিঠির স্মৃতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৩) শরৎ বাধা পেল, বসন্ত কি আসতে পারবে? মোদী-ট্রাম্প বৈঠক: ভারতের জন্য নতুন সম্ভাবনা ইসরাইল ও হামাস কী কী ছাড় দিয়েছে গাজায় বন্দি–যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে? সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের খ্যাতি ছিল একাধারে শিক্ষক, লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সরেজমিন খাগড়াছড়ি: একদিকে ক্ষোভ-আতঙ্ক, আরেকদিকে নজরদারি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও গেন্ডারিয়ায় শরৎ উৎসবে বাধা কেন?

প্রায় দুই দশক ধরে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায় ‘শরৎ উৎসব আয়োজন করে থাকে ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন। এবারো একই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি বাতিল করে দেয় চারুকলা অনুষদ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুমতি বাতিলের পর ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি পরে পুরানো ঢাকার গেন্ডারিয়ায় কচিকাঁচার মেলা স্কুলে আয়োজন করার ঘোষণা দেয়। সেখানেও ‘অনুমতি না থাকার’ কথা জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে থেকে অনুষ্ঠানটি না করতে বলা হয়।

পরে অবশ্য গেন্ডারিয়াতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিশুদের চিত্রাঙ্কন এবং প্রয়াত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মৃতির প্রতি এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি করা হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে।

সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা ১৯ বছর ধরে এই উৎসবটি পালন করে আসছি। কিন্তু এবার দুটি জায়গা থেকেই আমাদের ওপর বাধা এসেছে”।

চারুকলায় বাধার কারণ কী?

প্রতি বছর বিভিন্ন ঋতুতে আলাদা আলাদা উৎসবের আয়োজনে হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের বকুল তলায়।

এর মধ্যে শরৎ, বর্ষা কিংবা নবান্ন উৎসবগুলো আয়োজন করে থাকে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। প্রতি বছর দুর্গা পূজার এক সপ্তাহ আগে কিংবা এক সপ্তাহ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এই উৎসবটি আয়োজন করে ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।

এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি জানিয়েছে, গত বছর শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরও তারা একই সময় শরৎ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। তখনও কোন বাধা আসেনি।

সত্যেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী জানান, এবারও তারা নিয়ম মেনে চারুকলার বকুল তলার অনুষ্ঠান করার অনুমোদন নেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে চারুকলা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে অনুষ্ঠানটি করা যাবে না।

মি. চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যে উৎসব আমরা প্রায় ১৯ বছর ধরে করছি, হঠাৎ আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রকৃতির বন্দনায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদের প্রশ্ন কেন আসবে?”।

একই সঙ্গে তিনি জানান, তিনি আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নন। তবুও কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিনের এই উৎসব আয়োজনটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

চারুকলা অনুষদে এই শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে বেশ কিছু উৎসবের উদারহণ টেনে তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মূলত সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যে কারণে কিছু ‘ভুঁইফোঁড়’ সংগঠন এই আয়োজনটি ‘ছিনতাই’ করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মি. চৌধুরী।

আগে থেকেই অনুমতি নেওয়ার পর হঠাৎ করে এই অনুষ্ঠান কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নে চারুকলা অনুষদও খুব একটা সদুত্তর দিতে পারে নি।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটির অনুমতি বাতিলের কারণ জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা তো অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু একটা পক্ষ কালচারাল ফ্যাসিবাদ ট্যাগ দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে”।

তবে তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, স্থগিত অনুষ্ঠানটি আবার আয়োজন করা যায় কী-না এটি নিয়ে শনিবার তারা সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন।

পুলিশের বাধা গেন্ডারিয়ার আয়োজনে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠানটির অনুমতি বাতিল করা হয়, তখন বিকল্প হিসেবে পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া কচিকাঁচা মেলার মাঠ ও খেলাঘর আসরের দুইটি স্থানকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে চিন্তা করে ওই শিল্পীগোষ্ঠী।

পরে আয়োজকেরা শুক্রবার সকাল সাতটার উৎসবটি গেন্ডারিয়ার কচিকাঁচার মেলার মাঠে আয়োজন করার ঘোষণা দেয়।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানান, সব প্রস্তুতির পর যখন শুক্রবার চারুকলার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তারপর গেন্ডরিয়ার কচিকাঁচার মেলার মাঠে বিকল্প স্থান হিসেবে আয়োজনটি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

মি. চৌধুরী বলছিলেন, “আমরা যখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলাম। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা আসলো। বলা হলো, এখানে অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ এসেছে। যে কারণে পুলিশ আমাদের বলেছে কচিকাঁচার মেলার মাঠেও আমরা অনুষ্ঠান করতে পারবো না”।

কারা থানায় এটি নিয়ে অভিযোগ দিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মি. চৌধুরী বলেন, “ওইখানে সাঈদ বারী নামে একজন সাংবাদিক নাকি পুলিশকে বলছে আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর। যে কারণে সকাল থেকেই কচিকাঁচার মাঠের পাশে পুলিশ জড়ো হয়, আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়”।

কিন্তু সাঈদ বারী নামে ওই সাংবাদিকদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেন নি।

আয়োজক কমিটি বলছে, এক পর্যায়ে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই কচিকাঁচার মেলার মাঠের এক পাশে জাতীয় সংগীত গেয়ে ও প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন তারা। একই সময়ে শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল, সেটিও একটি কক্ষে করেন তারা।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা যখন এখানে আয়োজন আনলাম, তখন আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো- এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা আছে। তখন প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা খুব ছোট করে অনুষ্ঠান করে চলে এসেছি”।

তিনি জানান, ওই অনুষ্ঠানের সময় আশপাশে কয়েক স্তরে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কেন পুলিশ সেখানে বাধা দিয়েছে- এমন প্রশ্নে ওয়ারী জোনের পুলিশের উপ-কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যে স্কুলে ওনার উৎসবটা তারা করতে চেয়েছিলেন, সেই মাঠে এই উৎসবটা করার জন্যও ওনারা কোনো অনুমতি নেন নি। সেখানকার কর্তৃপক্ষও এই অনুষ্ঠানটা করতে দিতে চাচ্ছিলেন না। এখানে পুলিশের কোন ভূমিকা নাই”।

“একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে সাধারণত ডিএমপি বা অন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। অনুমতি চাইলে আমরা কনসার্ন অথরিটির মাধ্যমে কথা বলি। ওনারা তো অনুমতি নেয় নি আগে থেকে”, যোগ করেন তিনি।

ষড়যন্ত্র দেখছেন আয়োজকরা

ওই অনুষ্ঠানের আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেসবুকে একটি পোস্টার ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কয়েকজনকে দেখা যায়। তাদের মধ্যে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরীও ছিলেন।

একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানজার চৌধুরীকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়েও প্রচারণা করতে থাকে কেউ কেউ।

এমন পরিস্থিতির তৈরি হওয়ার পরই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃপক্ষও অনেকটা পিছু হটে।

চারুকলার ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখও অবশ্যই এটি স্বীকার করে বলেছেন যে, তাদের দিক থেকে এই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি নেই। এমনকি তারাই এটি অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সংকট তৈরি হতে পারে, এমন শঙ্কার কথা চিন্তা করেই তারা শেষ পর্যন্ত অনুমতি বাতিল করে দেয়।

অনুমতি বাতিল করার বিষয়টি নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা তৈরি হয়, তখন এটি নিয়ে একটু চাপে পড়ে চারুকলা কর্তৃপক্ষ।

যে কারণে শনিবার সকালে ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে বৈঠকও ডাকা হয়েছে শনিবার সকালে। মানজার চৌধুরী বলেছেন তারা ওই বৈঠকে যাবেন ঠিকই, কিন্তু তারা আগে চারুকলার প্রস্তাবনা শুনবেন।

মানজার চৌধুরী বলছিলেন, “আমাদেরকে কালচারাল ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যা দেওয়ার মূল কারণ অনুষ্ঠান করতে না দেওয়া না। মূল কারণ অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব ছিনতাই করা”।

এর ব্যাখ্যা তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই অনুষ্ঠান পালন হওয়ার পর এটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এটি গণমাধ্যমেও ভালভাবে প্রচারণা পায়। যে কারণে কিছু ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন এই উৎসবে বাধা সৃষ্টি করে তারা এর আয়োজক হতে চায়”।

যে কারণে এবারের শরৎ উৎসবে বাধার বিষয়টিকেও একই সূত্রে গাঁথা বলেও মনে করছেন মানজার চৌধুরী।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও গেন্ডারিয়ায় শরৎ উৎসবে বাধা কেন?

০৭:১৬:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

প্রায় দুই দশক ধরে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুল তলায় ‘শরৎ উৎসব আয়োজন করে থাকে ‘সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন। এবারো একই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি বাতিল করে দেয় চারুকলা অনুষদ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুমতি বাতিলের পর ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি পরে পুরানো ঢাকার গেন্ডারিয়ায় কচিকাঁচার মেলা স্কুলে আয়োজন করার ঘোষণা দেয়। সেখানেও ‘অনুমতি না থাকার’ কথা জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে থেকে অনুষ্ঠানটি না করতে বলা হয়।

পরে অবশ্য গেন্ডারিয়াতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিশুদের চিত্রাঙ্কন এবং প্রয়াত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মৃতির প্রতি এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি করা হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে।

সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা ১৯ বছর ধরে এই উৎসবটি পালন করে আসছি। কিন্তু এবার দুটি জায়গা থেকেই আমাদের ওপর বাধা এসেছে”।

চারুকলায় বাধার কারণ কী?

প্রতি বছর বিভিন্ন ঋতুতে আলাদা আলাদা উৎসবের আয়োজনে হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের বকুল তলায়।

এর মধ্যে শরৎ, বর্ষা কিংবা নবান্ন উৎসবগুলো আয়োজন করে থাকে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। প্রতি বছর দুর্গা পূজার এক সপ্তাহ আগে কিংবা এক সপ্তাহ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এই উৎসবটি আয়োজন করে ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।

এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি জানিয়েছে, গত বছর শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরও তারা একই সময় শরৎ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। তখনও কোন বাধা আসেনি।

সত্যেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী জানান, এবারও তারা নিয়ম মেনে চারুকলার বকুল তলার অনুষ্ঠান করার অনুমোদন নেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে চারুকলা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে অনুষ্ঠানটি করা যাবে না।

মি. চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যে উৎসব আমরা প্রায় ১৯ বছর ধরে করছি, হঠাৎ আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রকৃতির বন্দনায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদের প্রশ্ন কেন আসবে?”।

একই সঙ্গে তিনি জানান, তিনি আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নন। তবুও কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিনের এই উৎসব আয়োজনটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

চারুকলা অনুষদে এই শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে বেশ কিছু উৎসবের উদারহণ টেনে তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মূলত সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যে কারণে কিছু ‘ভুঁইফোঁড়’ সংগঠন এই আয়োজনটি ‘ছিনতাই’ করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মি. চৌধুরী।

আগে থেকেই অনুমতি নেওয়ার পর হঠাৎ করে এই অনুষ্ঠান কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নে চারুকলা অনুষদও খুব একটা সদুত্তর দিতে পারে নি।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটির অনুমতি বাতিলের কারণ জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা তো অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু একটা পক্ষ কালচারাল ফ্যাসিবাদ ট্যাগ দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে”।

তবে তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, স্থগিত অনুষ্ঠানটি আবার আয়োজন করা যায় কী-না এটি নিয়ে শনিবার তারা সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন।

পুলিশের বাধা গেন্ডারিয়ার আয়োজনে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠানটির অনুমতি বাতিল করা হয়, তখন বিকল্প হিসেবে পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া কচিকাঁচা মেলার মাঠ ও খেলাঘর আসরের দুইটি স্থানকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে চিন্তা করে ওই শিল্পীগোষ্ঠী।

পরে আয়োজকেরা শুক্রবার সকাল সাতটার উৎসবটি গেন্ডারিয়ার কচিকাঁচার মেলার মাঠে আয়োজন করার ঘোষণা দেয়।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানান, সব প্রস্তুতির পর যখন শুক্রবার চারুকলার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তারপর গেন্ডরিয়ার কচিকাঁচার মেলার মাঠে বিকল্প স্থান হিসেবে আয়োজনটি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

মি. চৌধুরী বলছিলেন, “আমরা যখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলাম। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা আসলো। বলা হলো, এখানে অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ এসেছে। যে কারণে পুলিশ আমাদের বলেছে কচিকাঁচার মেলার মাঠেও আমরা অনুষ্ঠান করতে পারবো না”।

কারা থানায় এটি নিয়ে অভিযোগ দিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মি. চৌধুরী বলেন, “ওইখানে সাঈদ বারী নামে একজন সাংবাদিক নাকি পুলিশকে বলছে আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর। যে কারণে সকাল থেকেই কচিকাঁচার মাঠের পাশে পুলিশ জড়ো হয়, আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়”।

কিন্তু সাঈদ বারী নামে ওই সাংবাদিকদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেন নি।

আয়োজক কমিটি বলছে, এক পর্যায়ে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই কচিকাঁচার মেলার মাঠের এক পাশে জাতীয় সংগীত গেয়ে ও প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন তারা। একই সময়ে শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল, সেটিও একটি কক্ষে করেন তারা।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা যখন এখানে আয়োজন আনলাম, তখন আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো- এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা আছে। তখন প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা খুব ছোট করে অনুষ্ঠান করে চলে এসেছি”।

তিনি জানান, ওই অনুষ্ঠানের সময় আশপাশে কয়েক স্তরে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কেন পুলিশ সেখানে বাধা দিয়েছে- এমন প্রশ্নে ওয়ারী জোনের পুলিশের উপ-কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যে স্কুলে ওনার উৎসবটা তারা করতে চেয়েছিলেন, সেই মাঠে এই উৎসবটা করার জন্যও ওনারা কোনো অনুমতি নেন নি। সেখানকার কর্তৃপক্ষও এই অনুষ্ঠানটা করতে দিতে চাচ্ছিলেন না। এখানে পুলিশের কোন ভূমিকা নাই”।

“একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে সাধারণত ডিএমপি বা অন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। অনুমতি চাইলে আমরা কনসার্ন অথরিটির মাধ্যমে কথা বলি। ওনারা তো অনুমতি নেয় নি আগে থেকে”, যোগ করেন তিনি।

ষড়যন্ত্র দেখছেন আয়োজকরা

ওই অনুষ্ঠানের আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেসবুকে একটি পোস্টার ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কয়েকজনকে দেখা যায়। তাদের মধ্যে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরীও ছিলেন।

একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানজার চৌধুরীকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়েও প্রচারণা করতে থাকে কেউ কেউ।

এমন পরিস্থিতির তৈরি হওয়ার পরই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃপক্ষও অনেকটা পিছু হটে।

চারুকলার ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখও অবশ্যই এটি স্বীকার করে বলেছেন যে, তাদের দিক থেকে এই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি নেই। এমনকি তারাই এটি অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সংকট তৈরি হতে পারে, এমন শঙ্কার কথা চিন্তা করেই তারা শেষ পর্যন্ত অনুমতি বাতিল করে দেয়।

অনুমতি বাতিল করার বিষয়টি নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা তৈরি হয়, তখন এটি নিয়ে একটু চাপে পড়ে চারুকলা কর্তৃপক্ষ।

যে কারণে শনিবার সকালে ওই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে বৈঠকও ডাকা হয়েছে শনিবার সকালে। মানজার চৌধুরী বলেছেন তারা ওই বৈঠকে যাবেন ঠিকই, কিন্তু তারা আগে চারুকলার প্রস্তাবনা শুনবেন।

মানজার চৌধুরী বলছিলেন, “আমাদেরকে কালচারাল ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যা দেওয়ার মূল কারণ অনুষ্ঠান করতে না দেওয়া না। মূল কারণ অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব ছিনতাই করা”।

এর ব্যাখ্যা তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই অনুষ্ঠান পালন হওয়ার পর এটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এটি গণমাধ্যমেও ভালভাবে প্রচারণা পায়। যে কারণে কিছু ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন এই উৎসবে বাধা সৃষ্টি করে তারা এর আয়োজক হতে চায়”।

যে কারণে এবারের শরৎ উৎসবে বাধার বিষয়টিকেও একই সূত্রে গাঁথা বলেও মনে করছেন মানজার চৌধুরী।

BBC News বাংলা