রণাঙ্গণে আহত মিত্রবাহিনীর সৈনিকদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার এই সামরিক হাসপাতালে আনা হতো।
নেতাজি আরো বলেন যে, চালের প্রথম সাপ্লাই নিরাপদে সম্পন্ন হলে পরবর্তী ডেলিভারিগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ, “ব্রিটিশরা প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে শয়ে শয়ে ক্ষুধার্ত নারী, পুরুষ ও শিশু অনাহারের কবল থেকে রক্ষা পাবে।” ব্রিটিশ ক্ষমতার প্রতি নেতাজির চাল প্রেরণের প্রস্তাবটি খাদ্যাভাবে নিদারুণ হতাশাগ্রস্থরা শুনেছিলেন।
দিনকয়েক বাদে, ব্রিটিশ ইনটেলিজেন্সের একটি রিপোর্টে বলা হয় যে “বোস সম্বন্ধে সর্বশেষ জনশ্রুতি হলো যে তিনি (নেতাজি) দুর্গতদের জন্য চাল পাঠানো সম্ভব করার জন্য ভাইসরয়কে লিখিতভাবে দুটো জাহাজ পাঠাবার অনুরোধ করেছেন।” ফলে, নয়াদিল্লীর ক্ষমতার অন্দরমহলে স্নায়বিক অস্থিরতা ও তেলেসমাতি শুরু হয়, নেতাজির প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সব ধরনের খবরাখবর প্রকাশের উপরে শক্ততম সেন্সরশিপ আরোপিত হয়।
নেতাজি সুভাষ। দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত বঙ্গবাসিদের জন্য বামী থেকে একশ’ হাজার টন চাল পাঠাতে চেয়েছিলেন।
১৯৪৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিচার্ড টটেনহ্যাম (Richard Tottenham) লেখেন যে “আমরা অবশ্য সম্ভাব্য সব উপায়ে সুভাষ বসুর সুনামহানি ও তাঁকে কলঙ্কদায়ী করতে সদাই চিন্তিত ও ব্যস্তসমস্ত ছিলাম।”
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ঢাকা শহর ছিল অভ্যন্তরীন দূর্গ। অ্যাংলো-আমেরিকান মিত্রবাহিনীর সৈনিকরা, বিশেষ করে মার্কিন সৈনিকদের সেনা-ছাউনি ছিল ঢাকার ক্যান্টমেন্ট এলাকায়। মার্কিনদের একটি সামরিক হাসপাতালও ছিল। হাসপাতালটি ছিল- বর্তমানে যে ভবনটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নামে পরিচিত সেই ভবনে এবং (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস) সলিমুল্লাহ হল ছিল সামরিক হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবন। রণাঙ্গণে আহত মিত্রবাহিনীর সৈনিকদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার এই সামরিক হাসপাতালে আনা হতো।
ঢাকায়, ক্লাইভ ব্র্যানসন নামক এক ব্রিটিশ সৈনিকের সঙ্গে প্রফেসর করিমের পরিচয় হয়। ক্লাইভ ছিল একাধারে কমিউনিসী, কবি এবং শিল্পী। ওঁর আঁকা কয়েকটি ছবি লন্ডনের “টেইট গ্যালারিতে রয়েছে। এই ক্লাইভ ১৯৪৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বামী ফ্রন্টে নিহত হন।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৩)