নেতাজি বলেন যে ব্রিটিশরা যদি তাঁর প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়, ভারতের নিকটবর্তী কোনো বন্দর থেকে চাল ভর্তি প্রথম জাহাজ পাঠানো হবে
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। ১৯৪৪ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ট্রেজারি মন্ত্রী হেনরি মর্গেনথাউ জুনিয়র “সাজেস্টেড পোস্ট-সারেন্ডার প্রোগ্রাম ফর জার্মানি” নামক একটি মেমোরেন্ডাম পেশ করেন। চার্চিল তো প্রথমে সায় দেবেনই না। শেষতক, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী- ‘কুইড প্রো কুউ’ ফর্মুলা অনুযায়ী সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট প্রস্তাবে (যুদ্ধকালীন লেন্ডলীজ প্রজেক্ট) সায় দেন।
অতঃপর, ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় কুইবেক সামিটে চার্চিল নিজস্ব “মর্গেনথাউ প্ল্যান” (Morgenthau plan) পেশ করেন, বলেন যে “…আশা করছি যে জার্মানি মূলত কৃষিজ ও গবাদিপশুর চারণ দেশের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দেশে পরিবর্তিত হবে।” চার্চিলের “মর্গেনথাউ প্ল্যান” শেষতক অবশ্য বাস্তবায়িত হয়নি: যদি হতো তো প্রথম বছরেই দশ থেকে পঁচিশ মিলিয়ন জার্মান তেতাল্লিশের মন্বন্তরের মতো না খেতে পেয়ে মারা যেত।
যাহোক অন্তত, যুদ্ধোত্তরকালীন একটি পরিকল্পিত মন্বন্তর ঠেকানো গেছে; কিন্তু স্যর উইনস্টন চার্চিল যে সাহিত্যকর্মের জন্য নোবেল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫৩) পান, সেখানে কোথাও তিনি মহামন্বন্তরে মরে যাওয়া সাড়েতিন-চার মিলিয়ন জম্ভবৎ মানুষ সম্বন্ধে কোনো ইঙ্গিত পর্যন্ত দেননি।
অপেক্ষাকৃত কম জানা সত্য হলো যে মহাদুর্ভিক্ষের সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ২০ আগস্ট ১৯৪৩ সালে রেঙ্গুন রেডিওর মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসনের কাছে দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত বঙ্গবাসিদের জন্য বার্মা থেকে একশ’ হাজার টন চাল পাঠানোর প্রস্তাব করেন।
জাহাজভর্তি চাল প্রেরণ কিভাবে বাস্তবায়িত হবে- প্রসঙ্গে নেতাজি বলেন যে ব্রিটিশরা যদি তাঁর প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়, ভারতের নিকটবর্তী কোনো বন্দর থেকে চাল ভর্তি প্রথম জাহাজ পাঠানো হবে এবং কে সেই চালের ডেলিভারি দেবে, সেগুলো জানানো হবে। নেতাজি আশ্বাস দিয়ে বলেন যে চালভর্তি জাহাজের নিরাপদ সাপ্লাই সম্ভব করার জন্য তিনি জাপানিদের গ্যারান্টি আদায় করে নেবেন।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩২)