সরকারি অচলাবস্থার মধ্যেই ছাঁটাই অভিযান শুরু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সরকার বন্ধের (শাটডাউন) দশম দিনে শুক্রবার ৪,১০০ সরকারি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। প্রেসিডেন্টের দীর্ঘদিনের হুমকি বাস্তবায়ন করে তিনি এই সুযোগে নিজের অপছন্দের বিভাগগুলোর কর্মী সংখ্যা কমাতে উদ্যোগ নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের বাজেট পরিচালক রাসেল ভট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “RIFS (Reductions in Force) শুরু হয়েছে।”
সরকার ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারককে জানায়, বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা, গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সাতটি সংস্থা থেকে ৪,১০০ জনকে ছাঁটাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (EPA) আরও জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০ কর্মী ভবিষ্যতে ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়তে পারেন।
রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ
ট্রাম্প শুক্রবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, এই ছাঁটাই হবে “ডেমোক্রেটপন্থী কর্মীদের ওপর”, কারণ “ওরাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।” অনেকের মতে, ছাঁটাই হওয়া বিভাগগুলো মূলত সামাজিক ও মানবিক নীতিনির্ভর কাজ করে—যেমন পরিবারনীতি ও সম্প্রদায় উন্নয়ন ইউনিট (HHS), সমান আবাসন অধিকার বিষয়ক অফিস (HUD) এবং শিক্ষা বিভাগের স্কুল উন্নয়ন শাখা।
ছাঁটাই কার্যকর হবে ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে
ফেডারেল নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীরা কমপক্ষে ৩০ দিন এবং অনেক ক্ষেত্রে ৬০ দিন সময় পাবেন পদচ্যুতির আগে। বাজেট পরিচালক ভটের নেতৃত্বে তৈরি “প্রজেক্ট ২০২৫” পরিকল্পনার আওতায় এই ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রশাসনিক কাঠামো ছোট করা। যদিও শুরুতে বলা হয়েছিল, সংখ্যাটি লাখ ছাড়াতে পারে, শেষ পর্যন্ত তা ১৬,০০০-এর নিচে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইনি জটিলতা ও আদালতের নির্দেশ
আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, শাটডাউনের সময় এই ছাঁটাই আইনি সীমা অতিক্রম করতে পারে। কারণ সরকারি ব্যয়ের অনুমোদন না থাকলে নতুন অর্থ ব্যয় বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না—যা “Antideficiency Act”-এর লঙ্ঘন হবে। কয়েকটি ফেডারেল ইউনিয়ন ইতিমধ্যে মামলা করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, সরকার অর্থবিহীন অবস্থায় কর্মী ছাঁটাই করতে পারে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আদালত প্রশাসনকে শুক্রবারের মধ্যে চলমান বা পরিকল্পিত ছাঁটাইয়ের পূর্ণ বিবরণ দিতে নির্দেশ দেয়। ভটের সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণার পর ইউনিয়নগুলো আদালতে তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশের আবেদন করে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিরোধ
অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির ডেমোক্রেট নেতা সিনেটর প্যাটি মারে এই পদক্ষেপকে “আমেরিকান জনগণের ওপর অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “কেউ ট্রাম্প ও ভটকে এসব করতে বাধ্য করছে না—তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই করছে।”
আইনজীবীরা মন্তব্য করেছেন, এই ছাঁটাই “আইনবিরুদ্ধ” হতে পারে, কারণ অস্থায়ী তহবিল ঘাটতি ছাঁটাইয়ের বৈধ কারণ নয়। একজন ফেডারেল আইনজীবী উদাহরণ টেনে বলেন, “এটা যেন আপেলকে কমলা বলা—দুটোই ফল, কিন্তু এক নয়।”
প্রশাসনের যুক্তি: “অপ্রয়োজনীয় কর্মী ছাঁটাই”
স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন বলেন, “এই কর্মীদের নিজ নিজ বিভাগ ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আমরা অপচয়ী ও পুনরাবৃত্ত সংস্থা বন্ধ করছি—যা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘মেক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
ফেডারেল কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা
২০২৫ সালটি ফেডারেল কর্মীদের জন্য কঠিন একটি বছর। আগেই বিপুলসংখ্যক কর্মী অবসর, ছাঁটাই বা ‘বাইআউট’ প্রোগ্রামে চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে শুধু এক পরিকল্পনার মাধ্যমেই প্রায় ১.৫ লাখ কর্মী সরকারি চাকরি থেকে বিদায় নিয়েছেন।
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার এক কর্মী বলেন, “এই অবিরাম আক্রমণ আমাদের মানুষ হিসেবে নয়, দাবার গুটির মতো ব্যবহার করছে।” শিক্ষা বিভাগের কর্মীরাও জানেন না, শাটডাউন শেষ হলে তাদের চাকরি ফিরবে কি না।
ছাঁটাই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে যাওয়া কিছু সংস্থা
যদিও শুরুতে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ছিল, পরবর্তীতে কিছু সংস্থা তা বাতিল করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগ স্বেচ্ছা অবসরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ১৫ শতাংশ ছাঁটাই স্থগিত করেছে। কর বিভাগ (IRS) ও জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GSA) সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পুরনো কর্মীকে পুনরায় নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরও গ্রীষ্মে ১০০ নতুন পদে নিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে, কারণ পূর্ববর্তী ছাঁটাইয়ে তাদের পূর্বাভাস সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সরকারি অচলাবস্থা ও ছাঁটাইয়ের এই সংকট যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোকে এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। আদালত ও ইউনিয়নের আইনি লড়াই এখনই শুরু হয়েছে, আর দেশজুড়ে সরকারি কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
#ট্রাম্প_প্রশাসন #ছাঁটাই #যুক্তরাষ্ট্র #সরকারি_কর্মী #শাটডাউন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট