চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ জারি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া দ্রুত থামার সম্ভাবনা কম, কারণ উভয় দেশই বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি-রাজনীতিতে প্রাধান্য ধরে রাখতে চায়।
নতুন দফা নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ — বিস্তার ও উদ্দেশ্য
যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যার মধ্যে একটি স্বাধীন রিফাইনারি ও একটি টার্মিনালও অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এসব প্রতিষ্ঠান ইরানি তেল কেনা ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
চীনের প্রতিক্রিয়া
এদিনই বেইজিং ছয়টি আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়। নতুন বিধিনিষেধে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—
- বিরল মাটি (rare earth) উৎপাদন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম
- অতিরিক্ত কিছু বিরল মাটি উপাদান
- লিথিয়াম-ব্যাটারি উৎপাদন ও সুপারহার্ড উপকরণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
একই সময়ে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৪টি পশ্চিমা সংস্থাকে “অবিশ্বস্ত সত্তা তালিকা”-তে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে এক মার্কিন ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও একটি কানাডাভিত্তিক সংস্থা, যারা পূর্বে হুয়াওয়ের উন্নত চিপ প্রযুক্তি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
কারণে কারণে: ভৌগোলিক ও সামরিক প্রতিসংঘাত
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আসলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন ভৌগোলিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফল।
রিসার্চ ফার্ম এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিকসের সিইও রাজিভ বিসওয়াসের মতে, “এই পদক্ষেপগুলো কেবল বাণিজ্য সংঘাত নয়—এগুলো শক্তি-প্রদর্শনের কৌশল, যার লক্ষ্য ভবিষ্যৎ আলোচনা ও কূটনৈতিক টেবিলে নিজেদের অবস্থানকে প্রাধান্য দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আলোচনায় অব্যাহত থাকবে।”
সম্ভাব্য ফলাফল ও পরবর্তী ধাপ
- চীন যদি দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে, তবে লিথিয়াম-ব্যাটারি শিল্প ও বিরল মাটির সরবরাহ শৃঙ্খলায় পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য জটিলতা বাড়বে।
- যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে, বিশেষত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা খাতে।
- আলোচনায় বোঝাপড়া সৃষ্টির চেষ্টায় দুই দেশই আড়ম্বরে চলে যেতে পারে, এবং এ ধরনের অনুবর্তনমূলক প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
কৌশলগত সংঘাতের নতুন রূপ
চীনের এই “টিট-ফর-ট্যাট” প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রতিরোধ নয়, বরং প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক প্রভাবকে ঘিরে এক দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রতিযোগিতার অংশ। সামনের দিনগুলোতে এই টানাপোড়েন আরও তীব্র হতে পারে, যার প্রতিফলন দেখা দেবে কেবল অর্থনীতিতে নয়—বিশ্বের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্রেও।
#চীন #যুক্তরাষ্ট্র #নিষেধাজ্ঞা #রপ্তানি_নিয়ন্ত্রণ #বাণিজ্যযুদ্ধ #বিশ্লেষণ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট