খেমনিৎসসহ বেশ কয়েকটি জার্মান শহরের ফাঁকা আকাশ থেকে অসামরিক জার্মান জনসমষ্টির উপর আগুনে বোমার বোমাবৃষ্টি বর্ষণের সবল প্ররোচণা দেন
নিঃসন্দেহে মাত্র একটি বছরে বিশাল ভারতবর্ষের একটিমাত্র এলাকায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ব্রিটিশ রাজের উপরেই বর্তায়। সেই সময়কার ব্রিটিশ ভারতের ইংরেজ ভাইসরয় লর্ড আর্চিবল্ড ওয়াভেল মন্তব্য করেছিলেন যে “ভারতবর্ষের জীবনসম্পৃক্ত সমস্যাবলিকে হিজ ম্যাজেস্টির সরকার অবহেলার সঙ্গে বিবেচনা করেছে।”
রিলিফ ক্যাম্পের সামনে ক্ষুধার্ত মানুষের লাইন: তেতাল্লিশের মন্বন্তর।
কথাটি লর্ড ওয়াভেল বানিয়ে বলেননি; দিল্লীর ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতের জন্য খাদ্যবস্তু রিলীজ করার আবেদন করে বটে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল টেলিগ্রামের মারফতে উত্তর দেন যে মহাদুর্ভিক্ষই যদি হয় তো গান্ধী এখনো বেঁচে আছেন কি করে!
১৯৪৩-য়ের মহামন্বন্তর। সৌজন্যে চেক উইকিপিডিয়া; উইকিমিডিয়া কমনস, ফটোগ্রাফার: অজ্ঞাতনামা; পাবলিক ডমেইন।
ভারতীয়দের প্রতি চার্চিলের বৈরিভাব অনেককাল ধরেই জ্ঞাত ছিল। ওয়ার কেবিনেটের মিটিং-য়ে তিনি মহামন্বন্তরের জন্য ভারতীয়দের দোষারোপ করেন, বলেন যে এরা খরগোশের মতো সন্তান উৎপাদন করে এবং জম্ভবৎ ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এরা জম্ভবৎ মানুষ। আরেকবার আরেক উপলক্ষ্যে দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “জার্মানদের পরেই পৃথিবীর জম্ভবত্তম হলো এই মানুষগুলো।”
‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন উইস্টন চার্চিল, ৫ জুন ১৯৪৩ সাল।
অস্ট্রেলিয়ার বায়োকেমিস্ট ডঃ গিডিয়োন পলিয়া (Dr Gideon Polya) তেতাল্লিশের মন্বন্তরকে “ম্যানমেইড হলোকস্ট” বলেছেন, কারণ এই বিপর্যয়ের জন্য চার্চিলের পলিসিসমূহ সরাসরি দায়ী। তিনি জেনেশুনেই এবং প্রবল উৎসাহের সঙ্গেই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটেনে পাঠানোর নীতি গ্রহণ করেন যার দরুণ মহামন্বন্তর ঘটে। চার্চিলের দুরাগ্রহ বা প্রেজুডিসের পরিধি অসাধারণভাবেই ছিল ব্যাপক বিস্তৃত; যেমন।
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ড্রেসডেন, লাইপসিগ, খেমনিৎসসহ বেশ কয়েকটি জার্মান শহরের ফাঁকা আকাশ থেকে অসামরিক জার্মান জনসমষ্টির উপর আগুনে বোমার বোমাবৃষ্টি বর্ষণের সবল প্ররোচণা দেন তিনি। ফলস্বরূপ, কম করে দুই লাখ অসামরিক নারী, শিশু, বৃদ্ধ মারা যায়। তবে অবশ্য ব্রিটিশরা যে যুদ্ধরত ছিল সেটা তারা সাফল্যের সঙ্গে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩১)