অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহতা কমলেও ঝুঁকি পুরোপুরি কাটেনি
২০২৫ সালের অগ্নিকাণ্ড মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে আগুনে পুড়ে যাওয়া জমির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেক কম হয়েছে। তবে বছরের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং আবহাওয়ার সৌভাগ্যই এবার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহান্তে পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টি ও ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও হ্রাস পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অরেগনে পুড়েছে আগের তুলনায় এক-ষষ্ঠাংশ জমি
গত বছরের তুলনায় এবার অরেগনে প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ জমি পুড়েছে। ২০২৪ সালে অরেগনে প্রায় ১৯ লাখ একর বনভূমি আগুনে পুড়েছিল, আর এই বছর তা নেমে এসেছে ৩ লাখ ৪০ হাজার একরে। একই প্রবণতা দেখা গেছে পশ্চিমাঞ্চলের আরও কয়েকটি রাজ্যে। সার্বিকভাবে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর আগুনের সংখ্যা বেশি হলেও ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আগুনে কম জমি পুড়লেও এই মৌসুমের চাপ ও ঝুঁকি হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। অনেক অগ্নিকাণ্ড আকারে ছোট হলেও দ্রুত ছড়িয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিসের জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: “কম ক্ষতি মানে নিরাপদ নয়”
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার রিসোর্সেসের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সুইন বলেন, “গত এক দশকে আমরা এত ঘন ঘন ও মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে এখন কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়াও আমাদের কাছে সাধারণ ঘটনা মনে হচ্ছে। অথচ ২০১৫ সালের আগে এমন ঘটনা প্রায় শোনা যেত না।”
অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমান্ডা স্টাসিয়েভিজ বলেন, “যখন কোনো বছর তুলনামূলকভাবে কম আগুন হয়, তখন নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই ভাবেন সমস্যা কমে গেছে। এতে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ও অভিযোজন পরিকল্পনার গুরুত্ব হারায়।”
দ্রুত প্রতিক্রিয়াই সাফল্যের মূল কারণ
বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে খরা ও তীব্র গরমের আশঙ্কা ছিল। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, এই দুই উপাদান একে অপরকে বাড়িয়ে দেবে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী আংশিক সত্যি হলেও, গ্রীষ্মের শেষে হঠাৎ বৃষ্টি ও ঠান্ডা হাওয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় ভূমিকা রাখে।
অরেগনে এ বছর প্রায় এক হাজার বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম। অরেগন বনবিভাগের মুখপাত্র জেসিকা নিউইয়ার বলেন, “গত বছরের কঠিন অভিজ্ঞতা আমাদের দমকলকর্মীদের আরও প্রস্তুত করেছে। তারা দ্রুত আগুন শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।”
ওয়াশিংটন ও কানাডায় এখনও বিপজ্জনক পরিস্থিতি
ওয়াশিংটন রাজ্যে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গত বছরের কাছাকাছি রয়েছে। আর কানাডায় ২০২৫ সাল দ্বিতীয় বৃহত্তম অগ্নিকাণ্ডের বছর হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। ওয়াশিংটন প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের উপব্যবস্থাপক টিম স্যাম্পসন বলেন, “এই বছর ধীর গতির মৌসুম বলা যাবে না। শহরের বাইরে বড় আগুন হলে তা প্রায়ই জনদৃষ্টির বাইরে থেকে যায়।”
তিনি জানান, সবচেয়ে বিপজ্জনক আগুনগুলো সাধারণত বসতবাড়ির কাছাকাছি ঘটে। যেমন সিয়াটলের নিকটবর্তী বেয়ার গালচ আগুনটি আয়তনে ছোট হলেও জনবসতির নিকটবর্তী হওয়ায় তা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
“এই আগুনগুলো এখন জীবনের অংশ”
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “সহনীয় বছর” এখন আর সত্যিকার অর্থে স্বস্তির নয়। এক দশক আগে যে ধরনের অগ্নিকাণ্ড স্বাভাবিক ধরা হতো, এখন সেটিই তুলনামূলক শান্ত বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইন্টারএজেন্সি কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে বছরে ৭ মিলিয়ন একর জমি আগুনে পুড়ে যায়, যেখানে ২০০০ সালের দিকে তা ছিল মাত্র ৪ মিলিয়ন একর।
ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সুইন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ও তীব্র অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি স্পষ্টভাবে বেড়েছে, তবে প্রতি বছরই চরম ক্ষয়ক্ষতি হবে এমন নয়।”
সচেতনতা ও সতর্কতাই একমাত্র প্রতিরক্ষা
ওয়াশিংটনের কর্মকর্তা টিম স্যাম্পসন বলেন, “যখন কোনো বছর তুলনামূলক শান্ত মনে হয়, তখন মানুষ আগুনের ঝুঁকি ভুলে যায়। তাই জনগণকে সচেতন রাখাই জরুরি।”
অরেগনের জেসিকা নিউইয়ার সতর্ক করে বলেন, “বৃষ্টি ও ঠান্ডা আসলেও মানবসৃষ্ট আগুনের ঝুঁকি থেকেই যায়। মানুষ প্রায়ই ভাবে পরিস্থিতি নিরাপদ, অথচ মাটির নিচে জ্বালানি উপাদান শুকনোই থাকে।”
তার মতে, পূর্ব দিকের হাওয়া এখনো শুকনো বাতাস ও স্ফুলিঙ্গকে উসকে দিতে পারে। “আমরা এখনো শেষ করিনি, লড়াই চলছে,” বলেন নিউইয়ার।
বর্তমানে অরেগনের প্রায় অর্ধেক এলাকা মাঝারি অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।