বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, দেশে প্রতিটি ভোটের মূল্য নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনী অনিয়ম দূর করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা জরুরি। শনিবার এক সেমিনারে দলের সহকারী মহাসচিব হামিদুর রহমান আজাদ এ দাবি জানান।
নির্বাচনী সংস্কারের দাবি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী মহাসচিব এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, দেশের নির্বাচনী অনিয়ম দূর করতে এবং প্রতিটি ভোটের প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন সময়ের দাবি। এই ব্যবস্থায় সংসদের আসন বণ্টন প্রত্যেক দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হয়।
রাজধানীতে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুফল হলো, এতে প্রতিটি ভোট গণ্য হয় এবং ভোটার বুঝতে পারেন যে তিনিও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন।”
বর্তমান পদ্ধতির ত্রুটি ও ‘অপচয় হওয়া ভোট’
হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, প্রচলিত “ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট” পদ্ধতিতে পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষে দেওয়া বিপুল সংখ্যক ভোট কার্যত বাতিল হয়ে যায়, যা ‘অপচয় হওয়া ভোট’-এর উদাহরণ। এই পদ্ধতি নির্বাচনী ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে প্রতিফলিত হয় না।
সেমিনারের প্রেক্ষাপট
রাজধানীর মালিবাগে কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার শিরোনাম ছিল ‘নির্বাচন ২০২৬: প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতির বিশ্লেষণ’। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল ইউএনবি।
জামায়াতের বর্তমান অবস্থান
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে—তা একক কক্ষবিশিষ্ট হোক বা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট—প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতি চালুর দাবি জানাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় ভোটাররা প্রার্থীর পরিবর্তে দলের প্রতীককে ভোট দেন। বিপরীতে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটাররা আলাদা আলাদা প্রার্থীর মধ্যে থেকে বেছে নেন।
ব্যক্তি প্রভাব, অর্থবল ও সহিংসতার সমস্যা
হামিদুর রহমান বলেন, “এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রথা প্রার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বাড়ায়। এর ফলে অনেক প্রার্থী অর্থবল, প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও সহিংসতার আশ্রয় নেন। ভোটকেন্দ্র দখল ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা ভোটারদের শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়।”
প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশনের সুফল
তিনি আরও বলেন, “এই অনিয়ম থেকে মুক্তি পেতে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন একটি কার্যকর বিকল্প। এই ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা দলীয় পর্যায়ে সীমিত থাকে, কারণ মনোনয়ন ও অর্থায়ন দলই নিয়ন্ত্রণ করে।”
তার মতে, দলীয় কাউন্সিল নির্বাচনের মাধ্যমে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা যায়, ফলে অনেক অনিয়ম এড়ানো সম্ভব হয়।
হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “এই ব্যবস্থার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো—প্রতিটি ভোটকে মূল্যবান করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো—সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও যোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত যাচাই করাও প্রয়োজন, যাতে একটি ন্যায্য ও প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনী কাঠামো গড়ে তোলা যায়।
#নির্বাচন২০২৬ #জামায়াতে_ইসলামী #প্রোপোরশনাল_রিপ্রেজেন্টেশন #নির্বাচনী_সংস্কার #বাংলাদেশ_রাজনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট